রায়হান আবিদ
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩ ১২:৪৮ পিএম
ক্যম্পাসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ত্রিভুজ সদস্যদের নৃত্য পরিবেশনা
সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে ক্লাস আর ব্যবহারিক ক্লাস। টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের জীবনে পড়াশোনার একঘেয়েমিতা যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। সেই গতানুগতিক জীবনকে স্বস্তি দিতে বাকৃবির সাংস্কৃতিক সংগঠন ত্রিভুজের আয়োজন ‘ত্রয়ী-১৪’।
বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় নৃত্য, গান, খণ্ড নাটক দিয়ে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আনন্দে মাতিয়েছিলেন ত্রিভুজের সদস্যরা।
‘সপ্তকে বিকশিত করাই আমাদের লক্ষ্য’ স্লোগান নিয়ে ২০০৩ সালের ১৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা লাভ করে ত্রিভুজ। প্রতিবছর ‘ত্রয়ী’ নামে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংগঠনটি। ত্রিভুজের বর্তমান সভাপতি একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেশের স্বাধীনতা নিয়ে তুলে ধরা হয় একটি ভিন্নধর্মী পরিবেশনা। স্বাধীনতার পর দেশে আজও চাঁদাবাজ ও ঘুষখোর থেকে পরিপূর্ণ স্বাধীন নয়, তারই চিত্র নাটিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন ত্রিভুজের নবীন ও প্রবীণ সদস্যরা। অভিনয়ের সঙ্গে দেশাত্মবোধক গানে একটি নাচ পরিবেশন করেন মনিষা, আচল, সোহানা, আলিফ, সারা ও ঐশ্বর্য। এরপর হঠাৎ মঞ্চ অন্ধকার হয়ে গেল।
শুরু হলো ক্লাসিক্যাল গানের নাচ। জেমিমা, সেজুতি, অর্পি, অরিন ও নাশমিনার অসম্ভব নৃত্য পুরো মিলনায়তন মাতিয়ে রেখেছিল। ক্লাসিক্যাল গান হলেও গানের সঙ্গে আধুনিক ওর্ ক মিউজিকের মিশ্রণে নৃত্য পরিবেশনা নতুন করে আলোড়ন জাগায় দর্শকদের মাঝে। এরপর আসে সমন্বিত গান পরিবেশনার পালা। রবীন্দ্রনাথের ‘মনের মানুষ’, আধুনিক গান ‘একলা চলো রে’ ও শিরোনামহীনের ‘আবার হাসি মুখ’ -এ তিনটি গানের মিশ্রণে গাওয়া হয় সমন্বিত গান। সব বয়সের দর্শকের মন জয় করতেই তারা ক্লাসিক, আধুনিক ও রক গানের মিশ্রণে পরিবেশন করেন কোরাস। গান শেষ হতেই মঞ্চে পর্দা নেমে গেল। শুরু হলো নাটিকার পর্ব। ‘ডু অর ডাই’ শিরোনামে নাটিকা পরিবেশন করেন হিমা, অনন্ত, আবির, ফাগুন ও মর্তুজা। খুবই হাস্যরসাত্মক নাটিকা সরাসরি পরিবেশনা দেখে অনেকেই হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিলেন।
হাসি শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ মঞ্চ অন্ধকার। এবার ডুয়েট করলেন তিনজন মিলে। হ্যাঁ, তিনজন মিলে কীভাবে ডুয়েট হয় প্রশ্নটা সবারই জাগতে পারে। মনিষা, উপমা ও কৌশিকের এক ভিন্ন ধরনের ডুয়েট ছিল। উপমা অর্ধেক ছেলে পোশাকে অর্ধেক মেয়ে পোশাকে দুজনের মাঝে এমন নৃত্য দেখাল যেন উপস্থিত সবার মুখে বিস্ময়কর চিহ্ন ভেসে উঠেছে।
এরপর রাফিদ পরিবেশন করলেন শিরোনামহীনের জনপ্রিয় গান জাদুঘর। গানের মাঝে হঠাৎ করে রাফিদ মঞ্চের পেছনে গিয়ে জাদুঘরের পোশাকে মঞ্চে আবির্ভূত হন। এরপর হাওয়ারা চুপি চুপি গানের সঙ্গে শুভ, মুর্তজা, শৈবাল, নাশমিন ও সোহাগের খণ্ডনাটক। আবার আঁধার ঘনিয়ে এলো মঞ্চে। এক ভিন্ন ধরনের গান সোনার বাংলা সার্কাসের ‘এপিটাপ’। গানটি পরিবেশন করেন রিয়াদ। এরপর কোঁকড়া চুল শিরোনামে গানের সঙ্গে খণ্ডনাটক পরিবেশন করেন উপমা, নুসরাত, ওয়াশিম ও পূজা। নাটক শেষে এবার দুষ্টু মিষ্টি পরিবেশনা যার নাম ‘নটি দ্য দুষ্ট শো’।দর্শকদের মাতিয়ে রাখতে জায়েদ খান যেন সাকিব খানকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল মঞ্চে। এবার একে একে খুব চমকপ্রবণ নাচ পরিবেশন করেন বয়েস ও গার্লস গ্ৰুপ।
কোক স্টুডিওয়ের দেয়রা গানে ১৬ জনের সমন্বিত নৃত্যটির মাধ্যমে বেশ সুন্দরভাবে গ্রামীণ বাংলাকে তুলে ধরেছেন তারা। এবার উপস্থাপিকার ঘোষণা হলো আজ বিদায়ের পালা। ত্রিভুজের সব সদস্যদের করতালির শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হলো ‘ত্রয়ী ১৪’।