রেজাউল করিম
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩ ১২:২৩ পিএম
গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী
গাজীপুরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী দেশের উল্লেখযোগ্য একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ভাওয়াল জমিদার পরিবারের সদস্যদের শব সৎকারের জন্য ভাওয়াল রাজবাড়ী থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে চিলাই নদীর দক্ষিণ পাশে ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী নামের এ সমাধিসৌধ স্থাপন করা হয়। তবে নানামুখী দখলে ও রাষ্ট্রের অযত্ন-অবহেলায় সেসব স্মৃতিচিহ্ন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ঐতিহাসিক ভাওয়াল পরগনার ভাওয়াল রাজাদের স্মৃতিস্মারক বহন করা রাজ শ্মশানেশ্বরী এখন অরক্ষিত। সংস্কারের অভাবে রাজ শ্মশানেশ্বরীতে গাছপালা জন্মেছে। ফাটল দেখা দিয়েছে স্থাপনায়। মাদকের আড্ডা থামাতে স্থাপনার প্রতিটি কক্ষে দেওয়া হয়েছে টিনের বেড়া। অথচ প্রত্নসম্পদ ও সংরক্ষণ শাখার ১০৬টি সংরক্ষিত ঘোষিত পুরাকীর্তির তালিকায় রয়েছে এই ভাওয়াল রাজশ্মশান নাম। সেখানে উল্লেখ করা রয়েছে ভাওয়ালের জমিদার জয়দেব নারায়ণের দৌহিত্র লোক নারায়ণ রায় বাংলা ১২৫০ থেকে ১২৬০ সালের মধ্যে গড়ে তোলেন এ ভাওয়াল রাজশ্মশান।
রাজ শ্মশানেশ্বরীতে সরেজমিনে দেখা যায়, ঐতিহাসিক এই স্থাপনায় মধ্যযুগীয় নানা পুরাকীর্তির নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। দূর থেকে সৌন্দর্য ভেসে এলেও কাছে গিয়ে দেখা যায় জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায়। খসে পড়েছে পলেস্তারা। দেখা দিয়েছে ফাটল। পুরো মন্দির দখলে নিয়েছে হরেক রকমের সরীসৃপ। ভেতরের অংশে চার-পাঁচটি ভাগ রয়েছে। প্রথমভাগের চারপাশে রয়েছে ঘূর্ণমান টানা অলিন্দ। মন্দিরের পেছন কোণে রয়েছে একটি ছোট কামরা। এসব কামরায় আগে প্রবেশ করা গেলেও এখন টিন দিয়ে আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ শ্মশানেশ্বরীতে ভাওয়াল রাজার পরিবারের মৃত সদস্যদের নামে নামফলক ও সৌধ ছাড়াও শ্মশান চত্বরে মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত সাত স্তম্ভবিশিষ্ট একটি সমাধিস্থল আছে। কিন্তু এখানে এর কোনো নির্মাণকাল লেখা নেই। নেই কোনো ফলক। আছে শুধু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড। সেখানেও নির্মাণের সময়কাল লেখা নেই।
মন্দির কমিটির নেতারা জানান, ভাওয়াল রাজবাড়ী শ্মশান গাজীপুরের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। প্রায় ৬০০ বছরের পুরোনো মন্দিরটি। ১৮ বিঘা জায়গাজুড়ে অবস্থান এই রাজ শ্মশানেশ্বরী। এটি বছরের পর বছর ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। শ্মশানের জমি দখল হওয়ায় বছর দুই আগে চারদিকে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়। এর ভেতরে আছে একটি শিব মন্দির। সেটিও বহু বছর আগের। কিন্তু নতুন রঙ করা হয়েছে। এর পূর্ব পাশে শ্মশান মঠ। সামনের দিকে তিনটি মঠের নির্মাণশৈলী সাদামাটা। বাকি চারটি মঠে অনেক কারুকাজ করা হয়েছে। পূর্বদিকে আছে একটি জরাজীর্ণ পুকুর। পুকুরের পাশেই শ্মশান।
রাজশ্মশান মন্দিরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার বলেন, ১৮ বিঘা জমি নিয়ে এই রাজ শ্মশানেশ্বরী। এখানে মোট ১৫-১৬টি পরিবার বসবাস করে। ভাওয়াল স্টেট থেকে ইজারা নিয়ে ১১টি পরিবার বসবাস করছে। মূলত এরাই এখানে থাকার বৈধতা রাখে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী যেকোনো বাসে চড়ে শিববাড়ীতে নেমে রিকশায় আসা যায়। এ ছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস এ পথে চলাচল করে।