× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সতেজ থাকুক হাত-পা

শাহিনা নদী

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০৫ পিএম

আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০৯ পিএম

মডেল : বৃষ্টি; মেকআপ : রাজিয়া’স মেকওভার; ছবি : ফারহান ফয়সাল

মডেল : বৃষ্টি; মেকআপ : রাজিয়া’স মেকওভার; ছবি : ফারহান ফয়সাল

সৌন্দর্যবর্ধনে অন্য সব অঙ্গের মতোই হাত-পা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো হাত-পা সতেজ ও সুন্দর রাখতে প্রয়োজন চর্চা। খুব বেশি কিছু নয়, একটু সচেতন হলে আর সামান্য কিছু চর্চা করলেই হাত-পা সুন্দর রাখা সম্ভব

রূপচর্চা এখন কেবল শুধু মুখের ওপর সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে রূপচর্চার অংশ হিসেবে হাতের নখ থেকে শুরু করে পায়ের নখ, এমনকি মাথার চুল পর্যন্ত সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত। প্রাত্যহিক জীবনে নিয়মিত মুখের যত্ন নেওয়া হলেও হাত-পায়ের যত্নের ব্যাপারে আমরা ভীষণ উদাসীন। অথচ সৌন্দর্যবর্ধনে অন্য সব অঙ্গের পাশাপাশি হাত-পাও কিন্তু সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই হাত-পায়ের যত্নে পেডিকিউর-ম্যানিকিউর অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সাধারণত হাত-পায়ের চামড়া ও নখের ময়লা, মৃত কোষ দূর এবং ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতেই পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর করা হয়। তা ছাড়া এর মাধ্যমে হাতে বা পায়ে গন্ধ হওয়ার প্রবণতা থাকলে তা-ও কমে আসে।

প্রকারভেদ

হাত-পায়ের সমস্যার ওপর ভিত্তি করে পারলারে পাঁচ ধরনের পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর হয়ে থাকে। যেমন নরমাল পেডি-ম্যানি, ফ্রেঞ্চ পেডি-ম্যানি, প্যারাফিন পেডি-ম্যানি, ক্রিস্টাল পেডি-ম্যানি ও ডিল্যাক্স পেডি-ম্যানি।

প্রতিটি পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর করতে পেরোতে হয় নানা ধাপ। তবে যেকোনোটি করতেই সাধারণত পাঁচ থেকে ছয়টি ধাপ পেরোতে হয়; যা হাত ও পায়ের ট্যান দূর করতে, ত্বক সতেজ করতে খুব কার্যকর।

প্রথম ধাপ : পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর করার ক্ষেত্রে প্রথমেই পায়ে ও হাতে পলিশ দেওয়া থাকলে তা রিমুভ করা হয়।

দ্বিতীয় ধাপ : এ পর্যায়ে একটি বড় পাত্রে পরিমাণমতো উষ্ণ গরম পানি এবং তাতে লবণ ও একটু শ্যাম্পু মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট হাত ও পা ভিজিয়ে রাখা হয়।

তৃতীয় ধাপ : পানি থেকে হাত-পা তোলার পর কিউটিকল ক্লিন করতে হয়। মূলত এ কিউটিকল হলো আঙুলের যে অংশ থেকে নখের শুরু হয় সেই অংশটি। এরপর নেইল কাটিং ও ফাইলিং করে স্ক্রাবিং করতে হবে। অনেকের পায়ের নিচে মরা চামড়া বেশি থাকে, সে ক্ষেত্রে প্যাডি স্টোন দ্বারা পায়ের তলা ভালো করে ঘষে নেওয়া হয়।

চতুর্থ ধাপ : স্ক্রাবিং হয়ে গেলে হাত ও পা ভালোভাবে সুতি কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া হয় এবং ম্যাসাজ ক্রিম দিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাসাজ করা হয়।

পঞ্চম ধাপ : ম্যাসাজের পরবর্তী ধাপ হাত-পায়ে মাস্ক লাগানো। এ ক্ষেত্রেও মাস্ক লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখা হয়। মাস্ক ওঠানোর সময় ভালো করে ম্যাসাজ করে ক্লিন করে নেওয়া হয়।

ষষ্ঠ ধাপ : পেডিকিউর ও ম্যানিকিউরের মূল ধাপগুলোর কাজ শেষে নেইল বাফারিং করে ময়েশ্চারাইজার লাগানো হয়। এ প্রক্রিয়ায় ময়েশ্চারাইজার লাগানো আবশ্যক। তাহলে ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ দেখাবে।


ত্বকভেদে যত্ন

সাধারণত ত্বক তিন ধরনের হয়। স্বাভাবিক, তৈলাক্ত, শুষ্ক। পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর এ তিন ধরনের ত্বকের জন্যই খুব উপকারী। স্বাভাবিক ত্বকের ক্ষেত্রে এক মাস অন্তর অন্তর পেডিকিউর-ম্যানিকিউর করাটা ভালো। তবে শীতের সময় অনেকেরই পা ফাটার সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে ১৫ দিন পর পরও করা যেতে পারে। অন্যদিকে শুষ্ক ত্বকে মৃত কোষ ও চামড়া বেশি ফেটে যাওয়ার সমস্যা থাকে। তাই এমন ত্বকে সপ্তাহে একবার ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করা উচিত। এ ছাড়া তৈলাক্ত ত্বকে ১০ দিন পরপর পেডি-ম্যানি করা যাবে।


ঋতুভেদে যত্ন

পেডিকিউর-ম্যানিকিউর যেহেতু ক্লিনিং ও রিল্যাক্সিংয়ের কাজ করে, সেক্ষেত্রে যেকোনো পেডিকিউর-ম্যানিকিউর সারা বছরই স্কিনের জন্য খুবই উপকারী। তবে যাদের খুব ঘাম হয় তাদের জন্য বার্থ সল্ট ও ক্রিস্টাল পেডিকিউর ভীষণ উপকারী।  এ ছাড়া গরমের সময় ক্রিস্টাল ও ট্যান রিমুভিং পেডিকিউর-ম্যানিকিউর উপযুক্ত। অন্যদিকে শীতের সময় প্যারাফিন পেডিকিউর-ম্যানিকিউর খুবই আরামদায়ক।


উপকারিতা ও কার্যকারিতা

যেকোনো পেডিকিউর ও ম্যানিকিউর করার প্রথম কারণ হলো রিফ্রেশমেন্ট রিল্যাক্সিং অ্যান্ড ক্লিনিং। নরমাল পদ্ধতিতে পেডিকিউর অ্যান্ড ম্যানিকিউরের মাধ্যমে হাত-পায়ের ত্বক ক্লিনিং অ্যান্ড রিল্যাক্সিং করা হয়। প্যারাফিন পদ্ধতি রিল্যাক্সিংয়ের পাশাপাশি ত্বক মসৃণ করার জন্য খুবই কার্যকর। ট্যান রিমুভিং বা ফ্রেঞ্চ পদ্ধতির প্রধান কাজ স্কিনের আন ইভেন টোন, ইভেন ও ট্যান রিমুভ করা। অন্যদিকে ক্রিস্টাল পদ্ধতি পায়ের ব্যথা দূর এবং স্কিন সুন্দর করার জন্য খুবই কার্যকর। তবে উপরোক্ত সব পেডিকিউর-ম্যানিকিউরের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় ডিল্যাক্স। কারণ ডিল্যাক্সের ম্যানিকিউর-পেডিকিউর মূলত প্যারাফিন দিয়ে করা হয়। যাদের পায়ে খুব বেশি ব্যথা অনুভব হয় এবং পায়ের তালু অনেক খসখসে তাদের জন্য এটি খুবই উপকার। অন্য সব পেডিকিউর-ম্যানিকিউর থেকে এটি কিছুটা ব্যতিক্রম প্রক্রিয়ায় করা হয়। স্ক্রাবিং করে গরম পানি দিয়ে হাত-পা ভালোভাবে মুছে নেওয়ার পর হালকা গরম অবস্থায় হাতে পায়ে প্যারাফিন ব্যবহার করে মুড়িয়ে রাখা হয়। ফলস্বরূপ এ প্রক্রিয়ায় হাত-পায়ের পেশিগুলো সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।


ঘরে বসে যেভাবে করবেন

দৈনন্দিন ব্যস্ততার কারণে সবার পক্ষে পারলারে গিয়ে সুন্দরভাবে পেডি-ম্যানি করার সুযোগ হয় না। সে ক্ষেত্রে এর ধাপগুলো জানা থাকলে বাড়িতেও করা যেতে পারে। কিন্তু রিল্যাক্সিংয়ের ম্যাসাজটা করতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

হাত-পায়ের রুক্ষতা ও কালচে ভাব দূর করে উজ্জ্বলতা ফুটিয়ে তুলতে পেডিকিউর-ম্যানিকিউর খুবই কার্যকর প্রক্রিয়া। এ ছাড়া নিয়মিত পেডিকিউর-ম্যানিকিউর করলে হাত ও পা মসৃণ হয়। তাই প্রত্যেকের উচিত মাসে অন্তত একবার ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করা। অনেকেই পারলারে গিয়ে ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করেন। তবে যাদের পারলারে যাওয়ার সুযোগ কম তারা বাড়িতে বসেও ঘরোয়া পদ্ধতিতে হাত-পায়ের যত্ন নিতে পারেন
রাজিয়া সুলতানা 
স্বত্বাধিকারী, রাজিয়া মেকওভার


প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

ঘরে বসে ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করার ক্ষেত্রে বিশেষ ব্রাশ কিনে নিতে হবে। তবে আলাদা ব্রাশ কিনতে না চাইলে ঘরেই ব্যবহৃত নতুন টুথব্রাশটি কাজে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া বাফার, নখ পরিষ্কারের যন্ত্রাদি (বিশেষ টুল) অবশ্যই কিনতে হবে।


ঘরোয়াভাবে পরিচর্যা পদ্ধতি

একটি বালতিতে পরিমাণমতো উষ্ণ গরম পানি নিয়ে তাতে ভালোভাবে শ্যাম্পু গুলিয়ে নিতে হবে। এরপর এ দ্রবণে পায়ের গোড়ালি থেকে যতটুকু সম্ভব ওপরে পা ডুবিয়ে রাখুন। চাইলে এতে যোগ করতে পারেন খানিকটা গ্লিসারিন, গোলাপের পাপড়ি, লেবু ও স্যাভলন। ত্বকের ধরন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এই ডুবিয়ে রাখার সময়টা ৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। অতিসংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে ৫-৭ মিনিট এবং ত্বক খুব বেশি রুক্ষ হলে ৩০-৪০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর একটি ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে ত্বক পরিষ্কার করে নেলকাটার দিয়ে নখ কেটে নিতে হবে। নখের চারপাশের কোণে কোথাও ত্বকের কোনো অংশ বেড়ে থাকলে বা ত্বকের মৃত অংশ থাকলে সেটা সাবধানে নখ পরিষ্কার করার বিশেষ টুলের সাহায্যে সরিয়ে ফেলুন। এবার স্ক্রাবিংয়ের পালা। স্ক্রাবিংয়ের জন্য ১ চা-চামচ টক দই আর ১ চা-চামচ ওটস মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিতে পারেন। স্ক্রাবিং শেষে হালকা কুসুমগরম পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত-পা ধুয়ে নিন। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগান। এ পর্যায়ে পেডিকিউর-ম্যানিকিউরের মূল ধাপগুলো শেষ। তবে কেউ যদি নখ আরও উজ্জ্বল ও চকচক করতে আগ্রহী থাকেন, সে ক্ষেত্রে বাফার দিয়ে নখ ঘষে নিন।


সতর্কতা

পেডিকিউর-ম্যানিকিউর ঘরে বসে বা পারলারে যেখানেই করা হোক না কেন এ ক্ষেত্রে বেশকিছু ধাপে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন-

  • পেডিকিউর-ম্যানিকিউর করার সময় কিউটিকলের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। শুষ্ক অবস্থায় টেনে তোলা যাবে না। কারণ এতে রক্তপাত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে এবং একই সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা তো রয়েছেই।
  • পায়ের পাতা অথবা গোড়ালিতে একই জায়গায় বারবার ঘর্ষণের ফলে ক্যালাস হয়। এটি মূলত খালি পায়ে বেশি হাঁটলে হতে পারে। এ ক্যালাসগুলো বেশি বড় হলে ব্যথা অনুভব হবে। তাই ক্যালাস রিমুভের ক্ষেত্রে ঝামা পাথর অথবা এক্সফলিয়েটিং স্ক্রাব দিয়ে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে হবে।
  • নিয়মিত নেলপলিশ ব্যবহার করলে নখ হলদেটে হয়ে যায়। এ ছাড়া ফাঙ্গাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়ে নখ ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে এবং নখ মোটা হয়ে যায়। এরকমটি ঘটলে নেলপলিশ দিয়ে নখ না ঢেকে বরং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • পারলারে পেডিকিউর-ম্যানিকিউর করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেবেন, ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো হিট স্টেরাইজড কি না অথবা কোনো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল-এর মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়েছে কি না।
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা