জীবন কথা
জাকির আজাদ
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৫ এএম
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫৬ এএম
বছরের নির্দিষ্ট সময়ে জলাশয় থেকে শাপলা তোলেন তারা
ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়ার মহাসড়কে এলিয়টগঞ্জ পেরিয়ে চোখে পড়বে একটি নোংরা পথ বাঁক নিয়েছে, যেখানে গৌরীপুর সেতুর সাইনবোর্ড রয়েছে।
ব্রিজ থেকে এগিয়ে গেলে থানা হেডকোয়ার্টার আর তার পুব দিকে আসমানিয়া মার্কেট। বাজারের দিক থেকে নেমে যাওয়া নোংরা পথ ধরে জিয়ারকান্দি গ্রামে গিয়ে শেষ। গ্রামে প্রবেশের বিন্দুতে একটি ছোট জলাশয়। দুটি নৌকা ধীরে ধীরে ভেসে যাচ্ছিল। চোখ পড়ল এক মধ্যবয়সি মহিলা দ্রুত সাঁতার কাটছেন।
ভদ্রমহিলা দ্রুত আঙুলের সাহায্যে শাপলা তুলছিলেন। ততক্ষণে একটি নৌকা ফুলে ভরে গেছে। নৌকাটি ধীরে ধীরে তীরের দিকে আসে। যে ভদ্রমহিলা শাপলা তুলছিলেন তিনি ও তার সঙ্গী ফুল সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, ‘আমরা এগুলো বিক্রি করব। বিকালে ট্রাক আসবে।’ তাদের সঙ্গে আরও অনেক কথা হলো।
যিনি শাপলা তুলছিলেন তার নাম আসিয়া। তারা বর্ষার তিন মাসই কাজ করেন। আসিয়া ও সুরাইয়া গৃহবধূ। গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি ব্যস্ত থাকেন শাপলা তোলায়। আসিয়ার পরনে একটি নতুন শাড়ি, যা তিনি শাপলা বিক্রি করে কিনেছেন। নৌকা ভাড়া দিতে হয় ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ টাকা। নৌকার ভাড়া মিটিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ টাকা আয় করেন তারা। প্রতি বান্ডিল শাপলা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
আসিয়া, সুরাইয়া, মাসুমা, হালিমা এবং অন্য ১০ থেকে ১৫ জন মহিলা সন্তানদের সঙ্গে পুকুর ও জলাশয়ে কাজ করে উপার্জন করেন। আসিয়া এবং তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, শাপলা তুলে মুঠো ভরে নিয়ে যাচ্ছেন, মনে হচ্ছিল রূপকথার চরিত্র। কোনো দুঃখ তাদের জীবনে বাধা দিতে পারে না। আসিয়া বললেন, ‘ছয় বছর ধরে শাপলা তুলছি। বর্তমানে আশপাশের বাড়ির স্ত্রী-কন্যারাও এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। যদিও স্বল্প সময়ের কাজ, আমরা এটির জন্য অনেক আগ্রহ ও প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করি।’
কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত এই এলাকা যেখানে সবচেয়ে বেশি শাপলা জন্মে, তবে এখানকার মানুষ ফুল এবং তাদের ভেষজগুলোর বাণিজ্যিক মূল্য খুব কমই উপলব্ধি করে।