রিয়া মোদক, হাবিপ্রবি
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:১৩ পিএম
সাপ উদ্ধার করার কাজটি সফলতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন কামরুন নাহার কণা
বর্ষাকাল এলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা প্রজাতির সাপের আনাগোনা দেখা যায়। চলতি পথে বা হল কিংবা আবাসিক এলাকায় সাপ দেখা গেলে এতদিন মেরে ফেলার সংস্কৃতি থাকলেও সম্প্রতি তাতে পরিবর্তন এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশে কোথাও সাপ দেখা গেলে একজন মেয়ের ডাক পড়ে। সাহসী এ নারী শিক্ষার্থীর কদর তাই সবার কাছে। সাপ উদ্ধার করে লোকালয় থেকে দূরের বনে অবমুক্ত করার কাজটি সফলতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন কামরুন নাহার কণা।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিভিএম অনুষদের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী কণা। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে কুকুর-বিড়াল নিয়ে কাজ করা শুরু তার। করোনার সময় প্রাণীদের খাদ্যের কষ্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেন প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করার। বর্তমানে কাজ করছেন সাপ উদ্ধারে। ভোর বা গভীর রাত, খবর পেলেই ঝাঁপি হাতে ছুটে যান তিনি। হাতের কায়দায় ছোট্ট লোহার লাঠির সাহায্যে দিব্যি বিষধর সাপ ঝাঁপিতে পুরে ফেলেন। তা সে গোখরো, ময়াল, কেউটে হোক না কেন!
২০২২ সালে ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে হাবিপ্রবির পথচলা শুরু। হাবিপ্রবি এবং উত্তরবঙ্গের প্রথম নারী স্নেক রেসকিউয়ার কণা বর্তমানে সংগঠনটির হাবিপ্রবি ইউনিটের সভাপতি।
এ পর্যন্ত নির্বিষ, বিষধর মিলিয়ে ৪০টির মতো সাপ উদ্ধার করেছেন কণা। সাপের কোনো ক্ষতি যাতে না হয় সে দিকে তার অটুট নজর। সাপ উদ্ধারের পর সযত্নে তাকে নিয়ে ছোটেন বন দপ্তরে। সঙ্গে শুরু করেন সাপের শুশ্রূষা।
সাপ বাঁচানোই মূল লক্ষ্য নয় কণার। সাপ ধরে ছেড়ে দেওয়া সাময়িক সমাধান মাত্র। তাই সাপে কাটায় একজন মানুষও যেন মারা না যায় তা নিশ্চিতকরণ, মানুষের মধ্য থেকে সাপভীতি কমানোর লক্ষ্যেও কাজ করছেন।
কণা বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে সাপেরা এখন বিপন্নপ্রায়। শান্তিপ্রিয়এই প্রাণীকে অযথা ভয় পেয়ে মানুষ মেরে ফেলছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং সাপেরা ক্রমেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে। নিজের কাজের বাইরে অবসর সময়ে কাজ করেন সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণে।
কণা জানান, ‘নারী রেসকিউয়ার হিসেবে কোনো দিন বিপদের সম্মুখীন হইনি। সব জায়গায়, সবার কাছ থেকে সহযোগিতা পাই। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা দারুণ।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে কণা বলেন, ‘সাপের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করা, প্রকৃতির যে সামঞ্জস্যতা আছে তা রক্ষা করা এবং সাপের কাটায় একজন মানুষও যেন মারা না যায় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে চাই। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থা রাখা এবং ওঝাদের দ্বারা যেন মানুষ যেন প্রতারিত না হয় এ বিষয়ে কাজ করতে চাই। প্রতিটি স্কুল-কলেজে গিয়ে অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম করা যেন সাপের প্রতি মানুষের যে ভীতি আছে তা কমে যায়। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাপ পরিবেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বুঝে না বুঝে অনেক সাপ মেরে ফেলি। কিন্তু সাপের কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে এমন সংখ্যা খুবই কম। আমাদের সাপ চিনতে হবে, কোনটি বিষধর কোনটি নির্বিষ। তাদের উপকারিতা-অপকারিতা জানতে হবে।’