× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দ্বাদশ শতকের বিস্ময় আংকর ওয়াট

তপন মিত্র চৌধুরী

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩ ১২:১৬ পিএম

দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয় আংকর ওয়াট

দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয় আংকর ওয়াট

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা কম্বোডিয়ার সিয়াম রিপ প্রদেশের আংকর ওয়াট (আংকরভাট)। আংকর অর্থ নগরী আর ওয়াট অর্থ মন্দির। অর্থাৎ মন্দিরের নগরী। দ্বিতীয় রাজা জয়বর্মণ (৮০২-৮৩৫) খেমার রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা।

তরুণ বয়সে তিনি জাভার শৈলেন্দ্র বংশের রাজসভায় থাকতেন। পরে বহু সংঘাত, জোট ও যুদ্ধের পর তিনি দেশকে জাভার দখলমুক্ত করেন। খেমার রাজত্ব ৮০৫-১৪২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে টিকে ছিল। ২৫ জন রাজা এ সময়ে রাজত্ব করেন। তাঁরা এক হাজারের অধিক মন্দির নির্মাণ করেন, যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আংকর ওয়াট। একাদশ শতাব্দীতে খেমার সাম্রাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। সাম্রাজ্যের সীমানা- পূর্বে চম্পা (মধ্যে ভিয়েতনাম), উত্তরে চীন, দক্ষিণে সাগর ও পূর্বে ব্রহ্মদেশ। দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয় আংকর ওয়াট। শুরুতে আংকর ওয়াটের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার। 

রাজা জয়বর্মণ ক্ষমতায় এসে কম্বোডিয়ার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত টনলে সেপ হ্রদের উত্তরে হরিহরালয়ে প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তাঁর ছেলে যশবর্মণ রাজধানী স্থানান্তর করেন যশোধারাপুরে। এটি বর্তমানে আংকর ওয়াট নামে পরিচিত। খেমার রাজাদের বৈশিষ্ট্য ছিল নিজেদের প্রিয় দেবতাদের নামে বা বাবা-মায়ের নামে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খেমার রাজ্যে যুদ্ধবিগ্রহ, প্রাসাদ রাজনীতি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছিল। এ সময় ক্ষমতায় আসেন দ্বিতীয় সূর্য্যবর্মণ।

প্রথমে নিজের ঘরকে ফেরালেন শৃঙ্খলার মধ্যে, তারপর আঘাত হানলেন চম্পা ও ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধজয়ের স্মারক হিসেবে আংকর ওয়াট নির্মাণ শুরু করেন সূর্য্যবর্মণ এবং সেটি ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। মন্দির নির্মাণ চলে ২৮ বছর ধরে। আংকর ওয়াট দেখার জন্য ব্যাঙ্কক থেকে সিয়াম রিপে গিয়েছিলাম বিমানে। সূর্যোদয় দেখব, হোটেলের স্টাফরা জানাল আগের দিন গিয়ে টিকিট কেটে আনতে হবে। তারাই একটা টুকটুক (অটো) ঠিক করে দিল।

আদতে একটা মোটরসাইকেলে চারজন বসতে পারে- এ রকম ব্যবস্থা আছে। এই টুকটুক খুব সাশ্রয়ী। আংকর ওয়াট হোটেল থেকে বেশি দূরে নয়, প্রায় ৮ কিলোমিটার। ফরাসি ধাঁচের শহর। রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। চারদিকের দৃশ্য দেখতে দেখতে টিকিট কাউন্টারে চলে এলাম। এক দিনের জন্য প্রতি টিকিট ২০ ডলার। আংকর ওয়াটে সূর্যোদয় দেখতে হলে রাত থাকতেই বের হতে হবে। যখন আংকর ওয়াটে পৌঁছলাম, তখনও রাতের আঁধার কাটেনি। অনেকের দেখাদেখি জলবেষ্টনীর ধারে গিয়ে বসলাম। অপেক্ষা করছি সূর্য ওঠার। 

ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে আংকর ওয়াট। গম্বুজগুলো দূর থেকে মনে হচ্ছে এক লাইনে। গম্বুজের অবয়বের পেছনে ধীরে ধীরে লাল হয়ে আসছে আকাশ। আর দেরি নেই ভোরের আগমনের। কত দেশে, কত নগরীতে সূর্যোদয় দেখেছি। সেই একই সূর্য। তারপরও প্রতিবারই এর অনুভূতি ভিন্ন ভৌগোলিক ভিন্নতার কারণে, পারিপার্শ্বিকতার কারণে। পুরো নগরীর নাম আংকর ওয়াট আর এটা এখন এই মন্দিরের নামই হয়ে গেছে। যশোধারাপুরের এই মন্দিরের আদি নাম ছিল বরাহ বিষ্ণুলোক বা পরম বিষ্ণুলোক।

পূর্বপুরুষের মন্দিরগুলো থেকে এই মন্দির ছিল ব্যতিক্রমী। সূর্য্যবর্মনের পূর্বপুরুষরা ছিলেন শৈব। কিন্তু তিনি প্রথা ভেঙে এই মন্দির উৎসর্গ করেন শ্রী বিষ্ণুকে। মন্দির পশ্চিমমুখী, ৪০২ একর জমির ওপর অবস্থিত। বাইরের দেয়ালের দৈর্ঘ্য ১০২৫ মিটার ও প্রস্থ ৮০২ মিটার। দেয়াল থেকে ৩০ মিটার দূরে চারদিকে ১৯০ মিটার প্রশস্ত পানির পরিখা। পাথর দিয়ে মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে। পরিখার ওপর পাথরের সেতু। সেতু পার হয়ে মাঠ। মাঠের দুই পাশে দুটি ছোট ছোট ঘর তৎকালে লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। 

মন্দিরটির বৈশিষ্ট্য- পর্যায়ক্রমে তিনটি চার কোনা গ্যালারি। এই গ্যালারিগুলো উৎসর্গ করা হয়েছে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রাজাকে। প্রতি গ্যালারির মূল বিন্দুতে গোপুরম। আর ভেতরের দিকে চার কোনায় চারটি টাওয়ার। সবচেয়ে উঁচুটা মধ্যখানে। পুরো মন্দিরের উচ্চতা ৬৫ মিটার। মন্দিরে প্রবেশ পথে প্রথমেই চোখে পড়বে সাতমাথার নাগরাজ মূর্তি। সিঁড়ি বেয়ে একতলায় উঠলে বামদিকে অষ্টভূজ বিষ্ণুমূর্তি। ভেতরের একটি কক্ষে আছে বৌদ্ধমূর্তি। 

করিডোর দিয়ে বামে এগোলে দেয়ালের গায়ে রামায়ণ, মহাভারতের গল্পের রিলিফ। সঙ্গে সূর্য্যবর্মনের ছবিও। ১৪৩১ সাল থেকেই আংকরে খেমারদের প্রতিপত্তি কমতে থাকে। প্রতিবেশী শত্রুদের চাপে খেমার সাম্রাজ্য হয়ে যায় বিলীন। যেহেতু রাজা নেই, মন্দিরেরও কদর নেই। তবে এখানকার মন্দিরের প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে বিমোহিত করবেই। আংকর ওয়াটে থাকার জায়গা নেই। সিয়াম রিপেই থাকতে হবে। বেড়ানোর জন্য টুকটুকই শ্রেয়। পুরো এলাকাজুড়ে রেস্টুরেন্ট ও ওয়াশরুম আছে। আংকর ওয়াট শুধু প্রাচীন মন্দিরের ভগ্নাবশেষ নয়, বরং এক উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা