× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিড়াল বৃত্তান্ত

রবিউল কমল

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২৯ পিএম

আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৪৯ পিএম

নরম, তুলতুলে এ প্রাণীটি খুব সহজেই মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে

নরম, তুলতুলে এ প্রাণীটি খুব সহজেই মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে

গৃহপালিত পোষা প্রাণীর মধ্যে বিড়াল অন্যতম। চার পায়ের আদুরে চেহারার এই প্রাণী পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আজ থেকে দশ হাজার বছর আগেও মানুষ বিড়াল পুষত। বিড়াল নিয়ে আছে দিবস। ৮ আগস্ট বিড়াল দিবস উপলক্ষে বিশেষ লেখা...

মানুষের সবচেয়ে পছন্দের পোষ্য কোনটি? এমন প্রশ্নের জবাবে বেশিরভাগ হয়তো বলবেন বিড়াল। কেনইবা বলবেন না, সেই আদিকাল থেকে বিড়াল মানুষের খুব কাছাকাছি বাস করে আসছে। নরম, তুলতুলে এ প্রাণীটি খুব সহজেই মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে। বিড়াল নিয়ে নানা ধরনের কুসংস্কারও প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত কুসংস্কারটি হলো, পথে কালো বিড়ালের সঙ্গে দেখা হওয়া মানে দুর্ভাগ্য নেমে আসা। যা হোক, বিড়াল তার চোখের গঠনের জন্য অনন্য, কারণ তাদের আছে অসাধারণ দৃষ্টিশক্তি।

কালো বিড়াল ও দুর্ভাগ্য

বিড়াল নিয়ে সর্বাধিক পরিচিত কুসংস্কারগুলোর একটি হলোÑ বিশ্বাস করা হয় যে পথ চলতে যখন কারও সঙ্গে কালো বিড়ালের দেখা হয় বা কালো বিড়াল যার পথ অতিক্রম করে তার দুর্ভাগ্য নেমে আসে। এ কুসংস্কারের গভীর শিকড় আছে ইউরোপীয় লোককাহিনীতে। যেখানে কালো বিড়ালকে ডাইনির সঙ্গী বলে বিশ্বাস করা হতো। তবে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, এ বিশ্বাসের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে কালো বিড়াল চমৎকার একটি প্রাণী।

 বিড়ালের চোখ অতিপ্রাকৃত- এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই ছবি: ইভান আহমেদ

বিড়ালের চোখ অতিপ্রাকৃত!

বিড়াল তাদের অনন্য চোখের গঠনের জন্য পরিচিত। বিশেষ করে তাদের রাতের দৃষ্টিশক্তি অসাধারণ। এ কারণে অনেক দেশে ভাবা হতো বিড়াল তার চোখ দিয়ে আধ্যাত্মিক জগৎ দেখতে পায়। তবে বিড়ালের চোখ অতিপ্রাকৃত- এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। মূলত তাদের ব্যতিক্রমী দৃষ্টির কারণ হলো চোখের রেটিনার গঠন।

বিড়ালের নয়টি জীবন

অনেকে বিশ্বাস করেন, বিড়ালের নয়টি জীবন আছে। মূলত একটি পৌরাণিক কাহিনী থেকে মানুষের মাঝে এ ধারণা এসেছে। তবে আসলে এ বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই। মনে রাখতে হবে, অন্য যেকোনো প্রাণীর মতো বিড়ালের কেবল একটিই জীবন আছে। তবে বিড়ালের রহস্যময় জীবন, অবিশ্বাস্য তত্পরতা, বেঁচে থাকার বিস্ময়কর দক্ষতা ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে নির্বিঘ্নে পালানোর ক্ষমতা থেকে এ ধরনের বিশ্বাস উদ্ভূত হতে পারে।

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়

বিড়াল তার তীব্র ইন্দ্রিয়গুলোর জন্য বিখ্যাত। বিশেষত তাদের রয়েছে সূক্ষ্ম গতিবিধি ও শব্দ শনাক্তের ক্ষমতা। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, বিড়ালের ষষ্ঠতম ইন্দ্রিয় আছেÑ যার ফলে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে, মৃত্যুর আগমুহূর্ত বুঝতে, এমনকি আত্মা দেখতে পায়। সত্যি কথা হলো, বিড়ালের সংবেদনশীল উপলব্ধি বেশ প্রখর, কিন্তু সেই ক্ষমতাকে অতিপ্রাকৃত শক্তির সঙ্গে মিলিয়ে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়। তাদের গভীর ইন্দ্রিয়গুলো চমৎকার শ্রবণশক্তি, পরিমার্জিত প্রবৃত্তি ও পরিবেশ নিয়ে সচেতনতার ফল।

প্রাচীন মিসরে বিড়াল অত্যন্ত সম্মানিত ও পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হতো ছবি: আতিক রহমান

কুসংস্কার ও ঐতিহাসিক ঘটনা

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিড়াল নিয়ে তাদের নিজস্ব কুসংস্কার আছে। প্রাচীন মিসরে বিড়াল অত্যন্ত সম্মানিত ও পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হতো। তারা বিশ্বাস করত, কোনো বিড়ালকে আঘাত করা বা হত্যা করার মানে নিজের দুর্ভাগ্য নিজে বয়ে আনা। জাপানে মানেকি-নেকো নামে পরিচিত বিড়ালের মূর্তিটি মালিকের সৌভাগ্য বয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করা হয়।

ইতিহাসজুড়ে বিড়াল নিয়ে নানান কুসংস্কার বিভিন্ন ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছে। মধ্যযুগে প্রায়ই জাদুবিদ্যায় বিড়াল ব্যবহার করা হতো। কালো জাদুর অজুহাত দেখিয়ে অনেক বিড়ালকে নির্যাতন করা হতো। বিড়াল নিয়ে অযৌক্তিক ভয় এ প্রাণীটিকে পাইকারি হত্যার দিকে পরিচালিত করেছিল। ফলে তখন ইঁদুরের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, যা পরোক্ষভাবে বুবোনিক প্লেগের বিস্তারে অবদান রেখেছিল।

আব্রাহাম লিঙ্কন বিড়াল পছন্দ করতেন

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন বিড়ালের ভক্ত ছিলেন। হোয়াইট হাউসে থাকাকালে তার চারটি বিড়াল ছিল। তার স্ত্রীকে যখন জিজ্ঞাসা করা হতো, আপনার স্বামীর শখ কী? তিনি সবসময় উত্তর দিতেন, ‘বিড়াল’। একদিন লিঙ্কন একটি কুঁড়েঘরে তিনটি বিড়ালছানা লক্ষ করলেন। তারপর তিনি তাদের কোলে নিয়ে বসলেন। এরপর ছানাগুলোর মায়ের খোঁজ নেন। তিন জানতে পারেন তাদের মা মারা গেছে। পরে তিনি ছানা তিনটির থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

 নালা নামের এই বিড়াল ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক

সবচেয়ে ধনী বিড়াল

পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষের মতো, বিড়াল রাজ্যেও আছে ‘ধনীতম বিড়াল’! নালা নামের এই বিড়াল ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক। এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইন্সটাগ্রামে আছে প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন ফলোয়ার। নালার মালিক শ্যানন এলিস এবং পুকি মেথাচিটিফান। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার এই দম্পতির আছে বিড়ালের খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ‘লাভ নালা’ নামের খাবারের এই ব্র্যান্ড এবং ইন্সটাগ্রাম তার থেকে আয় হয় মূলত নালার। এ ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনও করে থাকে নালা। বিড়াল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফলোয়ারের দিক থেকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অধিকারীও নালা!

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিড়াল

ডেইলি মিররের তথ্য অনুযাযী, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিড়ালের নাম কেফির। এ বিড়ালটি এত লম্বা যে, সে নিজেই দরজা খুলতে পারে। কেফির একটি বিশাল পোষা বিড়াল, যার আকার একটি দুই বছরের শিশুর মতো। এ বিড়ালটি দেখতে এত মিষ্টি যে, অনলাইনে তার হাজার হাজার ভক্ত আছে। কেফির মালিকের নাম ইউলিয়া মেনিনা। তিনি রাশিয়ার বাসিন্দা।

সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিড়ালের জাত

আশেরা বিড়ালকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিড়ালের জাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার দাম ১ লাখ মার্কিন ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। এত দামি হওয়ার কারণ, এ জাতের বিড়াল বেশ বিরল। এটি একটি হাইব্রিড জাত, যা আফ্রিকান সার্ভাল, একটি এশিয়ান চিতাবাঘ ও একটি গৃহপালিত বিড়ালের প্রজননের মাধ্যমে জন্ম হয়েছিল। আশেরা বন্য চেহারা ও বড় আকারের জন্য পরিচিত। বিড়ালপ্রেমীদের কাছে এ বিড়ালটি স্ট্যাটাস সিম্বল হিসেবে বিবেচিত হয়।

কত জাতের বিড়াল আছে

পৃথিবীতে ঠিক কত জাতের বিড়াল আছে তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রেসিভ ক্যাট ব্রিডার্স অ্যালায়েন্স (আইপিসিবিএ) ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭৩ জাতের বিড়াল তালিকাভুক্ত করেছে। অন্যদিকে দি ইন্টারন্যাশনাল ক্যাট অ্যাসোসিয়েশনের (টিআইসিএ) তথ্য অনুযায়ী ৫৮ জাত, ক্যাট ফ্যান্সিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিএফএ) তথ্য অনুযায়ী ৪৪ জাতের বিড়াল আছে।

বিড়াল নিয়ে মজার তথ্য

* একটি বিড়াল একশর বেশি শব্দ করতে পারে।

* একটি বিড়াল দিনে ১৪ ঘণ্টা ঘুমায়।

* মার্কিনিরা বছরে শিশুদের খাবারের চেয়ে বিড়ালের খাবারে বেশি ব্যয় করে।

* বিড়ালই একমাত্র প্রাণী যারা পায়ের তালু নয়, নখের ওপর ভর দিয়ে চলে।

* একটি বিড়ালের প্রতিটি কানে ৩২টি পেশি থাকে।

* বিড়ালের গড় খাবার প্রায় পাঁচটি ইঁদুরের সমতুল্য।

* নাক দিয়ে গন্ধ নেওয়ার পাশাপাশি বিড়াল মুখের ওপরের অংশে অবস্থিত জ্যাকবসনের নামের অতিরিক্ত অঙ্গ দিয়ে গন্ধ পেতে পারে।

* পাখিদের মতো বিড়ালের হোমিং ক্ষমতা আছে। তাদের দেহ ঘড়ি, সূর্যের কোণ ও পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ব্যবহার করে। তাই বাড়ি থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া হলেও বিড়াল আবার ফিরে আসতে পারে। তবে বিড়ালের মালিক তার বাড়ি থেকে চলে গেলে বিড়াল তাদের খুঁজে পায় না।

* বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, বিড়াল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য অসুস্থতার ঘটনা কমাতে পারে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা