প্রচ্ছদ
সুবর্ণা মেহ্জাবীন স্বর্ণা
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:২৬ পিএম
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ২১:২২ পিএম
মডেল : আইরিন ও জুয়েনা; পোশাক : রঙ বাংলাদেশ; মেকআপ : জারা’স বিউটি লাউঞ্জ; ছবি : ফারহান ফয়সাল
ধূপ-ধুনোর ঘ্রাণ আর ঘণ্টাধ্বনির আওয়াজ চারদিকে। জানান দিচ্ছে দুয়ারে এসেছেন দেবী দুর্গা। শরতের এই সময়ে চারদিকে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। পূজার অন্যান্য প্রস্তুতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত সাজ-পোশাক। ফ্যাশনপ্রেমীরা পূজার পাঁচ দিনই চাইবেন নিজেকে নতুন করে সাজাতে। ভিন্ন লুকে নিজেকে আলাদা করে তুলবার এই তো সময়। পূজার সাজ নিয়ে দেখুন বিশেষ প্রচ্ছদ আয়োজন
উৎসবের আমেজ চলছে চারদিকে। দেবী বোধনের পর এ আনন্দ যেন আরও বেড়ে গেছে। দুই দিন পরই ষষ্ঠী। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। পূজার পাঁচ দিন অনেকেই পাঁচ ধরনের পোশাক পরতে পছন্দ করেন। তাই ভিন্ন ভিন্ন পোশাকের সঙ্গে সাজের ধরনেও আসে ভিন্নতা। সাজ কেমন হবে, কোন পোশাকের সঙ্গে কীভাবে সাজবেন তা নিয়ে নিশ্চয় চলছে অনেক জল্পনা-পরিকল্পনা। এ সময় যেহেতু দিনে বেশ গরম আবার বৃষ্টির সম্ভাবনা এড়ানো যাবে না, তাই সাজার সময় খেয়াল রাখতে এই ব্যাপারগুলো। এ ছাড়া সারা দিনে এক মণ্ডপ থেকে আরেক মণ্ডপে ঘোরাঘুরির জন্য খেয়াল রাখুন যেন সাজ স্নিগ্ধ হয়।
পূজার সাজ মূলত ষষ্ঠী থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় দশমীতে। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুর্গাপূজা সব থেকে বড় উৎসব। তাই এই পাঁচ দিনই ভালোভাবে উদ্যাপন করতে চান তারা। আবহাওয়ায় যেহেতু কিছুটা গরমের রেশ রয়ে গেছে, তাই ভারী মেকআপে ঘেমে-নেয়ে একশা না হয়ে হালকাভাবেই সাজতে পরমর্শ দিলেন জারা’স বিউটি লাউঞ্জের রূপবিশেষঞ্জ ফারজানা রুমি। ষষ্ঠী আর সপ্তমীর সাজে স্নিগ্ধতা অর্থাৎ হালকা সাজার কথা বললেন তিনি। নবমী ও দশমীর দিনে একটু জমকালোভাবে তো সাজাই যায়।
পাঁচ দিনের সাজে থাকুক ভিন্নতা
হালকা সাজ দিয়ে শুরু করুন ষষ্ঠীতে। প্রিন্ট বা তাঁতের সুতি শাড়ি, সালোয়ার কামিজ কিংবা কুর্তি যে কোনোটাই পরতে পারেন এদিন। কমপ্যাক্ট পাউডার, চোখে কাজল, হালকা লিপস্টিকেই সেরে ফেলতে পারেন ষষ্ঠীর সাজ। চুলটা সামনের দিকে টুইস্ট করে পেছনে পনিটেইল কিংবা খেজুর বেণি করলে গরমের সারা দিনে মিলবে আরাম অন্যদিকে ট্রেন্ডি লাগবে। তা ছাড়া হালকা সাজ যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই মানিয়ে যায়।
সপ্তমীতে অঞ্জলি দিতে যাওয়ার সময় সাজটা হালকা এবং সজীব রাখতে চেষ্টা করুন। এদিন সুতি আরামদায়ক পোশাক বেছে নিতে পারেন। এমন পোশাকের সঙ্গে বেইজ মেকআপে ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে ট্যান্সলুসেন্ট পাউডার কিংবা বিবি ক্রিম লাগাতে পারেন। ঠোঁটে দিন করোল, হালকা গোলাপি, কমলা লিপস্টিক। সপ্তমীর রাতের সাজে চোখে ব্লু, অ্যাশ আইশ্যাডো লাগিয়ে সাজটাকে রাতের উপযোগী করে নিন। শাড়ির সঙ্গে করে ফেলতে পারেন মেসি খোঁপা। ফুল লাগিয়ে নিলে দেখতে লাগবে স্নিগ্ধ।
অষ্টমীতে বেনারসি, সিল্ক, কাতানের মতো ভারী শাড়ি পরতে পারেন অনায়াসে। দিনের সাজ রাখুন হালকা আর রাতে ভারী সাজ। রাতের ভারী সাজের ক্ষেত্রে সাজার আগে মুখ টোনিং করে ওয়াটার বেইজ ফাউন্ডেশন দিন। এরপর ফেস পাউডার ও ব্রাউন ব্লাশন লাগান। চোখের সাজে এখন উজ্জ্বল রঙ খুব চলছে। পোশাকের বিপরীত রঙের বা রঙ মিলিয়ে দুই শেডের আইশ্যাডো লাগাতে পারেন। সবশেষে পছন্দমতো লিপস্টিক দিয়ে সাজ সম্পন্ন করুন। হেয়ারস্টাইলে চুল কোঁকড়া করার ধারা এখন জনপ্রিয়। শাড়ির সঙ্গে চুল কোঁকড়া করে খুলে বা খোঁপা করে রাখতে পারেন। আলতা, টিপ আর সিঁদুর পরে সাজে পূর্ণতা আনুন।
নবমীর সাজ হবে গর্জিয়াস। অষ্টমীর মতো এদিনও জামদানি, কাতান বা সিল্কের শাড়ি কিংবা সালোয়ার কামিজ পরতে পারেন। এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে চোখে কনট্রাস্ট আইশ্যাডো এবং ম্যাচিং করে সোনালি কিংবা রুপালি হাইলাইট ভালো লাগবে। স্মোকি আইও করতে পারেন।
পূজার প্রাণ বিজয়া দশমী। দশমীতে সবাই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে। দশমীতে লাল শাড়ি, সাদা শাড়ি লাল পাড়ের ঐতিহ্য লক্ষ করা যায়। তবে পিছিয়ে নেই অন্য রঙের শাড়ি বা কামিজও। দশমীর আয়োজনের মতো সাজপোশাকও হয় জমকালো। এদিন চোখজোড়া উজ্জ্বল রঙে কিংবা স্মোকি লুকে সাজাতে পারেন। সঙ্গে মোটা করে কাজল, আইলাইনার, মাশকারা পরুন। আবার আইলাইনার এড়িয়ে শুধু আইশ্যাডোতে চোখে গর্জিয়াস কিন্তু স্নিগ্ধ লুক আনা যায়। গালে ব্লাশন আর ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক দিন। খোঁপা কিংবা খোলা চুলে জড়িয়ে নিন তাজা ফুল।
সাজে ফিউশন
পূজায় শুধু যে দেশীয় ঘরানার সাজপোশাকই পরতে হবে, সেই ধারা ভেঙেছে অনেক আগেই। অনেকেই এখন শাড়ি বা সালোয়ার কামিজের পাশাপাশি পূজার দুই-এক দিন ফিউশন পোশাক পরতে পারেন। শুধু পোশাক দিয়েই নয়, ট্র্যাডিশনাল পোশাকের সঙ্গে আধুনিক সাজে সেজেও আনতে পারেন ফিউশন লুক। পূজায় দুই-এক দিন যাদের ফিউশন সাজার ইচ্ছা রয়েছে তারা ট্র্যাডিশনাল শাড়ির সঙ্গে ওয়েস্টার্ন স্টাইলে চুল বাঁধতে পারেন। যেহেতু মাস্ক পরতে হচ্ছে তাই এখন চোখের সাজে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর লিপস্টিকে হালকা রঙের থাকছে। চোখের নিচে নীল কাজল, কাজলের চিকন টানা ঘন মাশকারা, উজ্জ্বল আইশ্যাডো, পোশাকের বিপরীত রঙের আইশ্যাডো কিংবা আইশ্যাডোতে এখন ফাঙ্গি ধাঁচ রাখতে পারেন অনায়াসে।
চুলের সাজ
টপস, কুর্তি বা ওয়ান পিস পরলে চুল সামনে টুইস্ট করে পেছনে পনিটেইল করতে পারেন। আবার সামনের অংশে টুইস্ট ও হালকা বেণি করে পেছনের অংশকে ছেড়ে রাখা যায়। চুল ছোট হলে স্পাইরাল বা ওয়েভি করতে পারেন। সঙ্গে হালকা সাজ তো রয়েছেই! কানে পরলেন ছোট দুল, গলায় রইল চিকন চেইন ও লকেট। হাতে থাকল ব্রেসলেট বা হাতঘড়ি।
শাড়ির সঙ্গে হাতখোঁপা কিন্তু বেশ মানায়। তবে সঙ্গে রাখা চাই ফুল। চুল সামনের দিকে ফুলিয়ে একটু কার্ল করেও খোঁপা করা যেতে পারে। দশমীর দিনের সাজটা একটু ব্যতিক্রম হলেই ভালো। এদিন সিঁথিতে সিঁদুর বড় করে দিন। সঙ্গে থাকুক বড় লাল টিপ। লিপস্টিকের ক্ষেত্রে হালকা লাল রঙ কিন্তু রাখাই যায়। পাশাপাশি অন্যান্য হালকা রঙ ব্যবহার করতে পারেন। মূলত পূজার দিনগুলোতে এমনভাবে সাজুন, যাতে আপনাকে স্নিগ্ধ লাগে এবং চোখও আরাম পায়।
মেকআপ শুরুর আগে
মেকআপের প্রাথমিক ধাপ হলো পারফেক্ট বেস। ক্যানভাসটাই যদি ভালো না হয়, ওপরে যত দামি রঙই ব্যবহার করুন, শেষ ছবিটা অতটাও ভালো হবে না। তাই মেকআপ শুরু করার আগে ক্যানভাসটা তৈরি করে নিনÑ
সাজ দীর্ঘস্থায়ী করতে
মোটের ওপর এখন যেহেতু গরমেরই সময়, তাই মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী করতে শুধু সেটিং স্প্রে যথেষ্ট নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ছোট্ট কটা টিপস অ্যাপ্লাই করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন লাগানোর আগে মুখে কমপ্যাক্ট বুলিয়ে নিন। এর ওপর লাগান ফাউন্ডেশন। তার ওপর স্বাভাবিক নিয়ম মেনে কমপ্যাক্ট এবং শেষে সেটিং স্প্রে লাগান। মেকআপ সারা দিন সুন্দর থাকবে। তবে ত্বক শুষ্ক প্রকৃতির হলে এই ট্রিক কাজ নাও করতে পারে। ত্বক আরও রুক্ষ দেখাতে পারে। সেক্ষেত্রে বেস মেকআপের পর, অর্থাৎ ফাউন্ডেশন, কনসিলার এবং কমপ্যাক্টের পর বরফ-ঠান্ডা পানি স্প্রে করুন। স্পাঞ্জ দিয়ে তা ব্লেন্ড করে নিন, যেন মেকআপ নষ্ট হওয়ার আগেই ত্বক তা শুষে নেয়। দেখবেন মেকআপ অনেকক্ষণ ফ্রেশ থাকবে।
সাজের কিছু টিপস