রুবাইয়া হাসনাইন
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৫ পিএম
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৪ পিএম
অলংকরণ : রাইয়্যা খায়ের, অষ্টম শ্রেণি, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বগুড়া
একদিন আলিয়াদের ছাদবাগানে গিয়েছিলাম। ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখছিলাম। বাগানটা বেশ বড়। নানা ফুল ও ফলের ছোট ছোট গাছে ভরপুর। দেখতে অনেকটা ঝাপড়াঝুপড়া। সেখানে অনেক রকম পাখি আসে। মুনিয়া, চড়ই, খঞ্জনাসহ বেশকিছু পাখি। এর মধ্যে মুনিয়ার সংখ্যাই বেশি। মুনিয়া দেখতে বেশ সরল আর মায়াবী। আলিয়া বলল, পাখিগুলো সন্ধ্যা হলেই ছাদে এসে জমা হয়। রাতে সেখানেই থাকে। ছোট ছোট গাছের ডালে ঘুমায়। সকাল হলে কোথায় যেন চলে যায়। আর দেখা যায় না। হয়তো মানুষের ভয়ে তারা আর এখানে থাকে না। তাদের কোনো বাসা নেই। মাঝখানে অনেক দিন পাখিগুলো এখানে ছিল না। কোথায় যেন চলে গিয়েছিল। আবার এসেছে। আলিয়াকে বললাম, তুই একটা কাজ কর। ছোট ছোট কিছু মাটির হাঁড়িপাতিল এনে গাছের ডালে ছাদের কোনায় বেঁধে দে। দেখবি তারা সেখানে খড়কুটো দিয়ে ঘর বানিয়ে নেবে। আর যাবে না। আলিয়া বলল, খুব ভালো একটা আইডিয়া। ঠিক বলেছিস। এরা ঘর বানালে আর যাবে না। আমাদের পড়শি হয়ে থেকে যাবে।
পরদিন আলিয়া তার বড় ভাইকে দিয়ে হাঁড়িপাতিল কিনিয়ে আনল। একপাশে ছোট্ট ফুটো করে হাঁড়িগুলো বেঁধে রাখল গাছের ডালে, ছাদের কোনায়। কিছুদিনের মধ্যেই মুনিয়া পাখিগুলো হাঁড়ির ভেতর বাসা বানাল। চড়ুইগুলো ঢুকে পড়ল চিলেকোঠার ভেতর। পাখিগুলো এখন নিশ্চিন্তে ঘুম যায়। দিনের বেলায় বাইরে গিয়ে খেয়ে আসে। কিছুদিন পর আলিয়া খেয়াল করল, কিছু পাখি বাসার ভেতর দিনের বেলায়ও থেকে যায়। তারা আর বাইরে যায় না। আলিয়া অবাক হলো। রহস্যটা কী! ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারল না। একদিন দুপুরবেলা দেখল, একটি হাঁড়ির ভেতর চারটি ডিম। তার মানে পাখিগুলো ডিম দিয়েছে। তাই তারা বাইরে যায় না। ডিমে তা দেয়। আলিয়া ভাবল, পাখিগুলো নিশ্চয় এই সময়ে ক্ষুধার্ত থাকে। ঠিকমতো খাবার পায় না। অনেক কষ্টে থাকে। তাই তাদের খাবার পানি দেওয়া দরকার। না হলে পাখিগুলো শুকিয়ে যাবে। মারা যেতেও পারে। আলিয়া তাই ঠিক করল টিফিনের টাকা দিয়ে সে পাখির জন্য খাবার কিনবে আর খাবার রাখার জন্য কিছু ট্রে।
যে কথা সেই কাজ। আলিয়া পাখির জন্য কাউনের চাল এনে ট্রেতে করে রেখে দিল ছাদের কোনায়। খাবার পানি পেয়ে মুনিয়া পাখিগুলো খুব খুশি হলো। মনের আনন্দে তারা নিরলসভাবে ডিমে তা দিতে লাগল। কয়েক দিনের মধ্যেই বাচ্চা হলো তাদের। বেশ হৃষ্টপুষ্ট। সেই থেকে পাখিগুলো আলিয়াদের ছাদবাগানেই আছে। আলিয়াদের ছেড়ে আর কোথাও যায় না। যাবে বলেও মনে হয় না।
আলিয়া এখন প্রায়ই বলে, ‘তোর আইডিয়াটা খুব কাজে দিয়েছে রে রুবু। তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। পারলে তোদের ছাদেও একটি পাখিপল্লী গড়ে তোল। তোরাও পাখিদের পড়শি হয়ে যা।’
ষষ্ঠ শ্রেণি, ইউরিয়া সার কারখানা কলেজ পলাশ, নরসিংদী