শুনতে কী পাও
মশিউর রহমান রাহাত, পিরোজপুর
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:২৫ পিএম
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:২৬ পিএম
সন্ধ্যা নদীর পার দখল করে গড়ে উঠেছে ডকইয়ার্ড
পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার সন্ধ্যা নদীটি নদীখেকোদের কবলে। নদীর পাড় ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে জাহাজ নির্মাণের ডকইয়ার্ড। ডকইয়ার্ড নির্মাণের আগে নদীপাড়ের প্রায় ১৫ স্থায়ী বাসিন্দা পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে তাদের জড়ানো হয় মিথ্যা মামলায়।
এ ছাড়া উপজেলার জগৎপট্টি, ইন্দেরহাট, মিয়ারহাট, বরচাকাঠি, জগন্নাথকাঠি বন্দরসহ বেশকিছু এলাকাজুড়ে অবাধে নদী দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, বহুতল ভবন, কাঠের গোলা, হোটেল-রেস্তোরাঁ প্রভৃতি স্থাপনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে আছে ছালেহিয়া ডকইয়ার্ড। পটুয়াখালীর গফ্ফার মৃধা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় গড়ে তুলেছেন এ ডকইয়ার্ড। শুধু ডকইয়ার্ড নয়, নদীর তীরে গড়ে তোলা হয়েছে তিন তলা ভবন। এ ছাড়া ৫০টির অধিক ষ্টলের একটি বিশাল মার্কেট তৈরি করেছেন। জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত তার এ সাম্রাজ্য বিস্তৃতি লাভ করেছে ব্যাপক হারে। অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও এসবের তোয়াক্কা করেননি গফ্ফার মৃধা। বরং এ পর্যন্ত তার ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নদীর সীমা ভরাটের মাত্রা ছড়িয়েছে কয়েক গুণ।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা নদীখেকোদের কথা না মানলে অদৃশ্য ইশারায় দ্রুত অন্যত্র বদলি হয়ে যান। আর কিছুসংখ্যক এদের সঙ্গে নিজেদেরও মানিয়ে নেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী দেলোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘গফফার মৃধা নদীতীরবর্তী আমার পৈতৃক সম্পত্তির প্রায় ৬ বিঘা দখল করেছে। প্রতিবাদ করলে ৫-৬টি মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। জায়গা দখলের মামলায় আদালত থেকে পক্ষে রায় পেলেও তার পরেও জায়গা উদ্ধার করতে পারিনি। এভাবে আশপাশের অন্য আট-দশ জনের জায়গা দখল করার পর ১৯৯৫ সালে শুরু করেছে নদী দখল প্রক্রিয়া। এরপর নদী ভরাট করে গড়ে তুলেছে বিশাল ডকইয়ার্ড। এমনকি একটি খালও তারা দখল করে রেখেছে। যেখান থেকে কোনো নৌযান চলাচল করতে দেওয়া হয় না।’
এ ব্যাপারে আরেকজন ভুক্তভোগী আবদুল হক তালুকদারের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, ‘কতা কইয়া আর হরমু কী। হেগো অনেক পাওয়ার, অনেক শক্তি। আমাগো নদীর পাড়ের জায়গা দখল করে গফফার মৃধা তিন তলা বাড়ি ও অফিস করছে। তাগো বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খোলতে চায় না।’
শুধু ডকইয়ার্ড নয়, ইন্দেরহাট শাখা নদীর মধ্যে স্থাপনা নির্মাণের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। টং দোকানসহ কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে নদীর বুকেই গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা।
আবদুল গফ্ফার মৃধা সবকিছু অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার নামে কোনো জায়গাজমি নেছারাবাদে নাই। আমি যে বাসায় থাকি সেটা শর্ষিণা দরবার শরিফের লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের। ৬ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে থাকি। এ ছাড়া বছরে দেড় লাখ টাকায় ছালেহিয়া ডকইয়ার্ডের ভাড়া পরিশোধ করি দরবারের লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের কাছে। ৫০টি দোকানের ভাড়া লিল্লাহ বোর্ডিং আদায় করে।’
এ ব্যাপারে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার বলেন, ‘আমি নদী দখলের ব্যাপারে অবগত আছি। সন্ধ্যা নদীর দখলকৃত এলাকা চিহ্নিত ও তালিকা করা হয়েছে। তালিকাটি নদীরক্ষা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।’
পিরোজপুরের নেছারাবাদ মূলত বিসিক শিল্প এলাকা। এ এলাকা পেয়ারা, নার্সারি শিল্প ও নৌকার হাটের জন্য বিখ্যাত। চাষাবাদ ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় সন্ধ্যা নদীর ভূমিকা ব্যাপক। কিন্তু দিনের পর দিন মানুষরূপী দখলদারদের কারণে সন্ধ্যা হারাতে বসেছে অস্তিত্ব।