হৈমন্তি শুক্লা
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩১ পিএম
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩২ পিএম
আসিফের শারীরিক সমস্যা তার রক্তদানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি
ময়মনসিংহের আসিফ আহমেদ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পরও তিনি একজন রক্তদাতা। এ পর্যন্ত রক্ত দিয়েছেন ছয়বার। আসিফ জানান, শারীরিক কারণে পূর্ণব্যাগ রক্ত দিতে পারেন না। শিশুদের কম রক্ত দরকার। তাই শিশু রোগীদের রক্ত দিয়ে দেন তিনি। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে আসিফ বলেন, ‘আমি জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ফুলব্যাগ রক্ত দিতে পারি না। অল্প পরিমাণ রক্ত দিই। কারণ শিশুদের অল্প পরিমাণ রক্ত লাগে। এই যেমন ১০০ মিলি, ৫০ মিলি। সব সময় শিশু রোগী পাওয়া যায় না। যখন পাই তখন দিই।’
মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন- খবর পেলেই অস্থির হয়ে পড়েন আসিফ আহমেদ। অনলাইনে-অফলাইনে রক্ত জোগাড় করতে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। কত শত মানুষের জীবন বাঁচাতে যে রক্তদাতা জোগাড় করে দিয়েছেন, হিসাব নেই। তিনি বলেন, ‘যখন ফেসবুকে দেখতাম ভাইয়া-আপুরা রক্ত দিচ্ছে, সেসব ছবি পোস্ট করছে সেগুলো দেখেই আমি রক্ত দিতে অনুপ্রাণিত হই।’
তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে মুমূর্ষু রোগীদের রক্ত সংগ্রহ করে দিচ্ছেন। এর জন্য তিনি উৎসাহিত হয়েছিলেন ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ ও ব্যক্তির রক্তদানের পোস্ট দেখে। এরপর তিনি যুক্ত হন এমনই এক ফেসবুক গ্রুপ ‘রক্তদানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ’-এ।
যেখানে রক্তদানে প্রস্তুত ব্যক্তিরা জানান দেন নিজের রক্তের গ্রুপ ও অবস্থান। সেই গ্রুপেরই একজন মডারেটর আসিফ আহমেদ। বলেন, ‘আমাদের ফেসবুক গ্রুপ আছে। রক্তদানের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। সেখানে রক্তদাতারা নিজেই পোস্ট করে রোগী খোঁজেন। আমাদের গ্রুপে অনেক স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত আছেন। তারা সবাই চেষ্টা করেন সেই রক্তদাতাদের রোগী খুঁজে দেওয়ার জন্য। আবার অনেক রোগী আছেন এই গ্রুপের মাধ্যমেই রক্তদাতা খুঁজে নেন।
গ্রুপের মাধ্যমেই মরণোত্তর চক্ষুদানেও উৎসাহ করেন আসিফ। আসিফ বলেন, ‘অনলাইনে মরণোত্তর রক্তদানের জন্য উৎসাহিত করি। আমাদের সহযোগিতা করছে সন্ধানী চক্ষুদান সমিতি। আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষকে চক্ষুদানে সচেতন করা, উৎসাহিত করা।’
গেমিং বা অকারণে ফেসবুক ব্রাউজিং নয়, বরং মানুষের কল্যাণে প্রযুক্তিকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়ে ব্যবহার করেন এই তরুণ। সচেতনতামূলক পোস্টও করেন ফেসবুকে। গুগল ডেটাবেজে রক্তদাতার তালিকাও রাখেন আসিফ।
মানবিক কাজে শুরু থেকেই তার পাশে ছিল পরিবার। তবে আশপাশের অনেকেই এ নিয়ে কটূক্তি করেন। সেদিকে কান দেন না তিনি। বলেন, ‘আমার পরিবার সব সময আমাকে ভালো কাজে উৎসাহিত করেছে। আশপাশের অনেকে বলে, রক্ত নিয়ে কাজ করিস সারা দিন, রক্ত নিয়ে থাকিস...। তো তাদের কথা আমি সেভাবে শুনি না। আমি আমার মতো করে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করি। আমার যদি শারীরিক যোগ্যতা থাকত তাহলে আমি ফুলব্যাগ রক্ত দিতাম। কিন্তু আমি তা পারি না। যতটুকু পারি, তাতেই আমার খুব ভালো লাগে।’
আসিফ এখন তড়িৎ প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করছেন ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। তিনি জানান, পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কোনো পেশায় ঢুকবেন। তবে আজীবন মানুষের সেবায় কাজ করে যাবেন। মানুষ যেন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, দেবেন সেই অনুপ্রেরণা।