× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঝরনার টানে বান্দরবানে

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৮ পিএম

আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২১:৩১ পিএম

ঝরনার টানে বান্দরবানে
ঝরনার টানে বান্দরবানে

ভরা বর্ষায় উত্তাল কলতানে মুখর ঝরনা ও জলপ্রপাত। পাহাড়ের বুক বেয়ে চলেছে এসব ঝরনার শীতল পানি। ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে গা ভাসাতে পর্যটকরা বেছে নিচ্ছেন বর্ষার এই সময়কে। চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন, সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। বান্দরবানের ঝরনা নিয়ে লিখেছেন গোলাম কিবরিয়া  

পাহাড়ের গায়ে আঁকিবুঁকি কেটে আছে সবুজের সমারোহ। সেই সবুজের বুক চিরে নেমে এসেছে অবিরাম জলধারা। ভরা বর্ষায় উত্তাল কলতানে মুখর এসব ঝরনা ও জলপ্রপাত। সবুজ পাহাড়ের নিস্তব্ধতায় আঁচল বিছিয়ে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানায় জলের রানী! তাই সবুজের টানে প্রাণের উচ্ছ্বাসে হিমশীতল জলে সিক্ত হতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বান্দরবানে ছুটে আসছেন তারা।

জাদিপাই 

জাদিপাই ঝরনা বান্দরবানের জাদিপাই অঞ্চলে অবস্থিত। এটি বান্দরবানের গহিন অরণ্যের মাঝ বরাবর সমতল থেকে আড়াইশ ফুট ওপরে অবস্থিত। আড়াইশ ফুট ওপর থেকে অবিরাম ঝরে পড়া পানির মাঝে সূর্যের কিরণ পড়তেই বর্ণিল রংধনু সৃষ্টি হয়। সত্যিকারের মাদকতা বিরাজ করে এই অপরূপ সৌন্দর্যে। জাদিপাই ঝরনাতে কোনো কৃত্রিমতা নেই।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি, বাস, সিএনজি করে রুমা। রুমা নেমে চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে রুমা বাজার। এখান থেকে পাহাড়ে কোথাও বেড়াতে যেতে হলে গাইড নিতে হবে। রুমা বাজার থেকে চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে বগালেক বা বগালেকের কাছাকাছি যতদূর গাড়ি যায়। বর্ষায় চান্দের গাড়ির শেষ গন্তব্য থাকে কমলা বাজার পর্যন্ত। এরপর আপনাকে হেঁটে (ট্রেক করে) বগালেক উঠতে হবে। বগালেক থেকে হেঁটে কেওক্রাডং, তারপর পাসিংপাড়া, পাসিংপাড়া থেকে হেঁটে জাদিপাই ঝরনা।

বাকলাই ঝরনা থানচিতে অবস্থিত হওয়ায় আপনাকে প্রথমেই বান্দরবানে পৌঁছাতে হবে

বাকলাই 

বান্দরবানের পাহাড়ের গভীরে থানচি উপজেলার নাইটিং মৌজার বাকলাই গ্রামে অবস্থিত বাকলাই ঝরনা। এই ঝরনা ৩৮০ ফুট উঁচু। অনেকে ধারণা করেন এটি হয়তো সবচেয়ে উঁচু ঝরনা। অনেক বছর ধরে ট্রেকারদের সুপরিচিত আশ্রয় এই বাকলাই।

কীভাবে যাবেন

বাকলাই ঝরনা থানচিতে অবস্থিত হওয়ায় আপনাকে প্রথমেই বান্দরবানে পৌঁছাতে হবে। যাতায়াতের জন্য শ্যামলী, ইউনিক, ডলফিন, সাউদিয়া ইত্যাদি কোম্পানির বাস পাবেন। বান্দরবান থেকে বাস অথবা চান্দের গাড়িতে করে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টায় প্রায় ৭৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত থানচিতে পৌঁছাতে পারবেন। থানচি বাজার থেকে বাকলাই ঝরনায় যেতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে এবং এ সময় আপনাকে বেশ কিছু পাড়া অতিক্রম করতে হবে যেমনÑ টুটংপাড়া, বোর্ডিং হেডম্যানপাড়া, কাইতনপাড়া ইত্যাদি। যাওয়ার সময় পথের ভিন্নতা ভেদে আপনি পেতে পারেন বাকলাই ঝিরি ও মাঝে বেশ কিছু ছোট-মাঝারি আকারের ঝরনা। সেগুলো পার হয়ে পৌঁছবেন বাকলাই ঝরনার পাদদেশে।

অনেকেই বলেন আমিয়াখুম হলো সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত

আমিয়াখুম

মারমা ভাষায় ‘খুম’ মানে জলপ্রপাত। ঝরনার পানি শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে গেলেও খুমের পানি শুকায় না। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের পাশে আমিয়াখুম জলপ্রপাতকে দেখা যায় বাংলার ভূস্বর্গ হিসেবে। অপরূপ রূপের পসরা নিয়ে আমিয়াখুম দাঁড়িয়ে আছে বান্দরবানের থানচি উপজেলার নাক্ষিয়াং নামক স্থানে। পাথর আর সবুজেঘেরা পাহাড়ের গা ঘেঁষে দ্রুতগতিতে নেমে আসে ঝরনাধারা। দুধ সাদা রঙের ফেনা তুলে তা নিমিষেই আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ বলেন আমিয়াখুম হলো সবচেয়ে সুন্দর জলপ্রপাত।

যেভাবে যাবেন

বান্দরবান থেকে বাস বা জিপে সোজা চলে যাবেন থানচিতে। থানচি নেমে প্রধান কাজ হলো একজন গাইড ঠিক করা। এবার থানচি থেকে নৌকা নিয়ে রোমাক্রি বাজারে চলে যান। যদি থানচি থেকে সকাল সকাল রওনা দেন, তাহলে রোমাক্রি নেমে হাঁটা ধরুন নাফাখুম ঝরনার উদ্দেশ্যে। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা হাঁটলে আপনারা পেয়ে যাবেন নাফাখুমের দেখা। এখানে কিছুক্ষণ ছবি তুলে, বিশ্রাম নিয়ে এবার সাজিয়াপাড়ার দিকে রওনা হয়ে যান। নাফাখুম ঝরনা থেকে হাঁটা শুরু করলে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই আপনারা পৌঁছে যাবেন সাজিয়াপাড়া। সাজিয়াপাড়াতে রাতটুকু কাটিয়ে পরদিন সকাল সকাল উঠে পড়ুন এবং সাজিয়াপাড়া থেকে একজন গাইড নিয়ে রওনা হয়ে যান আমিয়াখুমের উদ্দেশ্যে। তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা অসাধারণ সব রাস্তা দিয়ে হাঁটলেই পেয়ে যাবেন আমিয়াখুম ঝরনা। 

নাফাখুম

নাফাখুমকে বলা হয় বাংলাদেশের নায়াগ্রা। কারণ নাফাখুম জলপ্রপাতে পানি প্রবল বেগে ছুটে আসে। আর এখানে পানি পড়ার পরিমাণ বেশি। এটি বান্দরবানের থানচি উপজেলার রোমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত। থানচি বাজার থেকে নৌকা দিয়ে রোমাক্রি গিয়ে নাফাখুম দেখতে হয়। রোমাক্রি থেকে নাফাখুম জলপ্রপাতে যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা হাঁটতে হয়।

পালং খিয়াং 

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় পালং খিয়াং দুর্গমতার কারণে খুব বেশি পর্যটক পৌঁছাতে পারেননি। তৈনখালের পাথুরে রাস্তা দিয়ে, কখনো বা উঁচু পাহাড় ডিঙিয়ে পালং খিয়াং ঝরনায় যেতে হয়। তবে ঝরনায় যাওয়ার পথে তৈনখালের যে নৈসর্গিক রূপ, তাও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তৈনখালের বাঁকে বাঁকে নাতিদীর্ঘ পাহাড় চূড়ায় মুরুং, ত্রিপুরা, মারমাদের খড়ে ছাওয়া ঘর, ছয়াভরা শান্ত গ্রাম্যপথ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঝিরি-ঝরনা, পরিচিত পাখির কাকলি- এসব যেন মর্তের পৃথিবীতে এক স্বপ্নরাজ্য! এই পথে তিনটি ঝরনা পাওয়া যায়। থাঙ্কুয়াইন ঝরনা, পালং খিয়াং ঝরনা ও লাদ মেরাগ ঝরনা।

যেভাবে যাবেন

যাতায়াত : রুট-১ : আলীকদম-পানবাজার-আমতলী নদী ঘাট। নৌকায় তৈনখাল দিয়ে দোছরি বাজার। এরপর তৈনখাল দিয়ে হেঁটে থাঙ্কুয়াইন ঝরনা-হাজরামপাড়া-পালং খিয়াং ঝরনা।

রুট-২ : এরপর আলীকদম-থানচি সড়কের ১৩ কিলোমিটার। সেখান থেকে হেঁটে দোছরি বাজার-থাঙ্কুয়াইন ঝরনা-হাজরামপাড়া-পালং খিয়াং ঝরনা। হাজিরামপাড়া থেকে এ ঝরনায় যেতে তিন-চার ঘণ্টা হাঁটতে হয়।

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সুংসাং পাড়ার নিচে ডাবল ফলস অবস্থিত

ডাবল ফলস

এটি পাহাড়ের দেশ বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সুংসাং পাড়ার নিচে অবস্থিত। স্থানীয় বম গ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে এর দূরত্ব প্রায় ২.৫ কিলোমিটার। কেওক্রাডং থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা হেটে সুংসাং পাড়া আর থাইক্ষাং পাড়ার মাঝের জঙ্গলের অত্যন্ত গভীরে এই ঝর্নাটি যেতে হয়। অন্য ঝর্ণাগুলোর থেকে এর মৌলিক পার্থক্য হল, এটাতে ঝর্ণাধারা আছে দুটো। দুটি প্রবাহ– প্রানশা ও পাংখিয়াং ঝিরি মিলে দুটি আকর্ষনীয় জলপ্রপাত তৈরী হয়েছে। ২টা ঝর্ণা একসাথে থাকার কারণের একে ডাবল ফলস বলা হয়। বর্ষা ও শীত সবসময়ই এ ঝর্ণায়  কম-বেশি পানি থাকে।

কিভাবে যাবেন

ডাবল ফলস দেখতে হলে বান্দরবান আসতে হবে। বান্দরবান থেকে বাস বা চান্দের গাড়িতে করে যেতে হবে রুমা সদর উপজেলা। প্রতি এক ঘণ্টা পরপর একটি করে বাস বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। সেখান থেকে পরবর্তী গন্তব্য বগালেক। বগালেক থেকে পরের পথটুকু ট্রেক করে এগোতে হবে। ঘণ্টা তিনেক হাঁটলেই দার্জিলিংপাড়া হয়ে পৌঁছে যাবেন বাংলাদেশের পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ কেওক্রাডংয়ে। এরপর কিছুটা হাঁটলেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গ্রাম পাসিংপাড়া। এবার নিচে নামার পালা, প্রায় এক হাজার ফুট নিচে সুংসাংপাড়া। পাথুরে রাস্তা, দিগন্ত ছোঁয়া বৃক্ষরাজি, অরণ্যের সাপ-ব্যাঙের লুকোচুরি অবলোকন করতে করতে সুংসাং পাড়ায় এসে হাজির হবেন। চারদিকে পাহাড়বেষ্টিত সুংসাংপাড়া পেছনে ফেলে গভীর অরণ্য আর ঝিরি মাড়িয়ে বীরদর্পে এগিয়ে যেতে হবে আপনাকে। প্রায় দু’ঘণ্টা হাঁটার পর অবারিত পানি পড়ার রিমঝিম শব্দ কানে ভেসে আসবে আপনার। বুঝবেন, এবার সময় হয়েছে ডাবল ফলসের স্বচ্ছ টলটলে হিমশীতল জলে নিজের ক্লান্ত শরীরটাকে একটু ভিজিয়ে নেওয়ার।

ছবি : বেঙ্গল ট্রেকার্স ও মায়াচিত্র    


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা