× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নারী বাইকারদের সুখ-দুঃখ

হৈমন্তী শুক্লা

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০৫ পিএম

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:১৮ পিএম

কাজের প্রয়োজনে বাইক ব্যবহার করলেও অন্যান্য নারীর মতো নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন বিশাখা বনলক্ষ্মী

কাজের প্রয়োজনে বাইক ব্যবহার করলেও অন্যান্য নারীর মতো নিরাপত্তার অভাবে ভোগেন বিশাখা বনলক্ষ্মী

অফিস যাতায়াতে সুবিধার জন্যই স্কুটি বেছে নেন গণমাধ্যমকর্মী বিশাখা বনলক্ষ্মী। রাস্তার যানজট, যৌনহেনস্থাসহ তিক্ত পরিস্থিতি এড়াতে অনেক নারীই এখন স্কুটি বা বাইক চালান।

বিশাখা জানান, চাকরির সুবাদেই প্রথম ঢাকা আসা। একটি পত্রিকায় কাজ শুরু করেছিলেন। রিপোর্টিং করতে গিয়ে গণপরিবহনে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। বাসে উঠতে অসুবিধা হতো। ভিড়ের মধ্যে আপত্তিজনকভাবে কেউ শরীর ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন, ছুঁয়ে দিচ্ছেন- এসব বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেতে প্রথমে একটি স্বাধীন বাহনের কথা চিন্তা করেন তিনি। দ্বিতীয় কারণটি ছিল যানজট। এমন অনেক দিন গেছে ঠিক সময়ে অ্যাসাইনমেন্টে পৌঁছাতেই পারেননি। মূলত এ দুটি কারণেই ১০ বছর আগে বাইক কেনেন তিনি।

এতটা সময় পেরিয়েও প্রশ্ন উঠছে, সেখানেও নারী কতটা নিরাপদ? একজন পুরুষের জন্য বাইক চালানো যতটা সহজ ও স্বচ্ছন্দের, নারীর ক্ষেত্রে কি একই রকম? তিনি বলেন, ‘আমাকে নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। আমি আমার লুকিং গ্লাসে দেখছি, পেছন থেকে আমাকে ধাক্কা মারতেই আসছে। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে, হাসাহাসি করছে। আমাকে দেখে যে একটু ‘চাপ’ দেবে এই টেনডেন্সি এটা আমি দেখছি। এমনও হয়েছে বাইক থামিয়ে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এটা মোটরসাইকেলওয়ালাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়েছে। প্রাইভেট কারের ড্রাইভাররাও ভয় দেখাবে। কেউ কেউ মনে করে ফেলে দেবে। এমনকি এখন পর্যন্ত যেটা দেখি, বাস ও মাইক্রোবাসের ড্রাইভাররা একটু সহনশীল হয়েছে। একটু বোধহয় চোখসওয়া হয়েছে, কিন্তু রিকশা বা সিএনজি চালকরা সাইড দিতে চায় না।’

তিনি বলেন, রাস্তায় নারীদের বাইক চালাতে দেখলে বাস-ট্রাকের ড্রাইভাররা ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য জোরে হর্ন বাজান। টেকওভারসহ নানা ধরনের অদ্ভুত আচরণ করেন। এমনকি অনেকেই নারী বাইকারদের ‘উচ্ছৃঙ্খল’ বলে মন্তব্য করেন। এসব বিড়ম্বনা পুরুষ বাইকারদের পোহাতে হয় না। একজন পুরুষ বাইকার যখন বাইক চালান, তাকে মাথায় রাখতে হয় যেন নিয়ম মেনে চলেন, যেন দুর্ঘটনা না হয়। নারীদের এসব চিন্তা করতে হয়ই, পাশাপাশি কে কখন ধাক্কা মারার চেষ্টা করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। বিশাখা বলেন, ‘পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকে বাজে কথাও বলেন। প্রথম যখন বাইক চালানো শুরু করেছি তখন একটা কথা খুব শুনতে হয়েছে- দেশটা ইন্ডিয়া হয়ে গেছে।’

জানতে চাই, নারী বলে কোথাও কখনও আলাদাভাবে ছাড় বা সুবিধা পেয়েছেন কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কখনও হয়নি। এমনকি সঠিক কাগজপত্র থাকার পরও ট্রাফিক পুলিশরাও রেহাই দেন না। নারী বলে একটু আগে যাওয়ার জন্য সাইড দিবে, এমনও হয়নি। এমনকি পাম্পে যখন তেল নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াই তখন সিরিয়াল ব্রেক করে কেউ কেউ সামনে চলে যেতে চান। নারী বলে অনেকেই তাচ্ছিল্য করেন, ভাবেন সে পরে নেবে।’

তবে এসব ক্ষেত্রে বেশ প্রতিবাদী বিশাখা। তিনি বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, পারিবারিক নিষেধ ও ভয়ের কারণে মেয়েরা বাইক চালাবে, ভাবা যেত না। ধীরে ধীরে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। যদিও এ নিয়ে এখনই সন্তোষ প্রকাশের সময় আসেনি। কারণ কিছু মানুষ আছে যারা ভাবেন নারী কেন বাইক চালাবে। এটা তো পুরুষের বাহন।’

একসময় এসব দৃষ্টিভঙ্গি ও দুর্ঘটনার ভয়ে বিশাখার পরিবারও তাকে নিয়ে চিন্তায় থাকত। তার বাবাও ঢাকায় এসে মেয়ের বাইকে ঘুরেছেন। সেদিন বিশাখার জন্য খুব আনন্দের ছিল। বিশেষ দিন ছিল বাবার জন্যও। মেয়েকে এমন আত্মবিশ্বাসী দেখে খুবই খুশি হয়েছেন তিনি।

বিশাখা মনে করেন, রাস্তাঘাটে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া দরকার শিক্ষা ও আইনি ব্যবস্থায়। নারীকে যথাযথ সম্মান দিতে পারলে ঘরে বাইরে হয়রানি কমবে। সবার সহযোগিতামূলক মনোভাবই পারে সমাজে নারী-পুরুষের সমতা এনে সামনে এগিয়ে নিতে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা