শনিবারের হাসি
মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩১ পিএম
আবদুল কাদির নাদুসনুদুস চেহারার। মিষ্টি করে হাসে। খুব ছোটবেলা থেকেই তার প্রতিদিন ডিম খাওয়া চাই-ই চাই। সেদ্ধ, ভাজি অথবা রান্না করেÑ খাবার মেনুতে তার ডিম লাগবেই। প্রাইমারিতে পড়ার সময় স্যারেরা কাদিরের সঙ্গে রসিকতা করে বলত, কাদির, আজ কটা ডিম খেয়েছ? সেদ্ধ না ভাজি?
কাদির শুধু হাসত, উত্তর না দিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে যেত। শুধু যে ডিম খাওয়ার অভ্যাস কাদিরের তা নয়, ঘুমের মধ্যে বিড়বিড় করে কথা বলার অভ্যাসটাও তার সেই ছোটবেলা থেকেই।
আবদুল কাদিরের লাইফে গত রাতে ডিমের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কথা হয়। ডিমের সঙ্গে সেই কথোপকথনÑ
কাদির : আপনার লাইফে এখন সবচেয়ে বেশি দাম, অনূভুতি কেমন?
ডিম : খুবই ভালো লাগছে, এই প্রথম এত দাম পেয়ে। টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে। প্রিন্ট মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের নিয়ে প্রতিনিয়ত নিউজ দেখে খুবই ভালো লাগে।
কাদির : দাম বাড়ার কারণ কী? সিন্ডিকেট নাকি অন্য কিছু?
ডিম : সিন্ডিকেট কি না জানি না। তবে মিটিং-মিছিল কম হওয়া ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে দাম বাড়তে পারে।
কাদির : ঠিক বুঝলাম না, দাম বাড়ার জন্য এগুলো কীভাবে দায়ী?
ডিম : পরীক্ষার কারণে অনেকে ডিম খায় না, পরীক্ষা খারাপ হবে বা শূন্য পাবে বলে। মিটিং-মিছিলে আগে পচা ডিম ছোড়া হতো। যার কারণে পচা ডিমগুলোও আগে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে বিক্রি হতো। কিন্তু এখন মিটিং-মিছিল কম হওয়ায় পচা ডিম বিক্রি করা যায় না। সেগুলোর লস পুষিয়ে নিতে ভালো ডিমের এককপ্রতি দাম বেড়ে যায়।
কাদির : কখন বেশি খারাপ লাগে?
ডিম : যখন কেউ আন্ডা বলে। আন্ডা বলে ডাকলে ইগোতে লাগে। আন্ডা বলে ডেকে আমাদের আন্ডারইস্টিমেট করা হয়।
কাদির : অনেকে বলছে পানির দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। কথাটা কতটা যৌক্তিক?
ডিম : এটা আমাদের নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে এক কাস্টমার এক দোকানিকে বলছেন, পানির দামে ডিম বিক্রি কথাটা সঠিক নয়, বলা উচিত ইটের দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। কারণ হলো আমি আজ ইটভাটায় ১৩ টাকায় ইট কিনে, পরিবহন খরচ ১ টাকা ও ভাঙতে ১ টাকাÑ ইট প্রতি মোট খরচ ১৫ টাকা, যা কি না একটি ডিমের দামের সমান।
কাদির : স্মরণকালের সেরা দাম। আপনার কি মনে হয় দাম বৃদ্ধির এ ধারাটা সঠিক?
ডিম : দেখুন, ডিম উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যসব জিনিসের দামও বাড়তি। রসুন, আলু, পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বাড়তি। শুধু ডিমের দাম বাড়লেই মানুষের যত কথা। তবে ডিমের এমন দাম বৃদ্ধিতে খারাপ লাগে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে।
কাদির : বিশেষ কোনো ঘটনার কথা যদি বলতেন।
ডিম : হাট্টিমাটিম টিম তারা মাঠে পাড়ে ডিম। এতদিন ডিম নিয়ে বলার মতো একটি ছড়াই ছিল। এখন ডিম নিয়ে অনেক ছড়া-কবিতা লেখা হচ্ছে।
কাদির : ছড়া-কবিতার খোঁজও দেখি ভালোই রাখেন। আপনার প্রিয় লেখক কে?
ডিম : প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ হলো আমার প্রিয় লেখক। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো লিখতেন ‘হিমুর হাতে কয়েকটি খয়েরি ডিম’।
কাদির : দোকানের কোনো মধুর স্মৃতি?
ডিম : একদিন কোনো এক কাস্টমার এসে বলেন, এত বেশি দামে ডিম কিনব, ডিম এত ছোট কেন? দোকানির উত্তর, আপনি বলছেন ছোট, যে পাড়ে সে বোঝে। দোকানি আমার পক্ষ হয়ে কথা বলায় খুবই ভালো লেগেছিল।
কাদির : সবচেয়ে ভালোলাগার মুহূর্ত কোনটি?
ডিম : প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে কথা বলছেন, এর চেয়ে ভালোলাগার মুহূর্ত আর কী হতে পারে!
কাদির : বিশেষ কোনো আক্ষেপ আছে কি?
ডিম : পরীক্ষায় তো অনেক রচনাই আসে, পরীক্ষায় যদি ডিমের রচনা আসত, খুবই ভালো লাগত।
কাদির : ক্রেতার জন্য আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?
ডিম : শরীরের সুষম পুষ্টির জন্য বেশি করে ডিম খান। ডিম খেয়ে পরীক্ষা দিলে পরীক্ষা খারাপ হবে বা শূন্য পাওয়া যাবেÑ এটা কুসংস্কার। আপনি তো তার বড় প্রমাণ। ছোট থেকে আপনি প্রতিদিন ডিম খেয়ে আসছেন। আজ আপনি বুয়েটের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী।