× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এই সময়ে ঝরনাবিলাস

নাকিব নিজাম

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:২৪ এএম

বিলাইছড়িতে রয়েছে মনোমুগ্ধকর ঝরনা

বিলাইছড়িতে রয়েছে মনোমুগ্ধকর ঝরনা

কাপ্তাই থেকে আমরা ট্রলার নিয়ে বিলাইছড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি ৮টা ৪৫ মিনিটে। ট্রলার ছাড়ার পর থেকেই পুরোটা পথ মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে ভরা। 

প্রথম রাত ও দিন  ঢাকার গাবতলী থেকে আমরা যাত্রা শুরু করি রাত ১১টার বাসে। কাপ্তাই পৌঁছাই সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। নাশতা করে তিন দিনের জন্য একটা ট্রলার রিজার্ভ করি ১২ হাজার টাকায়। সাধারণত দুই দিনের জন্য ছয়-সাত হাজার নিলেও আমাদের তৃতীয় দিন পথের দূরত্ব বেশি হওয়ায় ভাড়াও বেশি দিতে হয়।

কাপ্তাই থেকে আমরা ট্রলার নিয়ে বিলাইছড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি ৮টা ৪৫ মিনিটে। ট্রলার ছাড়ার পর থেকেই পুরোটা পথ মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে ভরা। অসাধারণ এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ১.৫ ঘণ্টা পরে পৌঁছে যাই গাছকাটা আর্মি ক্যাম্পে। বিলাইছড়ি ঢুকতে হলে এখানে প্রতি সদস্যের এক কপি করে জাতীয় পরিচয়পত্রের/জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি দিতে হবে। আর্মি ক্যাম্প থেকে বিলাইছড়ি যেতে ৩০ মিনিট লাগে। ১১টায় আমরা বিলাইছড়ি গিয়ে পৌঁছাই।

বিলাইছড়ি পৌঁছে স্মৃতিময় বোর্ডিংয়ে দুই দিনের জন্য দুটি রুম নিই। মোট ভাড়া চার হাজার টাকা। রুমে এসে ব্যাগ রেখে আবার ট্রলার নিয়ে রওনা হই বাঙ্গালকাটার উদ্দেশে। ৩০ মিনিট পরে বাঙ্গালকাটা পৌঁছে গাইড নিয়ে নিই ৭০০ টাকায়। বাঙ্গালকাটা থেকে মুপ্পোছড়া পর্যন্ত সময় লাগে ১ ঘণ্টা। টিমের হাঁটার গতির ওপর নির্ভর করে ১-১.৫ ঘণ্টা লাগতে পারে। শুরুর দিকে সবটাই সুন্দর ঝিরি পথ। শেষে কিছুটা পাহাড়ে চড়তে হয়। মুপ্পোছড়ায় গোসল করে প্রায় ৪৫ মিনিট কাটিয়ে চলে আসি নকাটা ঝরনা দেখতে। নকাটা ঝরনা মুপ্পোছড়ার পথেই। তাই এর জন্য সামান্য একটু বাড়তি হাঁটলেই হয়। নকাটায় আবার আধ ঘণ্টা ভিজে ফিরতি পথ ধরি। বিলাইছড়ি ফিরতে বিকাল হয়ে যায়। বিকালটা ট্রলারের ছাদে বসে উনো (তাস) খেলে কাটিয়ে দিই।

দ্বিতীয় দিন : এই দিন আমাদের গন্তব্য ধূপপানি ঝরনা। এই দিনই কাপ্তাই ফিরতে চাইলে ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে বা ৬টার মধ্যে রওনা করতে হবে। তবে আমাদের তাড়া না থাকায় আমরা একটু দেরি করেই বের হই। সকালের নাশতার অর্ডার আগেই দেওয়া ছিল। প্যাকেটের খাবার ট্রলারের ছাদে বসে খেয়ে নিই। উলুছড়ি যাওয়ার পথে দুটি আর্মি চেকপোস্টে এন্ট্রি করে যেতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে এ চেকপোস্ট অতিক্রম করে ফিরে আসতে হয়।

বিলাইছড়ি থেকে উলুছড়ি পর্যন্ত যেতে প্রায় ২.৫ ঘণ্টা লাগে ট্রলারে। উলুছড়ি পৌঁছে ৮০০ টাকায় একজন গাইড নিয়ে নিই। এখান থেকে ধূপপানির উদ্দেশে হাঁটা শুরু। পথের পুরোটাই অসাধারণ সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। মাঝারি একটা পাহাড় চড়তে হয়। বাকিটা ঝিরি পথ। ঝরনার কাছাকাছি গিয়ে খাড়া একটা ঢাল বেয়ে নামতে হয়। তবে দড়ি বাঁধা থাকায় বেশ সুবিধা হয়। উলুছড়ি থেকে ধূপপানি পর্যন্ত আসতে ১.৫-২ ঘণ্টা লাগে। ধূপপানি ঝরনার সবছেয়ে উপভোগ্য বিষয় ঝরনার নিচে থাকা গুহাটা। এখানে বসে ঝরনা  উপভোগ করার অনুভূতি শব্দে প্রকাশ সম্ভব না। আমরা ঝরনায় ১.৫ ঘণ্টা সময় কাটিয়ে ফিরতি পথ ধরি। উলুছড়ি পৌঁছে আবার ট্রলারে করে বিলাইছড়ি ফিরে আসি। এসে বিকাল সন্ধ্যাটা ঘোরাঘুরি করেই কাটাই।

তৃতীয় দিনÑ ভোরে ঘুম থেকে উঠে আগে থেকে অর্ডার করা সকালের নাশতা নিয়ে রওনা হই গাছকাটা ঝরনার উদ্দেশে। বিলাইছড়ি থেকে ট্রলারে ৪৫ মিনিটের মতো লাগে। এরপর শুরু হয় হাঁটা পথ। পথ প্রায় পুরোটাই সমতলে হওয়ায় কষ্ট নেই বললেই চলে, তবে কাদায় কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়। শেষে ছোট একটা পাহাড় পাড়ি দিয়ে আর ১৫ মিনিট ঝিরি পথে হেঁটে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটে পৌঁছাই গাছকাটা ঝরনায়। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ফিরে আসি ট্রলারে।

এখান থেকে ট্রলার নিয়ে রওনা হই শুভলং ঝরনার উদ্দেশে। সময় লাগে ৩.৫ ঘণ্টার মতো। বৃষ্টি নামায় এই ট্রলার জার্নিটি ছিল খুবই উপভোগ্য। শুভলংয়ের আগে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার অর্ডার করে যাই। এটি বৃহত্তর রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলাধীন ১নং শুভলং ইউনিয়নের চিলারডাক নামক স্থানে কাপ্তাই হ্রদের কোলঘেঁষে কর্ণফুলী নদীর অববাহিকায় অবস্থিত জলরাশির ঝরনা । নৌপথে শুভলং বাজার যাওয়ার আগে এই ঝরনাটির দেখা মিলে। রাঙামাটি সদর থেকে শুভলং ঝরনার দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। শুকনো মৌসুমে শুভলং ঝরনায় খুব সামান্য পরিমাণে পানি থাকে। তবে তীব্র খরা মৌসুমে ঝরনার পানি একেবারেই শুকিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে শুভলং ঝরনার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে কাপ্তাই হ্রদের জলে গিয়ে মিশে যায়। এখানে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে।

শুভলং থেকে ফিরে সেই রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নিই। খাবার খেয়ে ট্রলার নিয়ে চলে আসি রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার। এখান থেকে ঢাকার বাসের টিকিট কেটে নিই। ৮টার বাসে রওনা দিয়ে ভোর ৪টায় ঢাকায় পৌঁছাই।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য-

১. বিলাইছড়ির এসব ঝরনা ঘুরতে হলে অবশ্যই চার কপি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিতে হবে।

২. আর্মি ক্যাম্পের ঝামেলায় পড়তে না চাইলে সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রথম দিন: ঢাকা-কাপ্তাই-বিলাইছড়ি-বাঙ্গালকাটা-মুপ্পোছড়া-নকাটা-বাঙ্গালকাটা-বিলাইছড়ি।

দ্বিতীয় দিন: বিলাইছড়ি-উলুছড়ি-ধূপপানি-উলুছড়ি-বিলাইছড়ি।

তৃতীয় দিন: বিলাইছড়ি-গাছকাটা-শুভলং-রাঙামাটি-ঢাকা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা