নট-এ- বোরিং প্রতিযোগিতায় অনন্য অর্জন
আসমাউল হুসনা
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০০ পিএম
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হয় টিম বোরড টানেলারস
প্রতিবছর সারা বিশ্বের প্রকৌশলীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় নট-এ- বোরিং প্রতিযোগিতা। বিশ্বের বড় বড় দলের সঙ্গে লড়াই করে চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দল বোরড টানেলারস
‘আমার সীমার বাঁধন টুটে/দশদিকেতে পড়ব লুটে/পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে/বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।’ কবি কাজী নজরুলের লেখা ‘সংকল্প’ কবিতা বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পর্যায়ে একের পর এক সফলতা অর্জন করছে তারা। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন দ্য বোরিং কোম্পানি। লুপ, হাইপার লুপসহ দ্রুত, নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবহন, ব্যয় হ্রাস, মালবাহী টানেল তৈরি, ট্রাফিক সমাধান, দ্রুত পয়েন্ট টু পয়েন্ট পরিবহনব্যবস্থার লক্ষ্যে টানেল অবকাঠামো তৈরি করাই এ প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।
প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটি প্রকৌশলীদের নিয়ে নট-এ-বোরিং কমপিটিশন নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ বছর নট-এ-বোরিং কমপিটিশন-২০২৪-এর সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় এবং চূড়ান্ত পর্বের জন্য প্রতিযোগী নির্বাচন করে। বিগত বছরগুলোয় জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি মিউনিখ, এমআইটি, ভার্জিনিয়া টেক, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের নিজস্ব টানেল বোরিং মেশিনের নকশা ও ম্যানুফ্যাকচারিং করে চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়। এ বছর নট-এ-বোরিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের একটি দল।
দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী নিয়ে গঠিত হয় বোরড টানেলারস। বোরড টানেলার দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শায়েখ মোহাম্মাদ শিথিল (অ্যালামনাই, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া), দলটির কো-লিডার ছিলেন এম শাহরিয়ার ইকবাল (যন্ত্রকৌশল ১৭, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)। দলটির বোর্ড সদস্যরা হলেন শিবলি নোমান (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া), ইমরান খান (পুরকৌশল ১৯, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়), তালহা জুবায়ের (নটর ডেম কলেজ), ফাহিন উদ্দিন ইনাম (অ্যালামনাই ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং-১৭, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাস্ট্রপ, টেক্সাসে দ্য বোরিং কোম্পানির টানেল বোরিং সাইটে দলগুলোকে একত্রে তাদের নকশাকৃত বোরিং মেশিন দিয়ে ড্রিল করতে হয়।
লক্ষ্য ছিল ৩০ মিটার লম্বা টানেল। ব্যাপকহারে সাবমিশন থাকায় প্রতি ধাপেই অনেক দলকে বাদ দেওয়া হয়। দলটি টানেল বোরিং মেশিনের যান্ত্রিক নকশা, পদ্ধতি বিশ্লেষণ, প্রটোপাইপ মডেল তৈরি করে দুটি বাছাই পর্ব অতিক্রম করে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত হয়। প্রতিযোগিতার মূল চ্যালেঞ্জ হলো সবচেয়ে কম নির্মাণ খরচে টানেলিং সমাধান ও টানেলের গতি বৃদ্ধি। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৪০০ দলের মধ্যে বাংলাদেশ বোরড টানেলারস একটি। টানেল হলো মূলত একটি ভূগর্ভস্থ গিরিপথ যা আশপাশের মাটি বা পাথরের মধ্য দিয়ে খনন করা হয়। প্রবেশদ্বার ও প্রস্থান বাদে সম্পূর্ণ অংশই ঘেরা থাকে। এ টানেল খনন করতে প্রয়োজন হয় বোরিং মেশিন। আর টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র, যা বিভিন্ন মাটি ও শিলা স্তরের মধ্যে বৃত্তাকার প্রস্থচ্ছেদের সঙ্গে সুড়ঙ্গ খনন করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো মাইক্রো টানেলিংয়ের জন্যও ব্যবহৃত হতে পারে। এ যন্ত্রগুলোকে শক্ত শিলা থেকে বালু এবং যেকোনো কিছুর মাধ্যমে সুড়ঙ্গ খনন করার জন্য নকশা করা যেতে পারে। বোরড টানেলারসরা ইতোমধ্যে তাদের বোরিং মেশিন তৈরি শুরু করছেন। মেশিনের মোটর ও হাইড্রোলিক সিস্টেমগুলোর সর্বোত্তম কর্মক্ষমতার জন্য এটি বৈদ্যুতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে।
বোরড টানেলারস দলটির নেতা শায়েখ মোহাম্মদ শিথিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগিতাটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। কেননা একটি বোরিং মেশিন তৈরি করতে যে প্রযুক্তি ও গবেষণা প্রয়োজন তা আমাদের দেশে খুব একটা সহজলভ্য নয়। দলগত প্রচেষ্টা ও ইচ্ছাশক্তির জোরে নামমাত্র ফান্ডিং থাকার পরও বিশ্বের বড় বড় দলের সঙ্গে লড়াই করে
চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচিত হয়েছে আমাদের দল। বোরড টানেলারস বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। আমাদের লক্ষ্য হলো উদ্ভাবনী মাইক্রো-টানেল বোরিং মেশিন ডিজাইন ও তৈরি করা। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাইরে দেশগুলো কাছে বাংলাদেশের প্রকৌশলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করা।