ইসতিয়াক আহমেদ
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩ ১৩:৫২ পিএম
নিঃসঙ্গ জাহাজটিই এখন দর্শনার্থীদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু
সাল ২০১৭, সোমালিয়ার উপকূল কাঁপানো এক জাহাজ ফিরে এসেছে নিজ দেশে। নিজেই আপদ হয়ে বিপদে দিন কাটছে যার। সহজ ভাষায় অভিশপ্ত সেই জাহাজটিই কি না বলি হলো ঘূর্ণিঝড় মোখার। সে যাত্রায় চিটাগাং বন্দরকে ছেড়ে দিলেও মোখা ছাড়ল না ক্রিস্টাল গোল্ডকে। কপাল পোড়া সেই জাহাজটিও বারবার বেঁচে গেল সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। পেছনে আছে অনেক গল্প।
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় কক্সবাজার বা পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত শীর্ষে অবস্থান করলেও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য কোনো অংশেই কম নয়। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই সাগর সৈকতের সবুজ ঝাউবন, লাল কাঁকড়া ও নীলাভ জলরাশি যেন সর্বদা ভ্রমণপিপাসুদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। পারকি সমুদ্রসৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার ও প্রস্থ স্থানভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ ফুট। স্থানীয়দের কাছে উপকূলীয় পারকি সমুদ্রসৈকত ‘পারকির চর’ নামে পরিচিত।
বঙ্গোপসাগরে যেখানে কর্ণফুলী নদী মিলিত হয়েছে, সেখানেই এই পারকি বিচ অবস্থিত। পারকি বিচের অবস্থান আনোয়ারা উপজেলায় চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে। এই পারকি সৈকত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, অনেকে এটিকে পারকির চর হিসেবেও উল্লেখ করে থাকেন। সাগরের গর্জন আর ঢেউয়ের মিতালি এবং সাগরের নীল পানি তীরের ঝাউবনে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভিড় করছে পারকি সৈকতে। যেখান থেকে উপভোগ করা যায় সৈকতের বালুচরে লাল কাঁকড়ার ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য কিংবা দূরে গভীর সমুদ্রে নোঙর করা কিংবা সমুদ্র পথে চলতে থাকা ছোট-বড় জাহাজের সারি।
সমুদ্রসৈকতের সঙ্গেই ঝাউবনের ছায়াতলে গড়ে উঠেছে খাবারের দোকানসহ অনেক দোকানপাট। এর সঙ্গে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। এ ছাড়া রয়েছে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্পিডবোট, সমুদ্রতীরেই ঘুরে বেড়ানোর জন্য সি-বাইক আর ঘোড়া। এজন্য অবশ্য আপনাকে নির্দিষ্ট ভাড়া গুনতে হবে ঘণ্টাপ্রতি হিসাবে।
পারকি সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে দানবাকার ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজকে ঘিরে আগ্রহের কমতি নেই। যেন বিচে আসা মানুষের আকর্ষণের মূল বিন্দু থাকে ক্রিস্টাল গোল্ড নামক বিশাল আকার জাহাজটি। এ জাহাজটি জাপান থেকে ১৯৮৫ সালে আমদানি করা হয়। ২০১৭ সালের ২৮ মে গভীর সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা ভয়াবহ রূপ নেয়। ফলে চট্টগ্রামে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরবতী সময়ে ৩০ মে সকালে ঘূর্ণিঝড় মোখা চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে তীব্র বাতাসে নোঙর ছিঁড়ে পারকি সমুদ্রসৈকতে আটকে পড়ে বিশাল আকারের মালবাহী জাহাজ ক্রিস্টাল গোল্ড। জাহাজের মালিকপক্ষ অনেক চেষ্টা করেও কোনোভাবেই জাহাজটিকে সাগরে ভাসাতে পারেনি, পারেনি অন্যত্র সরিয়ে নিতে।
পরবর্তী সময়ে ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আটকে পড়া জাহাজটি কেনে এবং জাহাজটি কেটে নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করে। কিন্তু নির্দিষ্ট ডক ছাড়া জাহাজ কাটার কোনো নিয়ম নেই। ফলে সেই যাত্রায় বেঁচে যায় জাহাজটি। একা ও নিঃসঙ্গ জাহাজটি কর্ণফুলী নদী আর চট্টগ্রাম বন্দরের যতই ক্ষতির কারণ হোক না কেন, দিন দিন বাঁধা পড়তে থাকে মানুষের ভালোবাসায়। একা নিঃসঙ্গ জাহাজটিই এখন দর্শনার্থীদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
কীভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহর থেকে পারকি বিচে যাওয়ার কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা রয়েছে। মূলত বিমানবন্দর এলাকা অথবা বোট ক্লাব থেকে কর্ণফুলী নদী পার হলেই খুব সহজে অটোরিকশায় করে পারকির চরে যাওয়া যায়। এই সৈকত বারাসাত ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। প্রথমে আপনাকে চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে করে আসতে হবে বোট ক্লাবে, তারপর কর্ণফুলী নদীর জেটিঘাট থেকে নৌকায় করে কর্ণফুলী নদী পার হতে হবে। কর্ণফুলী নদীর ওপারে আনোয়ারা উপজেলা। আনোয়ারায় এসে আপনাকে অটোরিকশা অথবা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে পৌঁছাতে হবে পারকি বিচে।