মাহফুজ হিশাম রহমান
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩ ১৩:২১ পিএম
বাংলাদেশে রক্তদাতার অভাব না থাকলেও যথাযথ যোগাযোগ ও সমন্বয়হীনতার কারণে প্রয়োজনীয় রক্ত পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ সমস্যা উত্তরণের জন্য কাজ করছে দেশের বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর মধ্যে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে ‘ব্লাডব্যাগ’ নামের একটি ওয়েব অ্যাপভিত্তিক প্রকল্প। কারোর রক্তের প্রয়োজন হলে আবেদন করা যাবে সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সঙ্গে। রক্ত প্রয়োজন হলে www.bloodbag.app লিংকে প্রবেশ করে রোগীর তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। তারপর তা চলে যাবে ব্লাডব্যাগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপ এবং অন্যান্য মাধ্যমে বিভিন্ন রক্তদাতার কাছে। ডোনাররা তথ্য পেয়ে স্বপ্রণোদিতভাবে যোগাযোগ করবেন রোগীর সঙ্গে। ব্লাড জোগাড় হয়ে যাওয়ার পর রোগীর সঙ্গে যোগাযোগের তথ্যসমূহ মুছে ফেলা হয় আবেদন থেকে।
https://www.bloodbag.app/-এ প্রবেশ করলে রক্তের আবেদন দেখা যাবে। কোন জেলা থেকে রক্তের আবেদন করা হয়েছে, কয় ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন তা দেখা যাবে। ওয়েব পেজের একদম নিচে দুটি বাটন দেখা যাবে ‘আমার আবেদন’ এবং ‘নতুন আবেদন’ নামে।
নতুন আবেদনে ক্লিক করলে https://www.bloodbag.app/form পেজ আসবে। তারপর রোগী এবং হাসপাতালের তথ্য দিয়ে রক্তের আবেদন করতে পারবে। যা চলে যাবে ব্লাডব্যাগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপ এবং অন্যান্য মাধ্যমে বিভিন্ন ডোনারের কাছে। এর পর তারা রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। দ্রুত সময়ে রক্তদান সম্পন্ন করতে এবং রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা করা এই প্রজেক্টটির মূল উদ্দেশ্য।
টেলিগ্রামে https://t.me/bloodbagTG চ্যানেলে নিয়মিত বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়। বর্তমানে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম এই দুই অঞ্চলের জন্য কাজ করছে। ঢাকা https://t.me/bloodbagDhaka গ্রুপ এবং চট্টগ্রাম https://t.me/bloodbagCTG গ্রুপের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করবে। টেলিগ্রামে রক্তের গ্রুপভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে রক্ত প্রয়োজনের তথ্য চলে যাবে। আবেদনের চ্যাটবট এবং টেলিগ্রাম এপিআইর মাধ্যমে আবেদনটি চলে যায় ব্লাডব্যাগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপ এবং চ্যানেলসমূহে। সেখানে যুক্ত থাকেন অসংখ্য রক্তদাতা। তারা আবেদনটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেন এবং কল করেন আবেদনকারীকে। রক্ত পাওয়ার পর আবেদনকারী রক্ত পাওয়া গিয়েছে বাটনে ক্লিক করলে, পুনরায় চ্যাটবটের মাধ্যমে পূর্বে পাঠানো টেলিগ্রাম মেসেজসমূহ ডিলেট করা হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই কার্যক্রমে মতামত দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। হোম পেজের উপরের অংশে মতামত দেওয়া যাবে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন দেশের তিন প্রান্তের তিন তরুণ। তাদের একত্রিত প্রচেষ্টায় রক্ত আদান-প্রদানের একটি ইকোসিস্টেম তৈরির কাজ চলছে। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রামে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যয়নরত রিজওয়ানুল হক, ব্লাডব্যাগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ব্যাকএন্ডের কাজ করেছেন ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার ফুলপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত ফজলে রাব্বি। ব্লাডব্যাগের আরেক প্রতিষ্ঠাতা ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতিন সাদাব লিয়ান। পরবর্তীতে প্রজেক্টে ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপমেন্ট করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত ইসলাম।
তাদের এই উদ্ভাবনী ধারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ক্যাটাগরিতে অর্জন করেছে বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড-২০২২। এই আ্যপ তৈরিতে সময় লেগেছে ১ বছর ২ মাস। চলতি মাসের ৩ তারিখে পাইলট প্রজেক্টের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমটি ইতোমধ্যে ভালো সাড়া ফেলছে।
ব্লাডব্যাগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রিজওয়ানুল হক বলেন, ‘পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু করেছি। বিভিন্ন ফিচারসমৃদ্ধ মূল সল্যুশন ডিজাইনের কাজ চলমান আছে। এ জন্য সব রক্তদান প্রতিষ্ঠান, ব্লাড ডোনার, ইউনিভার্সিটি ক্লাবসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে একযোগে কাজ করার জন্য আলোচনা করছেন। এভাবে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তাদের ওয়েব অ্যাপভিত্তিক এই কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়লে সফল হবে বলে মনে করেন তারা।