আরাফাত আহমেদ রিফাত
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩ ১২:১৩ পিএম
এ গল্প ১৯৩৮ সালের, কেরেলি নামের এক হাঙ্গেরিয়ানের। তিনি ছিলেন হাঙ্গেরিয়ান আর্মির সদস্য। ছিলেন দেশটির সেরা পিস্তল শুটার। জয় করেছেন সব ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ। সবাই নিশ্চিত ছিল ১৯৪০ সালের অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল কেরেলিই পাবেন।
১৯৩৮ সালে হাঙ্গেরিয়ান আর্মির এক ক্যাম্পেইন চলছিল। কেরেলিকেও সেখানে যোগ দিতে হয়। একদিন ক্যাম্প চলাকালে একটি গ্রেনেড ফেটে তার ডান হাত নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় তার সামনে দুটি রাস্তা খোলা ছিল- এক, সারা জীবন কান্না করবেন অথবা কোথাও লুকিয়ে একাকী বসবাস করবেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। যে হাতটি অবশিষ্ট ছিল সেই হাতেই নজর দিলেন। এক মাস ধরে হাতের চিকিৎসার পরে ট্রেনিং শুরু করলেন বাঁ হাত দিয়ে। দীর্ঘ এক বছর তিনি বাঁ হাতে শুটিং প্র্যাকটিসের পর ১৯৩৯ সালে আবার সবার সামনে ফিরে আসেন।
সে বছরই হাঙ্গেরির ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেন। সবাই তাকে দেখে বলল, ‘এই হচ্ছে শুটিংয়ের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা। তোমার সঙ্গে এত কিছু হওয়ার পরও তুমি আমাদের দেখতে এসেছ, আমাদের অনুপ্রেরণা দিতে এসেছ।’ জবাবে কেরেলি তাদের বলেন, ‘আমি তোমাদের অনুপ্রেরণা দিতে আসিনি, আমিও তোমাদের মতো একজন প্রতিযোগী। দেশের সেরা শুটারদের বরাবরের মতোই বাঁ হাতে হারিয়ে তিনি আবার জয়ী হয়ে ফেরেন।
তার লক্ষ্য ছিল দেশের গণ্ডি পার হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোনো কিছু জয় করা। ১৯৪০ সালের অলিম্পিক বন্ধ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে। যুদ্ধের কারণে ১৯৪৪ সালের অলিম্পিকও অনুষ্ঠিত হয়নি। কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। কারণ শৈশবের স্বপ্ন যে তার অধরাই থেকে যাবে। হতাশাকে জয় করে মন দিলেন প্র্যাকটিসে। অংশ নিলেন ১৯৪৮ সালের অলিম্পিকে। সে সময় তার বয়স ছিল ৩৮ বছর। এই বয়সে এসে তরুণ শুটারদের সঙ্গে পেরে ওঠা কম কঠিন নয়।
কিন্তু এক হাতেই জাদু দেখালেন তিনি, যাকে বলে কি-না বুড়ো হাড়ের ভেলকি! এক হাতের ভেলকিতে ওই বছরের অলিম্পিকে জয় করলেন গোল্ড মেডেল। সৃষ্টি করলেন এক অনন্য নজির। ১৯৫২ সালের অলিম্পিকেও অংশ নিয়ে স্বর্ণ জয় করেন কেরেলি। পরপর দুবার অলিম্পিক গোল্ড জয় করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন এক হাতের জাদুকর।