বসার ঘর থেকে শোবার ঘর, সবখানে শোভাবর্ধনে রাখা হয় নানান আসবাব। ঘরের অভ্যন্তরে কাটে জীবনের বড় একটা অংশ বা সময়। বাইরে যতই কাজ থাকুক না কেন দিনের শেষে ঘরে ফিরতেই হবে। তাইতো ঘর সাজানো হয় ছিমছাম, সুন্দর একদম মনের মতো করে। যেন সব ব্যস্ততার পর একটু স্বস্তি মেলে। ঘর যদি সুন্দর ও পরিপাটি হয় তবে দেহমন উৎফুল্ল থাকে। কারণ আমরা জীবনীশক্তি পাই ঘর থেকেই।
প্রত্যেক নারীর স্বপ্ন থাকে ঘর মনের মতো সাজিয়ে রাখার। ঘরকন্নার এই ইচ্ছা বেশ সহজাত। অনেকেই সংসারের শুরুর দিকে সব ধরনের আসবাব কিনতে পারেন না। আবার বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ অ্যাপার্টমেন্ট আকারে ছোট হওয়ায় খুব বেশি আসবাব আঁটে না। তাই অনেকেই বুঝতে পারেন না ঘর কীভাবে সাজাবেন। এ ক্ষেত্রে ঘরকে নান্দনিক রূপ দিতে সাধারণ আসবাবকেই সাজিয়ে নিতে পারেন।
অন্দরসজ্জায় ক্রশ কুশিকাটার নানা পণ্য এখন বেশ জনপ্রিয়। একসময় বাংলার ঘরে ঘরে উল-কাটার ব্যবহার হতো। পরিবারের সদস্যদের জন্য সোয়েটার থেকে শুরু করে আসবাব ঢেকে রাখার নানা ধরনের শৌখিন কভার ক্রশে দিয়ে বুনতেন নারীরা। মেয়েরা রুমাল, টেবিলক্লথ নানা কিছু বানাতেন কুশি-কাটার বুননে। কুশি-কাটা দিয়ে ফুল তোলা নানান জিনিস আভিজাত্যের প্রতীক ছিল। কালের বিবর্তনে ক্রশের কাজের প্রচলন কমে যেতে থাকে। তবে বাকি সব ফ্যাশন ট্রেন্ডের মতোই এটি আবার ফিরে এসেছে সগৌরবে।
অন্দরসজ্জার প্রসঙ্গ এলে সবার আগে যে ঘরটির কথা মাথায় আসে তা হলো বসার ঘর। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে বিশেষ দিন উদযাপনÑ সবই হয় বসার ঘরে। এ ঘর দেখলে ধারণা করা যায় ব্যক্তির রুচি কেমন। হয়তো বসার ঘরের সোফাটি পুরোনো হয়ে গেছে, কিন্তু নতুন কেনাও সম্ভব হচ্ছে না। খুব সহজেই সোফাটি নতুন কভারে মুড়ে নিতে পারেন। এতে সোফাটি সহজে যেমন নষ্ট হবে না, তেমন বদলে যাবে ঘরের চেহারা। কভারের রঙ ঘরের রঙের সঙ্গে কন্ট্রাস্ট করে কিনে নিতে পারেন। সাধারণত উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার করা হয় কভারে। তবে চাইলে দুই বা তিনটি রঙ ব্যবহার করতে পারেন। কভারের সঙ্গে মিলিয়ে ক্রশে বোনা কুশনকভার ব্যবহার করতে পারেন। একরঙা বা কয়েক রঙের সুতায় বোনা ফুলতোলা কিংবা জ্যামিতিক মোটিফে বোনা কুশনকভার এনে দেবে আভিজাত্যের ছোঁয়া।
রুবিয়াথ’স কালেকশনের স্বত্বাধিকারী রুবাইয়াত শারমিন বলেন, ‘ঘর সাজাতে নানা কিছু পাওয়া যায় এখন। কিন্তু কুশি-কাটার বিভিন্ন পণ্য ঘরে দেয় আভিজাত্যের ছোঁয়া। সেই চিন্তা থেকেই ঐতিহ্যবাহী কুশি-কাটার নানা ধরনের পণ্য নিয়ে আসা; যা বসার ঘর, ডাইনিং এমনকি শোবার ঘরের শোভা বাড়াতে দারুণ! অন্যদিকে পণ্যগুলোর মূল্যও হাতের নাগালে।’
তাদের কাছে রয়েছে কনটেম্পরারি, বোহেমিয়ান, লেসসহ নানা মোটিফের কুশি কাটার অন্দরসজ্জার পণ্য। যার সকটিই হাতে বোনা। নিজস্ব স্টাইলের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতারা পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন কাস্টমাইজ করতে পারবেন।
বসার ঘরের মেঝের পুরোনো কার্পেটের বদলে ব্যবহার করতে পারেন ক্রশে বোনা রাগ। ঘরের মাঝে কিংবা এক পাশে বিছিয়ে দিতে পারেন রাগ। তার ওপর ফেলে রাখা যেতে পারে কয়েকটি কুশন। ফলে সহজেই এক্সট্রা বসার জায়গা তৈরি হয়ে যাবে। যেখানে বসে ক্যাজুয়াল আড্ডার আসর জমাতে পারেন। ঘরের সেন্টার টেবিলটিকেও দিতে পারেন নান্দনিক ছোঁয়া। কুশনকভারের সঙ্গে মিলিয়ে কিংবা কন্ট্রাস্ট করে ক্রশের বোনা টেবিলক্লথ ব্যবহার করতে পারেন; যা নিমেষেই আপনার বসার ঘরের লুক করবে আকর্ষণীয়।
খাবার ঘরের টেবিল-চেয়ারগুলোও সাজিয়ে নিতে পারেন মনমতো। এজন্য ব্যবহার করা যেতে পারে ক্রশে বোনা টেবিল ম্যাট অথবা টেবিল রানার। ডাইনিং টেবিলের ওপর টেবিল রানার বিছিয়ে দিলে দেখতে নান্দনিক লাগে। রানার যে শুধু শোভাবর্ধন করে তা নয়, এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজেও ব্যবহার হয়। টেবিল রানারের ব্যবহার মুহূর্তেই পরিবর্তন এনে দিতে পারে ঘরের পরিবেশে। রানার খাবার টেবিলের জন্য ব্যবহার করা হলেও এটি কম উচ্চতার (লো হাইট) ক্যাবিনেট, সেন্টার টেবিল বা কোনো ট্রাংক, পুরোনো কাঠের বাক্স বিভিন্ন কিছুর ওপরই বিছানো যেতে পারে। এতে ঘরের ভেতর সৌন্দর্যের এক ভিন্নমাত্রার যোগ হবে। কুশি কাটার টেবিল রানার ও টেবিল ম্যাট খাবার ঘরকে এনে দেবে ঐতিহ্যবাহী লুক।
শোবার ঘরের সৌন্দর্যবর্ধনেও ব্যবহার করতে পারেন এসব। বেডরুমের দেয়ালে কুশি কাটার ওয়ালম্যাট কিংবা হ্যাংগিং ব্যবহার করা যেতে পারে। বিছানায় ক্রশের তৈরি বালিশের কভার ব্যবহার করতে পারেন যা রুমের সৌন্দর্যে যোগ করবে ভিন্ন মাত্রা।
দরদাম
কুশি কাটার পণ্যগুলো পাবেন হাতের নাগালে থাকা মূল্যে। ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন নানা সাইজের কুশনকভার ও বালিশের কভার। টেবিল রানার ও রাগ কিনতে গুনতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। কুশি কাটার পণ্য কিনতে ভিজিট করতে পারেন ফেসবুক পেজ Rubiath's Collection-এ।