নুপা আলম, কক্সবাজার
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৩৬ পিএম
বঙ্গবন্ধু হিমছড়ি সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ করেন ও ইনানী বন বিভাগের রেস্ট হাউসে এসেছিলেন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসংখ্যবার কক্সবাজার এসেছিলেন। স্মৃতিবিজড়িত এসব জায়গার কোথাও এ পর্যন্ত কোনো ফলক স্থাপন করা হয়নি।
বঙ্গবন্ধু ১৯৫৮ সালের ১৬ জানুয়ারি অবকাশ যাপনে ইনানী বন বিভাগের রেস্ট হাউসে এসেছিলেন, যেখানে তিনি দুই দিন অবস্থান করেন। বন বিভাগের পরিদর্শন বইয়ে জাতির জনকের স্বাক্ষর তাই প্রমাণ করে। ১৯৭৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জীবনের শেষবার তিনি কক্সবাজার যখন এসেছিলেন তখনই কক্সবাজারের পর্যটনের সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ শহররক্ষার জন্য ঝাউগাছের বনায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নানা তথ্য বলছে, বঙ্গবন্ধু অন্তত ১৫ বার কক্সবাজারে আসেন।
‘কক্সবাজারে বঙ্গবন্ধু’ বইয়ের লেখক গবেষক কালাম আজাদ জানিয়েছেন, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে প্রথম কক্সবাজার সফর করেন ১৯৫৪ সালে, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রমে। এরপর ১৯৫৫ সালের ৩-৪ জুন, ১৯৫৬ সালে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তর মন্ত্রী, ১৯৫৮ সালে কক্সবাজার আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশে অংশগ্রহণ, জেল জীবনের গ্লানি টানতে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা এবং সামরিক শাসনে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ কর্মীদের রাজনৈতিকভাবে চাঙ্গা ও আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানাতে কক্সবাজারে আসেন ১৯৬১ সালের ২৮ নভেম্বর।
১৯৬২ সালে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে এনডিএফ গঠন ও আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে আসেন। ১৯৬৩ সালের ৩ মার্চ কক্সবাজারে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ওই সময় তিনি কক্সবাজার শহরের জালাল আহমদ চৌধুরী মালিকানাধীন হোটেল কক্সীতে অবস্থান করেন এবং পরদিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহেশখালীতে যান এবং মহেশখালীর তীর্থস্থান পরিদর্শন করে কক্সবাজারে ফেরত আসেন। ১৯৬৩ সালের ২৮ ও ২৯ মে সংঘটিত তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ উপকূলীয় এলাকা বিধ্বস্ত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২ জুন উপদ্রুত এলাকার ধ্বংসলীলা পরিদর্শনে চট্টগ্রামে আসেন। পতেঙ্গা, হালিশহর, কুমিরা, সীতাকুণ্ড প্রভৃতি এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি ২ ও ৩ জুন কক্সবাজারের ডুলাহাজারা ও অন্যান্য এলাকা পরিদর্শন করেন।
১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন উপলক্ষে কমিটি গঠনের জন্য আসেন। এরপর ১৯৬৫ সালের ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর সংঘটিত প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় এবং সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন তিনি। আসেন ১৯৬৬ সালে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফার প্রচারণার কার্যক্রমেও। ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে নাগরিক সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭০ সালের ২৫-২৭ এপ্রিল সত্তরের নির্বাচনী প্রচারণার কাজ চালাতেও আসেন।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ এবং কক্সবাজারকে একটি সমৃদ্ধশালী পর্যটন শহর গঠন উপলক্ষে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন। সবশেষে বাকশালী পদ্ধতি চালুর পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১০-১২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এসেছিলেন। এই সফরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজারের জন্য অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অনেকটা বাস্তবায়নও করেছেন। তবে যেসব জায়গায় বঙ্গবন্ধু গিয়েছিলেন তার কোথাও দৃশ্যমান স্মৃতিফলক নেই।