বিশ্ব নদী দিবস
রানা আহমেদ, কেরানীগঞ্জ
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৯ পিএম
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:০২ পিএম
বর্ষা মৌসুম শেষে বুড়িগঙ্গা কানায় কানায় ভরে উঠেছে
বর্ষার পানিতে দূষণের কালো রঙ ফিকে হয়ে যেন নতুন সাজে সেজেছে বুড়িগঙ্গা নদী। বর্ষার পরিষ্কার পানিতে টলমল করছে নদী; প্রাণ ফিরে পেয়েছে বুড়িগঙ্গা।
দূষণের ফলে শীত ও গ্রীষ্মে বুড়িগঙ্গার পানি এতটাই নোংরা থাকে যে, দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়ে। সেখানে বর্ষা মৌসুম শেষে বুড়িগঙ্গা কানায় কানায় ভরে উঠেছে। একটু স্বস্তি পেতে মানুষ তীরে সময় কাটাচ্ছে, কেউ কেউ পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর পানিতে এখন আগের মতো দুর্গন্ধ নেই, কালো পানি রঙ বদলে পরিষ্কার হয়েছে। তীরঘেঁষা লোকজন গোসল, কাপড় ধোয়াসহ নানা কাজকর্ম করছে। শিশুরা নদীতে খেলা করছে। নদী রূপ ফিরে পাওয়ায় পাড়ের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকার পানি সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার হয়। পানি বৃদ্ধির কারণে এ স্থানের চিত্র বদলে যাওয়ায় বুড়িগঙ্গার অন্য অংশের পানির আরও বেশি উন্নতি হয়েছে।
কথা হয় মাঝি আলী মিয়ার সঙ্গে। জানান, প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে বুড়িগঙ্গায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। একসময় এ নদীতে ইলিশ মাছও পাওয়া যেত। ঢাকার মানুষের মাছের চাহিদার বড় অংশ সরবরাহ করতো এ নদী থেকে। এক যুগ ধরে শুধু বর্ষায় মাছ পাওয়া গেলেও বাকি সময় মাছ থাকে না। তবে বর্তমানে জাল ফেলতেই উঠে আসে শাকার ফিশ। বুড়িগঙ্গাজুড়ে এখন শুধুই শাকার ফিশের রাজত্ব।
বুড়িগঙ্গার কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার পানি আরও বেশি স্বচ্ছ। নদীর তীরে বসে গল্পে মত্ত বেশ কয়েকজন প্রবীণ। পড়ন্ত বিকালে পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজের ওপর থেকে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যায় অনেককেই। তাদের মধ্যে রাসেল মিয়া নামে এক যুবক বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময় পানি নষ্ট থাকে, তখন বুড়িগঙ্গা দেখলে আফসোস হয়। এখন বর্ষায় পানি পরিষ্কার। তাই পড়ন্ত বিকালে বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য দেখতে এসেছি।’
জিনজিরা ঘাটসংলগ্ন এলাকায় বুড়িগঙ্গায় গোসল করছিলেন ২০ বছর বয়সি তরুণ রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে প্রচুর গরম। একটু আরাম পেতে নদীতে গোসল করছি। অন্যান্য সময় তো পানির দিকে তাকানোও যায় না। এখন পানি পরিষ্কার, তাই একটু স্বস্তির জন্য নদীতে ঝাঁপাচ্ছি।’
সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় লঞ্চ থেকে নদীতে লাফালাফি করছিল কয়েকটি পথশিশু। তারা জানায়, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেই বসবাস তাদের। বছরের অন্যান্য সময় পানি নোংরা ও গন্ধ থাকে। তখন পানিতে নামলে দম বন্ধ হয়ে যায়।
ফল বিক্রেতা মুবারক হোসেন থাকেন কেরানীগঞ্জে। তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি এখন অনেক পরিষ্কার। পানি কমতে শুরু করলেই আবার নোংরা হয়ে যাবে। নতুন পানির কারণে দুর্গন্ধ কম।
নদী ভ্রমণে আসা কয়েকজন বলেন, পড়ন্ত বিকালের সূর্যালোকে মনে হচ্ছে বুড়িগঙ্গা যেন হাসছে। কিন্তু এ হাসি ক্ষণস্থায়ী। সারা বছর তার এ হাসি ধরে রাখতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে।
বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী বসবাসকারীরা জানান, এবার বর্ষা আসার আগেই নদীর পানির রঙ বদলাতে শুরু করেছে। এখন পানি পরিষ্কার। এটাকে তারা ভালো লক্ষণ হিসেবে মনে করছেন। কিন্তু বর্ষা শেষ হলেই বুড়িগঙ্গার পানি কালো হয়ে যাবে। তখন পানি হাতে নেওয়াই মুশকিল হয়ে যায়। পচা পানির গন্ধে তীরের বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দেয় নানা রোগব্যাধি। আশপাশের ডায়িংগুলোসহ কলকারখানার দূষণ রুখতে পারলে সারা বছরই আগের মতো বুড়িগঙ্গার পানি পরিষ্কার থাকবে বলে আশা তাদের।