× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হাওরের দিনরাত্রি

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:১২ পিএম

আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:২৫ পিএম

শরতের হাওর একটু বেশিই সুন্দর   ছবি : লেখক

শরতের হাওর একটু বেশিই সুন্দর ছবি : লেখক

হাওরের দিনরাত্রি

কালের ধারায়, প্রকৃতি এ ধরায় প্রাণের সজীবতা, রঙ, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়ে এসেছে ঋতুর রানি শরৎ। নদী, বিল, পুকুর ও হাওরের স্বচ্ছ পানির বুকে শুভ্র শাপলার পাগল করা হাসি প্রেয়সীর হৃদয়কাড়া হাসির মতোই মনে হয়। শিশিরভেজা শিউলি ফুল অনুপম সৌন্দর্য নিয়ে ঘাসের বুকে হাসে। আকাশে-বাতাসে, দূর্বাঘাসে শরতের রানি তার স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে দেয়। এমন প্রকৃতি অনুভব করতে ভ্রমণপিয়াসী মন ছুটে বেড়াতে ইচ্ছা করে চারদিক। আর তাই এই শরতে ছুটে গিয়েছিলাম হাওরের রূপ উপভোগ করতে।

শরতের হাওর একটু বেশিই সুন্দর। ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসে যাত্রা করে পৌঁছালাম সুনামগঞ্জ। সেখান থেকে আনোয়ারপুর ঘাটে অটোতে করে আমরা ৬ ভ্রমণসঙ্গী পৌঁছাই। এখন থেকে আরণ্যক হাউসবোটে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। হাউসবোটের ছাদ যেন এক সুন্দর সাজানো বাগান। ছাদে বসে আড্ডা দিতে দিতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই হাওরের রূপ গেলার সব আয়োজন আছে এই বোটে। বোটে উঠেই সকালের নাশতা শেষে উঠে পড়লাম আমরা হাউসবোটের ছাদে। গরম ধোঁয়া ওঠা চা আর হাওরের রূপ সব মিলেমিশে যেন একাকার। শরতে হাওরের রূপে বিমোহিত হয়ে গলা ছেড়ে গান ধরল কেউ কেউ। ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলাম আমরা ওয়াচ টাওয়ারে।

হাওরজলে প্রতিফলিত হয় শরতের নীলাকাশ ছবি : লেখক

টাঙ্গুয়ার হাওর ট্রিপের জলকেলি করার সব থেকে দারুণ জায়গা এই ওয়াচ টাওয়ার। দলবেঁধে সবাই পানিতে নামলাম হলো। ওয়াচ টাওয়ার ঘুরে ছুটলাম আবার টেকেরঘাটের পথে। টেকেরঘাট পৌঁছেই চলে গেলাম লাকমাছড়া ঘুরতে। চারপাশে মেঘালয় পর্বতের সারি। ধাপে ধাপে নেমে আসা পাহাড়। একই সঙ্গে পাহাড়ের কোলজুড়ে সাদা ঝরনার পানি নেমে আসা, স্বচ্ছ ছড়া। সেখান থেকে ঘুরে এসেই চলে গেলাম শহীদ সিরাজ লেকে শেষ বিকাল কাটাতে, যা কি না বিখ্যাত নীলাদ্রি লেক নামেই বেশি পরিচিত।

দিনের আলো নিভে এলে আমরা ফিরলাম বোটে। চুপচাপ রাতের হাওরে আকাশের পূর্ণিমার আলোয় চারপাশে যেন জাদুকরী পরিবেশ সৃষ্টি করল। আড্ডা-গানে দারুণ সময় কাটল। ঠিক ঘড়ির কাঁটায় ১২টা বাজতেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। অঝোরধারায় নেমে আসা বৃষ্টি, বন্ধুদের কণ্ঠে গান আর হাওরের পরিবেশ মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করেছে মনের মাঝে। ভোর হতেই নৌকা পথচলা শুরু করল যাদুকাটার পথে। একদম স্বচ্ছ ও নিলাভ যাদুকাটা নদী আপনাকে মুগ্ধ করবেই। ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে এই স্থান দিয়েই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নদীটি। বেরিয়ে পড়লাম বারেকটিলার রূপ গিলতে। বারেকটিলা ভারত-বাংলাদেশের সীমানাঘেঁষা সেই স্থান, যেখানে পাবেন মেঘালয়ের পাহাড়, ঝরনা আর যাদুকাটা নদীর বার্ডস আই ভিউ।

হাওরের কোনো পাড় থেকে এই রূপ যতটা দেখতে ভালো লাগে তার চেয়ে ঢের বেশি ভালো লাগে নৌকাভ্রমণ থেকে। হাওর প্রতিবিম্বে শরতের নীলাকাশটা ধরা পড়ে দারুণভাবে। সাদা মেঘের প্রতিচ্ছবি হাওরজলে! এ এক অপূর্ব শোভা। নৌকা থেকে হাওরপাড়ের এমন সৌন্দর্যগুলো দেখতে দেখতে নয়ন জুড়িয়ে যায়। মনমাতানো সৌন্দর্যে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর আর সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ি মেঘ, বৃষ্টির প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে বারেকটিলায়, যা আপনাকে দিতে পারে নৈসর্গিক, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আত্মতৃপ্তি; যা আপনার ক্লান্ত মনটাকে একটু হলেও দোলা দেবে।

হাওরজলে প্রতিফলিত হয়ে শরতের নীলাকাশ দেখতে দেখতে আমরা ফেরার পথ ধরলাম। হাওরের চারপাশ জুড়ে থাকা মানুষের জীবনযাত্রা আর প্রকৃতি আনমনা করে দেয় নিজেকে। হঠাৎ বলে উঠে মন জীবনানন্দের সুরে- আমি যদি হতাম বনহংস/ বনহংসী হতে যদি তুমি / কোনো এক দিগন্তের জলসিঁড়ি নদীর ধারে / ধানক্ষেতের কাছে / ছিপছিপে শরের ভিতর / এক নিরালা নীড়ে;

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা