নুসরাত খন্দকার
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৪৮ পিএম
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৫২ পিএম
খানিকটা আত্মবিশ্বাস আর নিজের প্রতি অনেকটা ভালোবাসা, সুন্দর থাকার প্রাথমিক শর্ত এগুলোই। বয়স, কমপ্লেকশন বা ত্বক-চুলের অবস্থা এখানে গৌণ। আগে দৃষ্টিকোণ বদলাতে হবে। যত্ন-আত্তি, সাজগোজ তো পরের কথা
সৌন্দর্য বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? সুন্দর থাকার অর্থই বা কী? রোজ সকাল থেকে রাত অবধি রূপচর্চা করে যাওয়া? সেজেগুজে বারবার আয়নায় নিজেকে দেখা? নাকি সবার প্রশংসা কুড়ানো? সত্যি বলতে, সুন্দর থাকার অর্থ এর একটাও নয়। সৌন্দর্য এমনই একটা বিষয়, যার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। আপনার চোখে যা সুন্দর, তা যে সবার চোখেই সুন্দর হবে, তা নয়। আবার কারও ভালো লাগছে না বলে যে আপনার চোখেও তার সৌন্দর্য কমে যাবে, তা-ও নয়। বাহ্যিক উপস্থিতির সঙ্গে সৌন্দর্যের সম্পর্ক নিশ্চয়ই অস্বীকার করা যায় না। তবে সুন্দর থাকার আসল অর্থ নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া। আত্মপ্রেম ছাড়া সৌন্দর্য অসম্পূর্ণ। বাহ্যিক সৌন্দর্য সুন্দর থাকার খুব ছোট একটা অংশ।
রূপচর্চা বিলাসিতা নয়
আয়নার সামনের চেহারাটা নিয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো আক্ষেপ রয়েছে। আর সেগুলো ‘ঠিক’ করার পেছনেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। ইস, চোখের কোণে যদি ভাঁজ না পড়ত! থুতনিতে যদি ওই দাগটা না থাকত! আক্ষেপ যত বাড়ে, তত যত্নের হিড়িক পড়ে। আর যেই মনের মতো ফল মেলে না, অমনি আমরা হাল ছেড়ে দিই। এ কথা সত্যিই অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আমরা অনেকেই রূপচর্চা তখনই করি, যখন আমাদের প্রয়োজন হয়। অনুষ্ঠানের আগে, ঈদ-পূজা থাকলে বা হঠাৎ কোনো সমস্যায় পড়লে। খুব কমসংখ্যক মানুষই রূপচর্চাকে দৈনন্দিন জীবনের অংশ হিসেবে দেখেন। ভালো খাবার খাওয়া, শরীরচর্চা করা যেমন নিজেকে ভালো রাখার অঙ্গ, রূপচর্চাও তেমনই। এটা যখনই বুঝতে পারবেন, তখনই নিজের প্রতি যত্নশীল হবেন। রূপচর্চা তখন আর বিলাসিতা মনে হবে না। খুব যে আড়ম্বরের প্রয়োজন, তা কিন্তু নয়। সকালে উঠে শুধু পানির ঝাপটা না দিয়ে একদিন না হয় মুখে এক কুচি শসা ঘষলেন। দিনের বেলা মনে করে সানস্ক্রিন মাখলেন বা রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে দুধের সর লাগালেন। গোসলের সময় খানিকটা হলুদ পানিতে গুলিয়ে হাতে পায়ে লাগিয়ে তারপর ধুয়ে নিলেন। এমন কিছু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তো নয়। যতটুকু সময় দিতে পারবেন, ততটুকুই দিন। কোনো তোড়জোড় বা রুটিন ফলো না করলেও, যত্ন যে নেবেন, সেটাকেই রুটিন করে নিন। অবশ্যই ত্বকের প্রয়োজন বুঝে যত্ন নিতে হবে। সমস্যা হলে তার সমাধানও খুঁজে নিতে হবে। তবে সমস্যা না থাকলে যত্ন ছাড়া যাবে না বা কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন না বলে হাল ছেড়ে দিলেও হবে না। নিয়মিত রূপচর্চা করলে ত্বক সুন্দর থাকবে এবং তার ফল মিলবে।
ত্বকের যত্নে
ত্বকের যত্ন নেওয়া বলতে অনেকেই বোঝেন পারলারে যাওয়া। প্রফেশনালের সাহায্য প্রয়োজন হলে নিতে পারেন। তবে যদি বাড়িতে নিয়মিত যত্ন নেন, তা হলেও যথেষ্ট। কিছু উপকরণ হাতের কাছে সব সময় রাখার চেষ্টা করুন। যেমন হলুদ, মধু, লেবুর রস, টম্যাটো ও অ্যালোভেরা। সব ধরনের ত্বকের পক্ষেই এগুলো উপকারী। সপ্তাহে অন্তত দুবার ব্যবহার করতে পারেন। ফেসপ্যাক, টোনার বা ম্যাসাজ করার জন্য প্রতিটি উপকরণই কার্যকর। যদি এর মধ্যে কোনো উপকরণ ত্বকের জন্য উপযুক্ত না হয়, তাহলে চন্দন, মুলতানি মাটি বা দুধ ব্যবহার করতে পারেন। যেকোনো ফলের খোসায় ভিটামিন থাকে। ত্বকের মৃত কোষ দূর করার জন্য দামি স্ক্রাব না কিনে কাটা ফলের খোসা মুখে ঘষুন। খুব একটা তফাত হবে না। বাহারি মেকআপ রিমুভারের বদলে সাধারণ নারকেল তেল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন। যেকোনো ভালো মেকআপ রিমুভারের মতোই কাজ করবে। আসল কথা হলো, হাতের কাছে যা পাচ্ছেন সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করুন। রুটিন যত সিম্পল রাখবেন, ফলো করা ততই সহজ হবে। এরপর প্রয়োজন হলে প্রফেশনালের সাহায্য নিন। তবে এর সঙ্গে নিয়ম করে ত্বক পরিষ্কার করা, টোনার দিয়ে মুখ মোছা, ময়েশ্চারাইজ করা, মেকআপ করলে তা পুরোপুরি তুলে তারপর শুতে যাওয়ার অভ্যাস জরুরি। এ ছাড়া বিশেষ দিনের জন্য বাড়তি যত্ন নিতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, একদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যত্ন নিলে যা উপকার পাবেন, তার চেয়ে প্রতিদিনের ১৫ মিনিটের যত্নে উপকার অনেক বেশি।
বিশেষ দিনের বিশেষ যত্ন
প্রতিদিন যত্ন নিলে ত্বক বা চুল এমনিই ভালো থাকে। ফলে বাড়তি যত্ন পেলে উপকারও বেশি হয়। কিন্তু যারা একেবারেই ত্বকের যত্ন নেন না, তাদের ত্বক যেহেতু অভ্যস্ত নয়, তাই এক দিনে অতিরিক্ত যত্ন নিলে র্যাশ, লালচে ভাব, এমনকি অ্যাকনেও হতে পারে। তাই রোজ অল্প করে হলেও যত্ন নেওয়ার অভ্যাস পুরোপুরি ছাড়বেন না। সাধারণত যেভাবে যত্ন নেন, বিশেষ দিনে সেটাই একটু-আধটু বদলে নিন। যেমন প্রতিদিন হয়তো শুধু ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেন। বিশেষ দিনে তার আগে বা পরে মুখে খানিকটা আলুর রস লাগালেন। অথবা তুলায় করে দুধ নিয়ে পুরো মুখটা মুছে নিলেন। সাধারণ গোসলের পানির পরিবর্তে কয়েক ফোঁটা সুগন্ধি এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে গোসল করুন। ত্বকেও লাবণ্য আসবে আর সুগন্ধে শরীর-মনের ক্লান্তি দূর হবে। যেহেতু প্রতিদিন বেসিক একটা রুটিন থাকছেই, তাই বিশেষ দিনে এই ছোটখাটো পরিবর্তনগুলো করলেই অনেকটা পার্থক্য হবে।
তবে বিশেষ দিনে কোনো ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করতে যাবেন না। নতুন উপকরণ বা নতুন প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তখন হাতে সময়ও পাবেন না তা ঠিক করার। তাই আগে ব্যবহার করেছেন এমন কিছু বা কোনো ক্ষতি হবে না, সেটা নিশ্চিত হয়ে তার পরই নতুন কিছু ব্যবহার করুন।