সাহিদা আক্তার
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫০ পিএম
বলা হয়, জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকাকে স্বাধীন করেছেন, আব্রাহাম লিঙ্কন এনেছেন গণতন্ত্র, তবে মার্কিন দেশকে সভ্য করেছেন মার্টিন লুথার কিং। তাঁর নেতৃত্বে কালো মানুষ পেয়েছে সাদা মানুষের সমান অধিকার, আর সাদা নাগরিকরা পেয়েছে বর্ণবাদের অভিশপ্ত অহংকার থেকে মুক্তি।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র তার ভাষণের মাধ্যমে ঘোষণা দেন জাতিগত বৈষম্যের দিন শেষ করার। তিনি তার ভাষণে শ্বেতাঙ্গদের কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নির্যাতন, বঞ্চনা আর বৈষম্যমূলক আচরণের কথা তুলে ধরেন। তার ভাষণের মূল অংশ ছিল এরকম-
‘এই দিনে আমি আপনাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে খুশি। ইতিহাস এই দিনটি মনে রাখবে, আমাদের জাতির ইতিহাসে মুক্তির মহান সমাবেশ হিসেবে। কিন্তু ১০০ বছর পর মর্মান্তিক সত্য হচ্ছে, কৃষ্ণাঙ্গরা আজও মুক্ত নয়। শতবর্ষ পরও তারা দুঃখজনকভাবে বিচ্ছিন্নতার শেকলে আর বৈষম্যের জিঞ্জিরে বাঁধা। শতবর্ষ পরও কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন যেন ধনসম্পদের বিরাট সমুদ্রের মাঝখানে এক নিঃসঙ্গ দারিদ্র্যের দ্বীপ। শতবর্ষ পরও কৃষ্ণাঙ্গরা মার্কিন সমাজের এক কোণে নির্জীব দশায় পড়ে আছে, হয়ে আছে নিজভূমে নির্বাসিত। তাই আজ আমরা এখানে আমাদের দুর্দশাকে তুলে ধরতে এসেছি।
এক অর্থে আমরা আমাদের রাজধানীতে এসেছি একটা চেক ভাঙাতে। আমাদের প্রজাতন্ত্রের স্থপতিরা যখন সংবিধানের সেই দারুণ কথাগুলো লিখছিলেন এবং দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা, তখন তারা এমন এক চেকে সই করছিলেন, প্রতিটি মার্কিনি যার উত্তরাধিকারী। সেটা ছিল সব মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, মুক্তি ও সুখ সন্ধানের নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি। আজ পরিষ্কার হয়ে গেছে, আমেরিকা সেই প্রতিশ্রুতিপত্র খেলাপ করেছে, অন্তত তার কালো নাগরিকদের বেলায়।
সেই পবিত্র দায়িত্ব মান্য করার বদলে আমেরিকা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের হাতে যে চেক ধরিয়ে দিয়েছে, তা ফেরত এসেছে, “তহবিল ঘাটতি”র চিহ্ন নিয়ে। কিন্তু ন্যায়বিচারের ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে, এ আমরা বিশ্বাস করতে রাজি নেই। আমরা মানতে রাজি নই, এ জাতির সুযোগ ও সম্ভাবনার সিন্দুকে যথেষ্ট তহবিল নেই। তাই যে চেক চাইবা মাত্র মুক্তির দৌলত আর ন্যায়বিচারের নিরাপত্তা দেবে, আজ আমরা এসেছি সেই চেক ভাঙাতে। এখনই সময় ঈশ্বরের সব সন্তানের জন্য সুযোগের সব দ্বার অবারিত করে দেওয়ার। এখনই সময় বর্ণবৈষম্যের চোরাবালি থেকে আমাদের জাতিকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের পাথুরে জমিতে তুলে ধরার।
যতদিন না কৃষ্ণাঙ্গরা তাদের নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারবে, ততদিন যুক্তরাষ্ট্রে বিরাম ও শান্তি থাকবে না। যতদিন না ন্যায়ের সুদীপ্ত দিন আসছে, ততদিন বিদ্রোহের ঘূর্ণিঝড় যুক্তরাষ্ট্রের ভিত কাঁপিয়ে দিতে থাকবে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এ জাতি জাগ্রত হবে এবং মানুষের এ বিশ্বাসের মূল্যায়ন করবে, সব মানুষ জন্মসূত্রে সমান।’ (সংগৃহীত)
মানবকল্যাণে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং।