রাফিয়া তাহসিন ইথিকা
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৩ ১২:৪০ পিএম
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩ ১৩:১৯ পিএম
অলংকরণ : মিথিলা ভৌমিক, সপ্তম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
পিন্টুর বয়স দশ বছরের বেশি হবে না। ওদের বাড় বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানায়। মা-বাবার সঙ্গে থাকে। বাবা কয়েক মাস যাবৎ অসুস্থ। তার বাবা মাছ ধরতে গিয়ে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। চিকিৎসা করার পরও তিনি ভালোভাবে হাঁটা-চলা করতে পারেন না। বাবা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে পিন্টুর মাকেই সংসার চালাতে হয়। সংসার চালাতে তার কষ্ট হয়। এটা দেখে পিন্টু ভাবল সেও বাবার মতো মাছ ধরবে। কিন্তু পিন্টুর মা তাকে যেতে দেয় না। পিন্টু তো বড় হয়নি। নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে যদি কোনো বিপদ হয়!
একদিন পিন্টুর মা জমিতে কাজ করতে যান। বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ থাকে। পিন্টুর মা ভিজে বাড়ি ফেরেন। রাতে মায়ের খুব জ্বর হয়। ওষুধ কিনতে হবে। টাকা নেই। তাই পিন্টু ঠিক করল, তাকে কিছু করতেই হবে।
পিন্টু তার বাবার জেলেবন্ধুদের কাছে যায়। মাছ ধরতে নদীতে যায়। বৃষ্টি হবে হবে ভাব। পিন্টু সাঁতার কাটতে পারে না। তবে মনে এক প্রবল বিশ্বাসÑ এই প্রথম মাছ ধরতে এসেছে সে। সফল হতেই হবে। নদীর মাঝখানে নৌকা নিয়ে পৌঁছে গেছে সে। ঠিক তখনই বৃষ্টি শুরু হলো। ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে আর ঝোড়ো হাওয়ায় নৌকাটা জোরে জোরে দুলতে থাকে। পিন্টু একটু ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু হাল ছাড়বার পাত্র সে নয়। মাছ ধরেই বাড়ি ফিরবে। এদিকে পিন্টু এতক্ষণ ধরে ফিরছে না বলে পিন্টুর মা অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে যায়। পিন্টুর এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে, ‘কীরে ছোটু, পিন্টু কোথায়?’ ছোটু বলে, “পিন্টু তো মাছ ধরতে গিয়েছে। শুনে পিন্টুর মা যেন আকাশ থেকে পড়ল। এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে সে একাই মাছ ধরতে গিয়েছে। পিন্টুর মা কান্নাকাটি করা শুরু করল। ওদিকে পিন্টু জাল ফেলছে। কিন্তু জালে একটা মাছও ওঠে না। এতে পিন্টুর একটু মন খারাপ হয়। তবে সে মন খারাপ না করে আবার জাল ফেলে নদীতে। কিন্তু এবারও কিছু না ওঠায় পিন্টু রেগে গিয়ে বলে, ‘মাছ আজ কীভাবে না ওঠে আমি দেখব!’ তারপর সে আবার জাল ফেলে। পিন্টুর মনে হয় জালে কিছু একটা আটকে আছে। সে জোরে জোরে তুলতেই উঠে আসে একটা মাছ। খুশিতে আত্মহারা পিন্টু। এভাবে কয়েকবার জাল ফেলার পর অনেকগুলো মাছ পায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। নৌকাটা যেন উল্টে যাবে এমন ভাব। বাইরে আরও জোরে ঝড় বইতে থাকে। পিন্টুর মা চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। দরজার সামনে পিন্টু এসে দাঁড়ায়। কাঁধে ঝোলানো মাছভর্তি ব্যাগ। সবাই হতবাক। মা দৌড়ে গিয়ে পিন্টুকে জড়িয়ে ধরেন। আর বলতে থাকেন, ‘কতবার না বলেছি, আমাকে না বলে কোথাও যাবি না। আজকে তোর কিছু হয়ে গেল কী করতাম আমি?’ পিন্টু বলে, ‘মা, তুমি চিন্তা করো না। আমি ঠিক আছি। আজ অনেকগুলো মাছ ধরে নিয়ে এসেছি। এগুলো বিক্রি করে আমরা অনেক টাকা উপার্জন করতে পারব। তোমার আর বাবার ওষুধ কেনার টাকা হয়ে যাবে।’
সপ্তম শ্রেণি, সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী