× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টাক মাথা মদনটাক

আ ন ম আমিনুর রহমান

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৩ ০৯:০৬ এএম

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরের ভারত সীমান্তবর্তী চরইল বিলে মদনটাক। ছবি : লেখক

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরের ভারত সীমান্তবর্তী চরইল বিলে মদনটাক। ছবি : লেখক

সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের আদাচাই বন বিটের শেখেরটেকে দিনভর কালী মন্দির খুঁজে বেশ ক্লান্ত। দুবার নোনা কাদায় আছাড় খাওয়া ছাড়াও বুকসমান নোনাপানি পাড়ি দিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত। লঞ্চে ফিরে গা-হাত-পায়ে বেশ ব্যথা অনুভব হচ্ছিল। জ্বর এসে গেল। পরদিন মোবাইলের অ্যালার্ম ঘুম ভাঙাতে ব্যর্থ হলেও ভোরের সূর্যের আলো চোখ-মুখের ওপর আছড়ে পড়ায় ঘুম ভেঙে গেল। গায়ে জ্বর নেই, দেহে তেমন আড়ষ্টতাও নেই।

কোকিলমনির মরা পশুর নদ দিয়ে ছোট্ট লঞ্চ ‘আলোর কোল’ এগিয়ে চলছে। একটি বড় চিত্রা হরিণকে দু-পা ওপরে তুলে গাছের পাতা খেতে দেখলাম। আহ, এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখিনি! হঠাৎ তিনটি বুনো শুয়োরকে কাদামাটিতে খাবার খুঁজতে দেখলাম। ওদের ছবি তুলতে তুলতেই লম্বা লম্বা পা ফেলে টাক মাথার দুটি বিশাল আকারের পাখিকে নোনা কাদায় লম্বা চঞ্চু ঢুকিয়ে শিকার খুঁজতে দেখা গেল। এতক্ষণে সবার মন খুশিতে ভরে উঠল। ক্লিকের অবিরাম শব্দে তার প্রমাণ মিলল। জানুয়ারি ২০১৭-এর ঘটনা এটি। ন্যাড়া মাথার পাখিগুলোকে প্রথম দেখি বুড়ি গোয়ালিনী রেঞ্জের কোবাদক-এ ১৯৯৭ সালে। কিছুদিন আগেও ওদের দেখেছি সুন্দরবনের কচিখালি ও কটকাতে; চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে এবং মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কুরমা চা-বাগানে। সর্বশেষ আবার ওদের ছবি তুললাম গত ফেব্রুয়ারিতে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায়। 

টাক মাথার এই পাখিটির নাম মদনটাক। মদনচোরা, হাড়ঙ, গগ্রল নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Lesser Adjutant বা Lesser Adjutant Stork। চিকোনিডি গোত্রের মদনটাকের বৈজ্ঞানিক নাম Leptoptilos javanicus। এককালে দেশব্যাপী বিস্তৃত থাকলেও বর্তমানে এরা বিরল ও সংকটাপন্ন। মূলত সুন্দরবনেই দেখা যায়। কদাচ উত্তরবঙ্গ ও সিলেটে দেখা মেলে। ধারণা করা হয় বর্তমানে এদেশে ১,০০০-এর কম সংখ্যক মদনটাক রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ায় মদনটাকের বাস। 

প্রাপ্তবয়স্ক মদনটাক ১১৫-১২০ সেমি উঁচু। দেহের দৈর্ঘ্য ৮৭-৯৩ সেমি, প্রসারিত ডানা ২০০-২১০ সেমি ও গড় ওজন ৪.৫ কেজি। পিঠ ও ডানার ওপরটা গাঢ় ধূসর নীলাভ-কালো। গোলাকার টাক মাথা। ঘাড়-গলা হলুদ। গলার গোড়া সাদা ও তাতে থাকে কালো ফোঁটা। মাথা ও ঘাড়-গলায় অল্পকিছু হলদে-ধূসর চুলের মতো দেখা যায়। বুক, পেট, ডানার নিচ ও লেজের তলা মাখনের মতো সাদা। পালকবিহীন মুখের চামড়া ও ঘাড় লালচে। চোখের রঙ সাদা। লম্বা পা, আঙুল ও নখ সবুজাভ-বাদামি থেকে ধূসর-ছাই। বিশাল লম্বা চঞ্চুটি ফ্যাকাশে হলুদ; প্রজননকালে যার গোড়া লালচে ও আগা সাদাটে হয়ে যায়। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একইরকম। তবে পুরুষগুলো বড় ও পেটমোটা হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ অনুজ্জ্বল কালো। মাথা ও ঘাড়ের লোম ঘন। 

মদনটাক নোনাজলের বন, কাদাময় নদী বা খালপাড়, জলমগ্ন মাঠ, জলময় বন, খাল ও মোহনায় বিচরণ করে। সচরাচর একাকী, জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। অগভীর পানিতে ধীরে-সুস্থে হেঁটে হেঁটে মাছ, ব্যাঙ, ছোট সাপ, গিরগিটি, চিংড়িজাতীয় প্রাণী ইত্যাদি খায়। অনেক সময় মৃত পশুও খেতে দেখা যায়। হাড়গিলার মতো ওড়ার আগে উড়োজাহাজের মতো লম্বা দৌড় দেয় ও তারপর ওড়ে। সচরাচর নীরব থাকে, কখনও কখনও ব্যাঙের মতো ডাকে বা চঞ্চু দিয়ে ঠক্ ঠক্ শব্দ করে। 

নভেম্বর থেকে জানুয়ারি প্রজননকাল। এ সময় বনের উঁচু কোনো গাছের মগডালে ডালপালা দিয়ে মাচানের মতো বাসা বানায়। একই বাসা টুকটাক মেরামত করে বছরের পর বছর ব্যবহার করে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি। ডিমের রঙ সাদা। ডিম ফোটে ২৮-৩২ দিনে। বাবা-মা মিলেমিশে ছানাদের খাওয়ায় ও যত্ন করে। ছানারা ৩০-৩৫ দিনে উড়তে শেখে ও বাসা ছাড়ে। আয়ুষ্কাল প্রায় ১৬ বছর।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা