ইয়ালিনা তাসিফা
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৫১ এএম
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৫২ এএম
অলংকরণ : মিথিলা ভৌমিক, নবম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
ক্রিকেট খেলার প্রতি তেমন একটা বিশেষ আগ্রহ ছিল না আমার। সবার ছোট হওয়ায় আমাকে সব সময় চোখে চোখে রাখত। তা ছাড়া বড়রা সঙ্গে খেলতেও নিত না। মায়ের বাধ্য ছেলের মতো দুপুরবেলাটা ঘরেই কাটিয়ে দিতে হতো। একটু বড় হওয়ার পরও তেমন আগ্রহ ছিল না খেলার প্রতি। তবে ফুটবল কিছুটা খেলতাম। তাও স্কুলে গিয়ে। টিফিনের ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে নেমে পড়তাম। পায়ে বল লাগত হঠাৎ হঠাৎ। মাঠের এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমার বন্ধু মাসুমের কারণে আমাকে খেলায় নিত। মাসুম ছিল ক্যাপ্টেন। খেলার সময় আমি ভয়ে ভয়ে থাকতাম জোরে এসে ফুটবলটা গায়ে লাগে কি না! জড়াজড়ি করতে আবার পায়ে চোট পাই যদি! স্কুলের দিনগুলো অনেক আনন্দেই কাটছে।
এর মধ্যে আমরা চলে এলাম ঢাকায়। পুরোনো বন্ধুদের খুব মিস করতে লাগলাম। নতুন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাটাও জমে উঠতে কিছুদিন লাগল। ঢাকা শহরে খেলাধুলা করার জায়গাই তো নেই। নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলাম। এরা ক্রিকেটের ব্যাপক পাগল ফ্যান। খেলা শুরু হতেই ওদের মধ্যে লেগে যেত বিশাল হুলুস্থুল। ওরা নাওয়াখাওয়া বন্ধ করে দেয়। দল হারলে মন খারাপ করে থাকে। জিতলে আনন্দে ফেটে পড়ে। এদের দলের মধ্যে আমিই একমাত্র যে কি না খেলার তেমন কিছু বুঝি না। তবে ওদের কাউকে বিষয়টা বুঝতে দিই না। যদি জেনে যায় আমি ক্রিকেট বুঝি না, তাহলে লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পাব না। শুরু হয়ে গেল ক্রিকেটে বিশ্বকাপ খেলা। বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলছে। দেশের সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা। বিরাট বড় জায়গায় সবাই একজোট হয়ে খেলা দেখছে। এর মধ্যে আমাদের দেশের এক ব্যাটার ৬ মারল। অন্যরা চিৎকার দেওয়ার আগেই আমি জোরে চেঁচিয়ে উঠলাম গোল গোল! উৎসুক জনতা সবাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। তখন কারও আর বুঝতে বাকি রইল না যে আমি খেলার কিছুই বুঝি না। সেদিন যা লজ্জা পেয়েছিলাম। এরপর বন্ধুরা হাসাহাসি করত। সেদিন বাংলাদেশ জয়লাভ করল। তাই সেই লজ্জাটি কিছুই মনে হলো না। তবে এখন আমি ক্রিকেট খেলা বেশ বুঝি। ভালোবাসি। মাঝেমধ্যে সেদিনের কথাটা মনে করে হাসি।
নবম শ্রেণি, দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়