ঈশানা জাহান চৌধুরী
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩২ পিএম
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:১০ পিএম
অলংকরণ : মিথিলা ভৌমিক সপ্তম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
আমার বাবা পাখি পছন্দ করেন। একবার তার পাখি পোষার শখ হলো। তারপর আর কী, তিনি নিয়ে এলেন অনেকগুলো পাখির খাঁচা ও বিভিন্ন ধরনের পাখি। আমি এই পাখিগুলো দেখে ভীষণ খুশি হলাম। বাবা আর আমি পাখিগুলোকে খাবার খাওয়াতাম।
একদিন ভোরে উঠে পাখিগুলোকে খাবার দিতে গিয়ে বাবা দেখলেনÑ একটি খাঁচার দরজা খোলা এবং খাঁচার ভেতরের পাখি দুটি নেই। আমরা ভাবলাম পাখি দুটি বোধহয় চুরি হয়ে গেছে। এটা জেনে বাবা অন্যান্য খাঁচার দরজায় তালা লাগিয়ে দিলেন।
পরদিন ভোরে ঘটল এরচেয়েও করুণ ঘটনা। এবার অবশ্য পাখি চুরি হয়নি। তবে একটি খাঁচার ভেতর দুটি পাখির রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। বাবা আর আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। তখন আমার জাওয়াদ ভাইয়া বলল, ‘এটা নিঃসন্দেহে ওপর তলার মোটা বিড়ালের কাণ্ড! আমি গতরাতে বিড়ালটাকে এখানে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি।’
ভাইয়ার কথা শুনে আমার খুব রাগ হলো। আমি বাবাকে বললাম, ‘বাবা, তুমি ঐ দুষ্টু বিড়ালটাকে মেরে ফেল।’
পরদিন ভোরে আবারও একই দৃশ্য দেখা গেল। এবার আরেকটি খাঁচায় আরও দুটি পাখির মরদেহ পাওয়া গেল। এভাবে দুষ্টু বিড়ালটা অনেকগুলো পাখি মেরে ফেলল। বাবা, আমি ও ভাইয়া মিলে অনেক চেষ্টা করেও বিড়ালটাকে ধরতে পারলাম না। বিড়ালটা ছিল ভীষণ চালাক। আমরা ধরতে গেলেই সে কীভাবে যেন বুঝে ফেলত এবং আমাদের ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেত।
এবার বাবা ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি আম্মুকে বললেন, ‘আজ রাতে পাহারা দিয়ে ঐ খুনি বিড়ালকে ধরেই ছাড়ব।’
কিন্তু বাবা সারা রাত পাহারা দিয়ে যখনই একটু ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে আসেন, তখনই দুষ্টু বিড়ালটা তার কাজ শেষ করে চলে যায়। এভাবে কয়েক দিন চেষ্টা করার পরও বিড়ালটাকে ধরতে পারলেন না। তবে একদিন বাবা পাখির ছটফটানির শব্দ শুনে সতর্ক হয়ে গেলেন। তিনি চুপি চুপি হাতে একটি লাঠি নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখেন বিড়ালটা একটি খাঁচার দুটো পাখিকে ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। বাবা সঙ্গে সঙ্গে বিড়ালটি মারার জন্য ধাওয়া করলেন। কিন্তু তিনি মারতে তো পারলেনই না, উল্টো বারান্দায় রাখা পাখির খাঁচার তারের খোঁচায় বাবার পা অনেকখানি কেটে গেল। পা থেকে অনেক রক্তও বের হলো।
বাবার এবার খুব জেদ চেপে গেল। বারবার চেষ্টা করার পর একদিন একটি ফাঁদ তৈরি করে তিনি বিড়ালটাকে শেষমেশ ধরেই ফেললেন। বিড়ালটার ওপর প্রচণ্ড রাগ হলো। রাগের মাথায় বাবা যখন মারতে যাবেন, তখন ঘরের ভেতর থেকে আম্মু এসে প্রচণ্ড বাধা দিলেন। তিনি বললেন, ‘এটা একটা অবুঝ প্রাণী। এটাকে ছেড়ে দাও। আর সবগুলো পাখিকেও ছেড়ে দাও। সবাইকে তাদের নিজেদের মতো করে থাকতে দাও। এদেরও প্রাণ আছে। এদের মারাও ঠিক নয়, বন্দি করে রাখাও ঠিক নয়।’
আম্মুর কথায় বাবা নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। তিনি বিড়ালটাকে ছেড়ে দিলেন। সে ভোঁ দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেল। এবার বাবা সবগুলো পাখিকেও ছেড়ে দিলেন। মুক্তির আনন্দে পাখিগুলোও কিচিরমিচির করতে করতে আকাশে উড়ে গেল। আমরা খুশিমনে পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখতে থাকলাম।
দ্বিতীয় শ্রেণি, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা