আসমাউল হুসনা
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩ ১২:০৮ পিএম
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৩ ১২:০৮ পিএম
আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে টিম বাংলাদেশ ছবি: সংগৃহীত
অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে হৃতম সরকার অয়ন ও আদনান বিন আলমগীর একটি করে রৌপ্যপদক এবং বায়েজিদ বোস্তামী একটি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছেন
ছেলেবেলায় চাঁদমামার গল্প শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। চাঁদের বুড়ির সুতো কাটার গল্প শিশুমনে জাগিয়েছে নানান কৌতূহল। দিনের সূর্যের তেজ অস্তমিত হয়ে রাতের আকাশে উপস্থিত হয় চাঁদ, সেই সঙ্গে তারা মিটিমিটি আলো ঝরায় মুক্তোর মতো।
চাঁদ, তারা, সূর্য ছাড়াও মহাকাশে রয়েছে গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু, ছায়াপথ। বিজ্ঞানের সুবাদে আমরা জানতে পারি পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে চাঁদ। চাঁদের নিজস্ব আলো নেই। সূর্যের আলোয় আলোকিত সে।
এমন বেশকিছু তথ্য মানুষের মনের কৌতূহল করে তোলে আরও জোরালো। জানার ইচ্ছা হয় প্রবল। জানার আগ্রহ থেকেই জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা নিয়ে মানুষ শুরু করে গবেষণা, প্রতিনিয়ত উদ্ভাবন করছে নতুন কিছু। জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা আরও ফলপ্রসূ করতে ২০০৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড অন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (আইওএএ) প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে।
এ প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য জ্যোতির্বিদ্যা এবং এর সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানগত, প্রযুক্তিগত, প্রকৌশলগত ও গাণিতিক (এসটিইএম) বিষয়গুলোর প্রতি আকর্ষণ ও জ্ঞান বাড়ানো। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের তরুণদের সাধারণ জ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে জ্যোতির্বিদ্যা এবং জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা প্রচার ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিকশিত করা।
আশা করা যায়, আইওএএ’র মতো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার ওপর পেশাদার হতে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে অধ্যয়নে আগ্রহী হবে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর একটি দল এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ অলিম্পিয়াডের জন্য দল গঠন করা হতো বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে। তবে অ্যাস্ট্রোনমি ও অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এ দুটি অলিম্পিয়াডের পাঠ্যসূচির ভিন্নতা থাকায় এবং শিক্ষার্থীদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ অলিম্পিয়াড অন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (বিডিওএএ)’ কমিটি।
বর্তমানে বিডিওএএ কমিটি দল গঠন ও প্রেরণের দায়িত্ব পালন করে। এ কমিটি আইওএএতে সাবেক অংশগ্রহণকারী ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠিত। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড অন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স প্রতিযোগিতার প্রথম আসরে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ২১টি দল অংশগ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশ থেকেও এ আয়োজনে একটি দল পাঠানো হয়। এ প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ও একাদশ আয়োজন ছাড়া সবকটিতেই অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশ।
এ বছর ১৬তম আইওএএ-২০২৩ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় পোল্যান্ডের চোরজোতে। বিশ্বের ৫০টি দেশ থেকে ২৫৬ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। গর্বের বিষয়, বাংলাদেশ এ প্রতিযোগিতায় দুটি রৌপ্য ও একটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে। এবারই প্রথমবারের মতো রৌপ্যপদক অর্জন করে বাংলাদেশ। আইওএএ জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (নবম-দ্বাদশ) শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ করে দেয়। তাদের বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন অলিম্পিয়াড হিসেবে বিবেচিত করে। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মহাকাশ, নক্ষত্র, অন্যান্য গ্রহ, মহাবিশ্ব এবং অনুরূপ বিজ্ঞান ও মহাকাশ সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়।
১০ থেকে ২০ আগস্ট এ প্রতিযোগিতায় মোট তিনটি অংশে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়। থিউরিটিক্যাল, অবজারভেশনাল, ডেটা অ্যানালাইসিস- এ তিনটি পরীক্ষা আলাদা তিনটি দিনে অনুষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিক চোখে পর্যবেক্ষণ, আকাশের মানচিত্র ও ক্যাটালগ প্রয়োগ, কৌণিক বিভাজনের মাত্রা অনুমান, আকাশ ও অনুমানে স্থানাঙ্ক সিস্টেমের ব্যবহার, ত্রুটির সঠিক গণনা, ত্রুটির উৎস শনাক্তকরণ এবং চূড়ান্ত ফলের প্রভাব অনুমান, বিভিন্ন স্কেলসহ গ্রাফ কাগজ, পোলার, লগারিদমিক কাগজের সঠিক ব্যবহার, একটি লিনিয়ার প্লট পেতে আনুমানিক ‘সেরা ফিট’ লাইন খুঁজে পেতে ডেটায় রূপান্তর, পর্যবেক্ষণমূলক তথ্যের মৌলিক পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণগুলো ছিল এ তিনটি অংশে। একজন প্রতিযোগীকে তিনটি অংশেই অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। আর এ তিনটি অংশে অর্জিত মোট স্কোরের ভিত্তিতেই প্রদান করা হয় পদক।
এ বছর আইওএএতে অংশ নিতে পোল্যান্ডে যাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন হৃতম সরকার অয়ন (আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল), আদনান বিন আলমগীর (ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ), বায়েজিদ বোস্তামী (রাজশাহী কলেজ), আদিবা আমিরা (মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল)। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন ফাহিম রাজিত হোসেন স্বাধীন (ইইই, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি)।
অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে হৃতম সরকার অয়ন ও আদনান বিন আলমগীর একটি করে রৌপ্যপদক এবং বায়েজিদ বোস্তামী একটি ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছেন; যা বাংলাদেশের অনন্য অর্জন ও গর্ব। এ অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে পাবে নতুন পরিচয়।