প্রচ্ছদ
সুবর্ণা মেহ্জাবীন স্বর্ণা
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:১৩ পিএম
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৩০ পিএম
মডেল : আয়েশা; মেকআপ : রাজিয়া’স মেকওভার; ছবি : ফারহার ফয়সাল
প্রকৃতিতে এখন হেমন্ত। হিমেল ও শুষ্ক হাওয়া বইতে শুরু করেছে। শীত সবার আগে টের পায় আমাদের ত্বক। হেমন্তে ত্বকের রুক্ষতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে যোগ হয় ত্বক ফাটার সমস্যা ও নানা চর্মরোগ। সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মুখ ও হাত-পায়ের ত্বকে। তাই পুরোদমে শীত শুরুর আগেই নিতে হবে ত্বকের বিশেষ যত্ন
হেমন্তের শুরু থেকেই ত্বকে জানান দিচ্ছে আসছে শীত। এ মৌসুমে শুষ্ক ও নির্জীব ত্বকের সমস্যায় ভোগেন কমবেশি সবাই। খসখসে হয়ে ওঠে ত্বক। ঠোঁট, হাত ও পায়ের গোড়ালিও ফেটে যায় অনেকের। তাই এ সময় ত্বকের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। এই সময়ে ত্বকের যত্নে কী করবেন আর কী করবেন না দেখে নিন…
শীতের শুরুতেই ত্বকে ব্যবহার করতে হবে ময়েশ্চারাইজার। এ ক্ষেত্রে বেছে নিতে হবে এমন ক্রিম যাতে তেলের পরিমাণ বেশি। সেই সঙ্গে রাতে যে ক্রিম ব্যবহার করা হয়, তা-ও যেন ওই রকম হয়। কারণ এসব ক্রিম ত্বক আর্দ্র রাখতে বেশি সহায়ক।
অনেকেই মনে করেন শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু শীত হোক কিংবা গ্রীষ্ম মৌসুম, সরাসরি রোদ সব সময় ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই শীতের মৌসুমেও বাইরে বের হওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে মুখ, হাত ও পায়ে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিতে হবে।
তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা, এ মৌসুমে তাদের ত্বকেও শুষ্কতা দেখা দেয়। তাদের একটু বেশি সচেতন হতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রন এবং সানবার্ন একটু বেশি হয়। তাই নিম, গ্রিন টি, অ্যালোভেরাযুক্ত ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। মাসে একটা হাইড্রা ফেসিয়াল করতে পারেন।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে শসা খুব কার্যকর। শসার রসে মুলতানি মাটি এবং চন্দনের গুঁড়া দিন। চামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। পেস্টটি মুখ, হাত ও পায়ের ত্বকে লাগান। শুকিয়ে যাওয়ার ১০ মিনিট পর সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের তৈলাক্ততা কেটে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
যাদের ত্বক এমনিতেই শুষ্ক তাদের এই সময়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। তাদের প্রয়োজন দিনে ও রাতে ত্বকের প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া। বেশি মাত্রায় তেল আছে এমন ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের সজীবতা বজায় থাকবে।
মুখের ত্বকের প্রতি যত্নশীল হলেও গলা ও ঘাড়ের প্রতি অনেকেই খেয়াল করে না। এজন্য এ মৌসুমে গলা ও ঘাড় শুষ্ক হয়ে ত্বক ঝুলে পড়ার সমস্যা হতে পারে। এজন্য মুখে যে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করা হয় একই ক্রিম লাগিয়ে নিন আপনার গলায়ও। এতে ত্বক সুন্দর থাকবে সঙ্গে মুখ ও গলার ত্বকের রঙে সামঞ্জস্যতা বজায় থাকবে।
মুখের ত্বকের যত্ন নিয়ে আমরা যতটা সচেতন, অনেক সময় হাতের যত্নের বিষয়ে ততটা দেখা যায় না। যদিও হাতের ত্বক শীতকালে অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বারবার হাত ধুতে হয় যাদের, তারা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। এ সময় হাতে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। তাদের দিনে কয়েকবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া সারা দিন এসিতে থাকলেও এ সমস্যা এ মৌসুমে প্রকট হয়। তাই ভালো মানের ময়েশ্চারাইজিং হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করুন।
পায়ের ত্বক শুষ্ক হলে দেখতে যেমন খারাপ লাগে তেমন অস্বস্তি অনুভব হয়। এ মৌসুমে পায়ের ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও মসৃণ রাখতে পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা গ্লিসারিন দিয়ে পায়ের ত্বকে ম্যাসাজ করতে পারেন। সপ্তাহে একবার এক্সফোলিয়েট করে পায়ের ত্বকের মৃত কোষ তুলে নিন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সামান্য যত্ন শীত মৌসুমে আপনার পায়ে ত্বক সুন্দর রাখবে।
শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে মাঝে মাঝে মুখে পানির ঝাপটা দিন। সহজে ত্বক শুষ্ক হবে না। এ ছাড়া নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার ত্বকে সজীবতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
গোসলের পর এবং প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ভেজা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। এ ছাড়া শরীরে গ্লিসারিন, অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। এতে ত্বক আর্দ্র থাকবে।
এই সময়ে ঠোঁটেও শুষ্কতা দেখা দেয়। তাই ভ্যাসলিন বা লিপ অয়েল ব্যবহার করুন। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন। এতে ঠোঁট ফাটবে না। এ ছাড়া সপ্তাহে একদিন ঠোঁট স্ক্রাবিং করুন।
মেকআপ করার সময় এ মৌসুমে লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করে ক্রিম ফাউন্ডেশন বা তেলজাতীয় ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। এ ছাড়া আগে ময়েশ্চারাইজার এবং সানস্কিন ব্যবহার মাস্ট।
শীত মৌসুমে অনেকে তুলনামূলক কম পানি পান করেন। এটা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। ত্বকের জন্য তো বটেই, শুষ্ক মৌসুমে সুস্থ থাকার জন্য বেশি বেশি পানি পান করা দরকার। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে তা একদিকে ত্বকে নানা রোগব্যাধির জন্ম দেয়, ত্বক খসখসে ও রুক্ষ হয়ে যায়; অন্যদিকে পানির অভাব নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রকৃতিতে শীত এলে অনেকেই হট বাথ নিতে পছন্দ করেন। এ সময় অনেকেই অতিরিক্ত গরম পানি গায়ে ঢালেন। এতে ত্বক আরও শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে অজান্তেই ত্বক পুড়ে যেতে পারে। কারণ তাদের অনুভূতিশক্তি তুলনামূলক কম থাকে। তাই শীত মৌসুমে নিয়ম মেনে গোসল করুন। এ সময় গোসলে অতিরিক্ত গরম পানির ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। গোসলে কুসুমগরম পানি ব্যবহার করুন।
অনেক সময় সব ধরনের পরিচর্যা বাসায় করা যায় না। তাই মাসে অন্তত একবার পারলারে গিয়ে এ সময়টায় ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পরিচর্চা করুন। হারবাল, চন্দন, ফ্রুটস, অ্যালোভেরা ভিটামিন ই এবং হাইড্রা ফেসিয়াল এ মৌসুমে ত্বকের জন্য খুবই কার্যকর। তাছাড়া প্রফেশনালের কাছে গিয়ে ত্বকের সমস্যা জানিয়ে সঠিকভাবে পরিচর্চা করতে পারেন। এ সময়ে ত্বকে শুষ্ক হয়ে ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায় ফলে ত্বকের চামড়া ঝুলে পড়া বা বলিরেখার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। পার্লারে ত্বকে যে ম্যাসাজ দেয় তা এই সময়ে ত্বকের জন্য খুব কার্যকরী প্রভাব ফেলে। অনেকেরই পা ফাটার সমস্যা দেখা দেয়, হাতও খসখসে হয়ে যায়। তাদের জন্য মাসে অন্তত একবার প্যারাফিন পেডিকিউর ম্যানিকিওর করা উচিত।