কালমেঘ
রাতুল মুন্সী
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৩৪ এএম
প্রতিদিন ভোর বেলায় নিয়ম করে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করে কালমেঘ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাম্প্রতিক আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। এর কারণ শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও নানাবিধ কারণে তারা মানসিক সমস্যা ও বিষণ্নতায় ভুগে মৃত্যুর পথ বেছে নেয়। যারা এ পথে পা বাড়ায় না, তারা হাতে তুলে নেয় মাদক।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে ‘কালমেঘ’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটি কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের শরীর ও মনের সুস্থতায় শরীরচর্চা ও খাদ্যাভ্যাসের বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়ে আসছে। প্রতিদিন দৈহিক ও যোগ ব্যায়ামের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর নাশতার আয়োজন করা হয়।
কালমেঘের সদস্যরা সচরাচর বেশ ভোরেই ঘুম থেকে ওঠে। প্রতিদিন সকালে কমান্ডার প্রধান সেক্টর কমান্ডারদের ঘুম ভাঙিয়ে দেন ফোন কলের মাধ্যমে। সেক্টর কমান্ডাররা ফোন দেন বাকি সব সাধারণ সদস্যদের। এভাবে সবাই একত্রিত হয় নজরুল ভাস্কর্যের সামনে। সবাই চলে আসার পর শুরু হয় জগিং। এক থেকে দুই কিলোমিটার দৌড় শেষে সবাই জড়ো হয় বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যের সামনে।
এখানে আসার পর ব্যায়াম, যোগ ব্যায়াম, প্রাণায়ামসহ নানা রকম শারীরিক কসরত করে সদস্যরা। পাশাপাশি থাকে এসবের উপকার নিয়ে বিশদ বর্ণনা। সবাই মিলে দেশের গান গেয়ে শেষ হয় এ পর্ব। এরপর ক্যাম্পাসে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন লতাপাতা- যেগুলো শরীরের জন্য উপকারী- সেগুলো সংগ্রহ করে একটা টিম। সংগ্রহ শেষে তারা চলে আসে চক্রবাক ক্যাফেটেরিয়ায়। লতাপাতাগুলো ধোয়ার পাশাপাশি চলে নাশতার প্রস্তুতি। নাশতায় যুক্ত থাকে ছোলা, বাদাম, কালজিরা, কিশমিশ, আদা, পেপেসহ নানা কিছু। নাশতার মাধ্যমে শেষ হয় কালমেঘের প্রতিদিনের সকাল।
কালমেঘের সদস্যদের মধ্যে জরিপ করে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়ামে আসে তারা খুবই প্রাণবন্ত। পড়াশোনা শেষ করে বের হয়ে যাওয়া অনেকেই এখন ভালো ভালো জায়গায় চাকরিতে আছে। অনেকে নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাদের কখনও হতাশা বা বিষণ্নতা গ্রাস করেনি।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক দ্রাবিড় সৈকত। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কালমেঘ আমাদের দেশের বন জঙ্গলে জন্ম নেওয়া ঔষুধিগুণ উপকারী একটি উদ্ভিদ। এই গাছের পাতার রস আমাদের শরীরের জন্য উপকারী এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া, ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, নিয়ম করে খাবার খাওয়ার মতো বিষয়গুলো মেনে চললেই একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপ্পক হয়ে উঠবে। এই কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতেই সবাইকে নিয়ে সংগঠনটি গড়ে তুলেছি।’