মশিউর রহমান
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:০৩ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫০ পিএম
অলংকরণ: জয়ন্ত সরকার
কেওড়া গাছের খোঁড়লে একটি মাকড়সা থাকত। পেটফোলা মাকড়সাটি কোনো কাজই করতে চায় না। সব সময় ঝিম মেরে গাছের খোঁড়লে বসে থাকে। গাছের সবাই নিজেদের খাবার জোটাতে ছোটাছুটি করে। মাকড়সাটির কিন্তু কোনো তাড়া নেই। সে শুধু জুলজুল করে তাকিয়ে থাকে তার জালের দিকে। অপেক্ষায় থাকে সেখানটায় কোনো পোকা টুপ করে এসে পড়ে কি না। পড়লেই তো পোকাটি জালে আটকে যাবে। সেটাই তখন হবে মাকড়সার শিকার। সে তো খুব সহজেই খাবার পেয়ে যাচ্ছে। এজন্য তাকে কোনো পরিশ্রমই করতে হচ্ছে না। তাই দিন দিন সে ভয়ানক কুঁড়ে হয়ে যায়।
একঝাঁক মৌমাছি একদিন সেখানে উড়ে এলো। বাসা বাঁধার জন্য তারা একটি বড় গাছের শক্ত ডাল খুঁজছিল। রানী মৌমাছির খুব পছন্দ হলো সেই কেওড়া গাছটি। রানীর কথামতো মৌমাছিরা সেই ডালে চটপট নেমে পড়ল। কয়েক দিনের মধ্যেই তারা মস্ত বড় মৌচাক বানাল। যাতে ছিল অনেক খোপ। সেগুলো মৌমাছিদের থাকার ঘর।
আলসে মাকড়সাটি ঘন পাতার ফাঁক দিয়ে মৌমাছিদের ঘর বানাতে দেখল। তিল তিল করে ভারি সুন্দর একটি ঘর বানিয়েছে মৌমাছিরা। এতগুলো মৌমাছি একসঙ্গে দেখতে পেয়ে মাকড়সাটি খুব খুশি হয়। ভাবে, এরা কখন তাদের খোপ থেকে বেরিয়ে আটকা পড়বে তার জালে।
পরিশ্রমী মৌমাছিরা মোমের মতো আঠা দিয়ে তাদের ঘরগুলো বানিয়েছে। শক্ত খোপ থেকে তাই টুপ করে পড়ে যেতে হয় না। তারা সব ঘর মধু দিয়ে ভরেছে। প্রতিদিন ফুলবনে ঘুরে ঘুরে মধু খোঁজে। তাদের জিব দিয়ে ফুলের গভীর থেকে মধু টেনে নেয়। ফুলের বাগানে ঘুরে ঘুরে তারা মধু জমায়।
ভোরবেলায়ই ডানা ঝাপটে উড়ে যায়। অনেক দূরে যায়। গাছের অন্য পোকামাকড়রা মৌমাছিদের উড়ে যাওয়ার সময় বলে, তোমরা এভাবে নাচতে নাচতে কোথায় চলেছ? একটু থামো। গল্প করি।
ব্যস্ত মৌমাছিরা চটপট বলে, আমাদের গল্প করার মতো একদম সময় নেই। অযথা গল্প একদম পছন্দ করে না মৌমাছিরা। তাই ওদের ঘর মধু দিয়ে ভরা। খাবারে ঠাসা। মাকড়সার জালে তারা আটকা পড়ে না।
এদিকে খাবারের অভাবে মাকড়সাটি দিন দিন শুকিয়ে যায়। তার সরু পা লিকলিকে হয়ে যায়।
এক ঝড়ের দিনে কেওড়া গাছের একটি ডাল মটাস করে ভেঙে পড়ল মাকড়সাটির ওপর। সে তাতে থেঁতলে গেল। মাকড়সাটি নড়াচড়া করতে পারে না। চোখ মেলে শুধু দেখতে পেল মৌমাছিরা উড়ে যাচ্ছে। ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে মাকড়সাটি বলে, তোমরা কোথা যাও নাচি নাচি?
আলসে মাকড়সার কথা শোনার মোটেও ইচ্ছা নেই মৌমাছিদের। তাদের ডানায় তখন জোর লেগেছে। তাদের যে অনেক দূরের ফুলবনে যেতে হবে। অনেকটা পথ পেরোতে হবে। আলসে মাকড়সার কথা শুনলে তো তাদের চলবে না। তাদের দরকার মধু। এজন্য ফুলে ফুলে উড়ে যেতে হবে। বসে থাকার সময় নেই। মৌমাছিরা বনবন করে উড়ে যায়। ওদের ভেতর থেকে রানী মৌমাছি মাকড়সাকে উদ্দেশ করে শুধু বলে, ‘ওই ফুল ফোটে বনে, আমরা যাই মধু আহরণে।’