পল্লী মজুমদার
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৩৪ পিএম
মডেল : সিয়াম ও নিহানী; চশমা : প্রাইম ভিশন; মেকআপ : রেড বিউটি সেলুন; ছবি : ফারহান ফয়সাল
একটা সময় ছিল যখন ডাক্তার চশমা পরতে বললে মন খারাপ হতো এই ভেবে, মুখের সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যাবে। দিন পাল্টেছে, চশমার কাজ এখন আর শুধু দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি কিংবা চোখ ধুলোময়লা থেকে সুরক্ষায় সীমাবদ্ধ নেই; ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির জন্য মাস্ট হ্যাভ চশমাটি এখন হয়ে উঠেছে অন্যতম ফ্যাশন অনুষঙ্গ। মুখের গড়ন ও পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চশমার ব্যবহার এনে দিতে পারে আকর্ষণীয় লুক
নিত্যদিনের চশমাটি ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে বেশ সহায়ক। সেই সঙ্গে এও জানান দেবে আপনি কতটা ট্রেন্ডি। আজকাল সেলিব্রিটিরাও মেকওভার বদলের জন্য রিডিং গ্লাসের ব্যাপক ব্যবহার করছেন। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশনদুরস্ত চশমার দেখা মেলে। রিমলেস, কালার ফ্রেম, একটু মোটা ধরনের ফ্রেমসহ আরও বিভিন্ন স্টাইলের চশমা রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক চলতি সময়ের চশমা ট্রেন্ডের আদ্যোপান্ত-
রেট্রো ও ভিনটেজ লুক
অতীতের ফ্যাশন চলগুলো এখন আবার ফিরে এসেছে। সেই অতীতের ফ্যাশন চল থেকে বাদ যায়নি চশমাও। পুরোনো ধাঁচের ভিনটেজ ও রেট্রো স্টাইলের চশমাগুলো এখন হালফ্যাশনে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। স্টেটমেন্ট ফ্যাশন হিসেবে গোলাকার কিংবা ষড়ভুজাকার ওভার সাইজ চশমাগুলো ইন্টারন্যাশনাল সেলিব্রিটিদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। তাই তরুণরাও আজকাল ভিনটেজ রিডিং গ্লাসের দিকে ঝুঁকছে।
ফ্রেমের ধরন
হালফ্যাশনে মেটাল ও তারযুক্ত, স্বচ্ছ, ক্যাটস-আই, ষড়ভুজ, আয়তাকার ও গোলাকৃতির ফ্রেমগুলো বেশ ট্রেন্ডি। তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় টম হল্যান্ড, ক্যানডেল জেনার থেকে শুরু করে জেনিফার অ্যানিস্টোন মিনিমালিস্ট লুক ও প্রাত্যহিক ব্যবহারের জন্য বেছে নিচ্ছেন চিকন মেটাল ও তারের তৈরি ফ্রেম।
স্বচ্ছ ফ্রেমের চশমাগুলো মুখ ঢেকে দেয় না। ফলে মেয়েরা মেকআপ ব্যবহার করলে তা আড়াল হয় না। পুরুষের চোখের আশপাশ ও দাড়ি বেশ নজরে পড়ে। তাই আজকাল সাদা ও নানা হালকা রঙের ফ্রেমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক্যাটস-আই রিডিং গ্লাস সব সময়ই ফ্যাশনেবল। ফ্যাশনসচেতনরা একে ক্লাসিক স্টাইল হিসেবে বিবেচনা করেন। অড্রে হেপবার্ন থেকে হালের বেলা হাদিদ সবাইকেই ক্যাটস-আই ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের চশমা ক্যাজুয়াল থেকে ফরমাল সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। সেই সঙ্গে চেহারায়ও ভিন্ন লুক নিয়ে আসে।
ষড়ভুজ আকৃতির চশমা বেশ ইউনিক লুক তৈরি করে। যারা একই সঙ্গে ট্রেন্ডি ও পাওয়ারফুল লুক তৈরি করতে চান তারা বেছে নিতে পারেন এ ধরনের চশমা। এ আকৃতির চশমা সব ধরনের মুখের গঠনের সঙ্গে মানিয়ে যায়।
ছিমছাম পরিচ্ছন্ন লুক তৈরি করায় আয়তাকার চশমাগুলো নিয়মিত অফিসগামী তরুণদের কাছে বেশ সমাদৃত। এ ধরনের চশমা একদিকে মডার্ন অন্যদিকে ফরমাল লুক এনে দেয়। যারা চশমাকে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে বেছে নিতে চান না তারা এ ধরনের চশমা বেছে নিতে পারেন।
গোলাকৃতির চশমা সব সময় জনপ্রিয়। প্রায় সব ধরনের চেহারার সঙ্গে মানিয়ে যায় এ চশমাগুলো। গোলাকৃতির চশমা চেহারায় এক কোমল ও কমনীয় ভাব এনে দেয়।
কেমন মুখের গড়নে কেমন চশমা
চশমার ফ্রেম কিনতে গেলে কমবেশি সবাই ভাবেন কেমন ফ্রেম বেছে নেবেন। তবে প্রথমে যা মাথায় রাখা উচিত তা হলো মুখের গঠন। চশমার ফ্রেম বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তা আপনার মুখের সঙ্গে মানানসই হচ্ছে কি না পরখ করে নিন। যেহেতু নাকে চেপে বসে এ বস্তুটি, তাই নাকের (আকৃতির) সঙ্গে এর একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যাদের নাক খাড়া, তারা আয়তাকার চশমার ফ্রেম বেছে নিতে পারেন। লম্বাটে মুখের অধিকারী যারা, তাদের প্রায় সব ধরনের ফ্রেমেই বেশ মানিয়ে যায়। গোল শেপের ফ্রেম পরতে পারেন। এতে মুখ লম্বাটে দেখাবে না। অন্যদিকে যাদের নাকটা তেমন খাড়া নয়, তারা হাফ রিমের চওড়া ফ্রেমের চশমা নির্বাচন করতে পারেন। গোলাকার মুখের আকৃতির অধিকারীরা সামান্য ডিম্বাকৃতির ফ্রেমের চশমা বেছে নিন। তাদের ক্ষেত্রে গোলাকার ফ্রেমের চশমাটা পছন্দের তালিকা থেকে বাদ দেওয়াই ভালো। গোলাকার মুখে গোল চশমার ফ্রেম পরলে মুখ দেখতে আরও গোল দেখাবে। চশমার ফ্রেম বাছার সময় আরও খেয়াল রাখবেন তা যেন আপনার বয়স অনুপাতে ঠিক হয়। কিছু ফ্রেম আছে পরলে দেখতে বয়স্ক লাগে। তাই আপনার বয়স, পেশা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মেলে এমন চশমার ফ্রেম বেছে নিন।
চশমার রঙ
ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্কিনের টোন, কোয়ালিটি অনুযায়ী ফ্রেমের রঙ নির্বাচনের ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে। গোলাপি ও সোনালি স্কিন টোনের ক্ষেত্রে গোল্ডেন অথবা ব্রাউন কালারের ফ্রেম হবে ভালো চয়েজ। বর্তমানে ন্যাচারাল টোনের চশমাগুলো বেশ ট্রেন্ডি। বাদামি, বেইজ, সবুজের নানা শেডের চশমা প্রাকৃতিক ভাব ফুটিয়ে তোলে। শান্ত, ধীর-স্থির ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে এ ধরনের চশমা বেছে নিতে পারেন।
নিজেকে সবার চাইতে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলতে বেছে নিতে পারেন উজ্জ্বল রঙগুলো। যদি ক্যারি করতে পারেন তাহলে লাল, নীল, সবুজ, হলুদের মতো উজ্জ্বল রঙ বেছে নিতে পারেন। কালো একদিকে পরিশীলিত ও রহস্যময় ভাব প্রকাশ করে। সিলভার কালার জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের প্রতীক। নিজেকে ইনোসেন্ট ও স্নিগ্ধ দেখাতে গোলাপি ও পার্পলের নানা শেড পারফেক্ট। ভায়োলেট কালারের মধ্যে একটা রাজকীয় ভাব রয়েছে। নীল ও সবুজ বন্ধুত্বসুলভ রঙ সেই সঙ্গে এদের গ্রহণযোগ্যতাও বেশি। রেড হলো বোল্ড ও পাওয়ারের প্রতীক। রঙ ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। তাই নিজেকে কোন রঙে মেলে ধরবেন তা ঠিক করতে হবে ভেবেচিন্তে।
মেটেরিয়াল
ফ্রেমের উপাদানের বিষয়টি অনেকেই কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তবে চশমা কেনার সময় এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত। প্লাস্টিকের পাশাপাশি মেটালসহ সব ধরনের ফাইবার ফ্রেম পাওয়া যায়। সাধারণত প্লাস্টিকের তৈরি ফ্রেম মোটা হয়। প্লাস্টিক ফ্রেম বিভিন্ন রঙে পাওয়া যায়। রিমলেস ফ্রেম দারুণ অপশন। আজকাল লাইট ওয়েট হওয়ার কারণে ফাইবার ফ্রেম খুব চলছে। অবশ্য ফ্রেম কী ধরনের হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে গ্লাসের ওজনের ওপর।
পোশাকের সঙ্গেও চশমার সামঞ্জস্যতার একটা বিষয় রয়েছে। পাশ্চাত্য ঢঙের পোশাকের সঙ্গে একটু ভারী ফ্রেমের চশমায় আপনাকে বেশি ভালো লাগবে। সাধারণত যারা সব সময় শাড়ি পরেন তাদের রঙিন ফ্রেমের রিমলেস বা হাফ রিমলেস চশমায় ভালো লাগে। ছেলেদের করপোরেট পোশাকের সঙ্গে করপোরেট লুক জুড়ে দিতে রিমলেস চশমার জুড়ি নেই।
চশমার যত্ন
নিত্যদিন যে চশমাটিতে আপনার চোখগুলো সুন্দর ও নিরাপদ থাকছে, তার দিকে পর্যাপ্ত খেয়াল রাখাও জরুরি। যত্নের অভাবে ব্যবহারের কিছুদিনের মধ্যেই চশমার কাচে স্ক্র্যাচ পড়ে কিংবা ঝাপসা হয়ে যায়। কী করে অতি প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন এ অনুষঙ্গটির যত্ন নেওয়া যায় সঠিকভাবে, তা জেনে নিন-
কোথায় পাবেন, কেমন দাম
বাজারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চশমা পাওয়া যায়। ঢাকার নিউমার্কেট, পিংক সিটি, বসুন্ধরা শপিং মল, এলিফ্যান্ট রোড, মেট্রো শপিং মল, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পেয়ে যাবেন নানা ঢঙের বর্ণিল চশমা। ঘুরে বেছে কিনে নিতে পারেন আপনার পছন্দের ও প্রয়োজনের চশমাখানি।
একটু ভালো ব্র্যান্ডের চশমা যেমন রেব্যান, মিলোটি, গুচি, কার্টিয়ার পাবেন ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায়। তবে সাধারণত এসব ব্র্যান্ডের আদলে তৈরি চশমাগুলোই চলছে বেশি। এর মধ্যেও আবার রয়েছে মানের ভালোমন্দ দিক। একটু ভালোমানের ফ্রেমে গেলে আপনার খরচ হবে ১ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। সাধারণ চশমাগুলো পাবেন ৫০০-১ হাজার ৫০০ টাকায়।