লেখা ও ছবি : মৃত্যুঞ্জয় রায়
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৩ ১৩:১০ পিএম
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৩ ১৩:২০ পিএম
ছবি : লেখক
বৃষ্টি হলো পৃথিবীর ভালোবাসার মতো। বৃষ্টিজলে স্নান করে পৃথিবীর মাটি সিক্ত হয়, ঋতুবতী হয়। আর সে মাটিতেই ফলে শস্য, ফোটে ফুল। বর্ষা মানেই মুখগোমড়া কাজল-কালো আকাশ, থাকবে হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি পড়ার শব্দ। আর বনে-বাগানে সুগন্ধে মাতোয়ারা করা ফুল। বর্ষা ঋতুর আগমনী গান বেজে ওঠে শাখায় শাখায় কদমফুলের উল্লাসে। কিন্তু এর পর থেকেই একে একে ফুটতে থাকে বর্ষাকাল আলো করা অনেক ফুল। কাজল-কালো মেঘের পটভূমি আর বৃষ্টিকণার হীরকদ্যুতি এ সময় ফোটা সব ফুলের মধ্যে সাদা রঙের ফুলগুলোকে দেয় বিশেষ আসন। বর্ষার জলে সাদা ফুলেরা যেন সুগন্ধ আর শুভ্রতায় আরও বেশি পবিত্র হয়ে ওঠে। বর্ষায় যত ফুল ফোটে তার মধ্যে সাদা ফুলের সংখ্যাই বেশি। সাদা ফুলেরা আবার ফোটে রাতে, তার সুগন্ধ বিলিয়ে জানান দেয় যে ওরা এসেছে। রাতে কেন এসব সাদা ফুলেরা ফোটে, সেটাও এক রহস্য! ওদের পরাগায়নের জন্য আকৃষ্ট করতে হয় পতঙ্গদের। রাতে রঙিন ফুলে পতঙ্গদের চোখ পড়ে না, যতটা ওরা দেখতে পায় সাদা ফুলদের। না দেখতে পেলেও ওদের ক্ষতি নেই। ওসব ফুলের সৌরভই পতঙ্গদের কাছে টেনে আনে। আর নিশাচর পতঙ্গেরা সেসব ফুলের পরাগায়ন ঘটায়।
বর্ষার সাদা ফুল দেখতে বর্ষার মধ্যেই বেরিয়ে পড়ি কিছু বাগান আর ছাদ-বাগানে। সাদা রঙের সুগন্ধ বিলানো ফুলগুলোর মধ্যে দেখা পাই বেলি, দোলনচাঁপা, কামিনী, সাদা কাঠগোলাপ, মালতি, সুগন্ধি বা অ্যারোমেটিক জুঁই, জুঁই বা যূথী, বকুল, গন্ধরাজ, শ্বেতচাঁপা, শ্বেতরঙ্গন, সুদর্শন বা স্পাইডার লিলি, রজনিগন্ধা ও মেহেদি ফুলের। গন্ধ না থাকলেও দেখা মেলে কাঠ টগর, টগর, চীনা টগর, শাপলা, কুন্দ, শ্বেতকাঞ্চন- এসব শুভ্র বসনাদের। তারার মতো মেলে থাকা পাঁচ পাপড়ির কাঠ টগর এ দেশে সাদা ফুল নামেও পরিচিত। বনে-জঙ্গলেও হয়। ডালের আগায় কয়েকটা ফুল ফোটে থোকায় থোকায়, ফুল দেখতে চরকির মতো। চীনা টগর কাঠ টগরের জাতভাই হলেও এর পাতা ও ফুল আকারে অনেক ছোট। গাছ এত ঝোপালো হয় যে, ফুলগুলো ফুটলে মনে হয় সেসব ঝোপে যেন তারার মেলা বসেছে। টগর গাছ এ দুটোর চেয়ে একটু বড় হয়, ফুলও বড়, একাধিক সারি পাপড়ির ফুল। মালতি লতানো ফুল। এগুলোও দেখতে তারার মতো। স্বর্ণচাঁপা আর শ্বেতচাঁপার পার্থক্য ফুলের রঙে- স্বর্ণচাঁপার রঙ হলদে, শ্বেতচাঁপা সাদা। সম্প্রতি এ দেশে আসা অ্যারোমেটিক বা ক্লিমেটিস জুঁই ফোটে প্রচুর, আর ঘ্রাণ ভেসে যায় অনেক দূর পর্যন্ত। দোলনচাঁপার ঘ্রাণও অনেক দূরে যায়। এ ফুলগাছ দেখতে অনেকটা আদা গাছের মতো।
বর্ষা আর ফুল- দুটোই বাংলার কবিদের কাছে প্রিয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো’ কবিতায় দেখতে পাই ‘আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল/ একলা ঘরের কোণে/ কী ভাবি যে আপন-মনে/ সজল হাওয়া যূথীর বনে/ কী কথা যায় কয়ে/ বাঁধনহারা বৃষ্টিধারা/ঝরছে রয়ে রয়ে।’