প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:৩৫ এএম
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:৫৮ এএম
অনুষ্ঠানে বক্তব্যে দেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
দেশের হাওরাঞ্চলে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাছের উৎপাদন কমছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরের মানুষের জীবন ও জীবিকা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। ফলে জলবায়ু তহবিলে হাওরবাসী ন্যায্য হিস্যা চায়।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে 'পরিবেশ বান্ধব কৃষি ও জলবায়ু সুবিচার দাবিতে পলিসি এডভোকেসি' শিরোনামে অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমাদের হাতে সময় খুব কম। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এখনই আমাদেরকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের মত দেশ বেশি গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন করে না। বেশি নির্গমন করে উন্নত দেশগুলো। তাই তাদেরকেই সবচেয়ে আগে এবং সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আসতে হবে।
একশনএইড বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা এই পলিসি ডায়ালগের আয়োজন করে। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক শওকত আলী মীর্জা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. বদরুল হাসান।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, নদীতে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে পরিবেশে আরও বিরুপ প্রভাব পড়বে। জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট করার জন্য মানুষই দায়ী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরে ঘন ঘন অকাল বন্যা হচ্ছে। হাওরের জমিগুলো একফসলি। একবার ফসল হানি ঘটলে মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকেনা। এখন পর্যটকরাও বর্জ্য ফেলে হাওরের পরিবেশ নষ্ট করছেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, আমরা পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে খুব কম মানুষ পাচ্ছি। তরুণদেরকে পরিবেশ রক্ষায় আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মীর্জা শওকত আলী বলেন, দেশের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর দেশে ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে। তন্মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওর ও হাকালুকির হাওর অন্যতম। উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নানা প্রশ্ন করেন। অতিথিবৃন্দ এসব প্রশ্নের উত্তর দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আহমেদ রেজার উক্ত অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র মোসাহিদ আলী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এহসানুল হক সুমন, চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের আতাউর রহমান, ছদরুল হাসান প্রমুখ প্রশ্ন করেন।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী কিশোরগঞ্জে হাওরের মাঝ বরাবর সড়ক নির্মাণের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিথিরা বলেন, এই সড়ক নির্মাণের পূর্বে ভুল সমীক্ষা হয়েছিল। এই ভুলের কারণে হাওর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. খলীকুজ্জমান আহমদ জানান হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনেক গাফিলতি করা হয়। এসব অনিয়ম রোধে আমাদের সৎ ও দক্ষ মানুষকে দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন আমাদের নেতৃত্ব ঠিক, আইন ঠিক শুধু বাস্তবায়নটা ঠিক করতে। এজন্য নতুন প্রজন্ম কে দক্ষ ও মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, হাওরে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে মাছের উৎপাদন কমছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরের মানুষের জীবন ও জীবিকা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। তাই জলবায়ু ফান্ডে হাওরবাসী ন্যায্য হিস্যা চায়। তিনি প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর একশত বিলিয়ন ডলার অর্থ ছাড়ের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।