× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রচ্ছদ

গয়নায় ফিউশন

শাহিনা নদী

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩ ১৫:৩৬ পিএম

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৩ ১৩:০৫ পিএম

মডেল : জলি, নীলাঞ্জনা, সানজু জন; জুয়েলারী : বিশ্বরঙ; মেকআপ : রিজভী হোসেন; ছবি : জি. এম. সুজন

মডেল : জলি, নীলাঞ্জনা, সানজু জন; জুয়েলারী : বিশ্বরঙ; মেকআপ : রিজভী হোসেন; ছবি : জি. এম. সুজন

গয়না আভিজাত্যের প্রতীক। সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ও সাজে গয়নার প্রাধান্য হাজার বছর আগে যেমন ছিল, আজও তেমনি রয়েছে। তবে পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গয়নার ডিজাইনে এসেছে ভিন্নতা। রঙ, নকশা, মোটিফ ও উপাদানের সংমিশ্রণে দেখা মেলে ফিউশনধর্মী গয়না 

নারীর নিত্যদিনের ব্যবহার্য ও শখের জিনিসের মধ্যে অন্যতম গয়না। বাহারি ডিজাইনের জুয়েলারি নারীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। তাই তো বিয়েবাড়ি বা ঘরোয়া অনুষ্ঠান, নারীর গয়না চাই-ই চাই। এছাড়া উৎসবের আমেজ থাকুক বা না থাকুক জুয়েলারি নারী পরবেই, হোক সেটা ভারী কিংবা হালকা ডিজাইন। গয়না নারীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব ও রুচিশীলতাও ফুটিয়ে তোলে।

একটা সময় বাঙালি মেয়েরা গয়না বলতে জানত সোনা, রুপা বা পাথরের গয়না। এসব গয়নার চল সব সময়ই ছিল। তাই এখনকার ফ্যাশনপ্রেমী তরুণীরা চায় ভিন্ন ধাচের গয়না। কারণ আধুনিক সময়ে নারীর রূপ-সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে জুয়েলারি সামগ্রীর বিকল্প নেই।

জুয়েলারির ইতিহাসও বেশ পুরোনো। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ গয়না পরে আসছে। সৃষ্টির আদিকালে মানুষ যখন স্বর্ণ-রৌপ্য চিনত না, তখনও তারা গাছের লতাপাতা, ফুল ইত্যাদি দিয়ে গয়না তৈরি করত। এরপর সোনা, রুপা, মুক্তা ও হীরার জুয়েলারির যুগ আসে। তখন বেশিরভাগ মানুষই সোনা ও রুপার জুয়েলারি পরিধান করত। নামমাত্র কিছুসংখ্যক সম্ভ্রান্ত শ্রেণির মানুষ মুক্তা বা হীরা ব্যবহার করত। এখন শুধু নারীরাই নয়, ফ্যাশনপ্রেমী তরুনরাও পরছেন ফিউশনধর্মী নানা গয়না। আংটি, চেন, কানের দুল কিংবা ব্রেসলেট বাদ পড়ছে না কোন কিছু। 

বর্তমান জুয়েলারির উপাদান 

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফ্যাশন দুনিয়া নতুনত্ব খুঁজছে হন্যে হয়ে। সময়ের সঙ্গে মানুষের রুচিবোধ, ফ্যাশন ও চাহিদারও পরিবর্তন হয়েছে। অনেকেই নতুন নতুন ডিজাইনের জুয়েলারি পরতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে গোল্ড, ডায়মন্ড বা অন্যান্য দামী ধাতু খুব বেশি সাধ্যের বাইরে চলে যায়। অনুষ্ঠানভেদে গোল্ড, ডায়মন্ড বাদে কম বাজেটে ভিন্ন ধরনের অলঙ্কার পরার সুযোগ তৈরি হয়েছে এখন। তাই মুক্তা, ডায়মন্ড, প্লাটিনাম ছাড়াও গয়না তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে তামা, পুঁতি, সুতা, শামুক, ঝিনুক, স্টোন, মাটি, কাপড়, পাথর, পিতল, কাঠ, বোতাম, প্লাস্টিক, কয়লা, মুখোশ, কুলা, কুড়ি, রুদ্রাক্ষ, তারকাটা, কুন্দন, দড়ি, মিনার ইত্যাদি উপাদান। এসব উপাদান দিয়ে বাহারি ডিজাইনের অনন্য ফ্যাশন আইডিয়া জুয়েলারি শিল্পে আমূল পরিবর্তন এনেছে। ফাইবার দিয়েও আজকাল তৈরি হচ্ছে টেম্পল পেনডেন্ট, ইয়াররিং, আংটি; সঙ্গে যোগ হয়েছে সেমি প্রেশাস স্টোন, কুন্দন ও মিনাকারি ডিজাইন।

একটা সময় যেসব জুয়েলারি তৈরি হতো রুপা দিয়ে, এখন সেটাই তৈরি হচ্ছে জার্মান সিলভার অথবা জিঙ্ক অক্সাইড দিয়ে। অক্সিডাইজন টেম্পল নামের এই জুয়েলারিগুলো দামে কম, টেকসই ও যেকোনো সাজের সঙ্গে মানিয়ে যায়। চোখের সামনে যা কিছু আছে তা দিয়েই নকশাকাররা তৈরি করছেন গয়না। সময়ের সঙ্গে মানুষ যেমন আধুনিক হচ্ছে, ঠিক একই স্রোতে গা ভাসিয়ে গয়নার ডিজাইনেও নতুনত্ব আনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড বিশ্বরঙ-এর স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা বলেন, ‘আদিকালে জুয়েলারি শুধু সোনা-রুপার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। নব্বই দশকের দিকে এর সঙ্গে যোগ হয় গোল্ড প্লেটে তৈরি গয়না। বর্তমানে জুয়েলারি সোনা কিংবা রুপার মধ্যে আবদ্ধ নেই। ফ্যাশনশিল্প এখন অনেক এগিয়ে। প্রতিনিয়ত নানান সব উপাদানে তৈরি নতুন জুয়েলারি যুক্ত হচ্ছে। ১০০ বছরের পুরোনো গয়নার ডিজাইন ও উপাদান আধুনিকায়নের মাধ্যমে নতুনত্ব আনছে জুয়েলারির কালেকশনে। বর্তমানে এমন কোনো উপাদান নেই, যা জুয়েলারি তৈরি থেকে বাদ পড়ছে।’

পোশাকের সঙ্গে গয়নার মেলবন্ধন 

পোশাকের সঙ্গে গয়নার রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র। যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানানসই গয়নায় নারীর স্বকীয়তা বাড়ে বহুগুণে। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, টি-শার্ট, কুর্তি, টপস, গাউন ইত্যাদি যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানানসই গয়না দেয় অভিজাত লুক। তবে এখন শুধু পোশাকের সঙ্গে মানানসই গয়নায় নয় কন্ট্রাস্ট করেও পরছেন গয়না। পোশাক ও গয়নার এমন বৈসাদৃশ্য মেলবন্ধনে ট্রেন্ডি লুক আনে। তবে শাড়ির সঙ্গে অক্সিডিজাইনের গয়না ভালো মানায়। শাড়ির পাড় যদি সোনালি রঙের হয় তাহলে গোল্ডের সঙ্গে অক্সি মিক্সড গয়নায় সুন্দর দেখাবে। এ ছাড়া শাড়ির পাড়ে লেস লাগানো থাকলে গোল্ডেন ও পার্লের গয়নায় বেশ মানায়। সাধারণত দেখা যায়, কাপড়ে ভারী কাজ থাকলে অনেকে বড় কানের দুল পরেন। ঝিনুক ও মুক্তার গয়নার সঙ্গে কাতান, সিল্ক, জর্জেট শাড়ি পরলেও ভালো লাগবে। পোশাকের সঙ্গে জুয়েলারি কেমন হওয়া উচিত, এটি মূলত নির্ভর করে স্থান, কাল ও ব্যক্তিত্বের ওপর। এ ছাড়া বহনযোগ্যতা, শাড়ির টোন ও মিনার ওপর ভিত্তি করেও জুয়েলারি নির্বাচন করা হয়। সুতার কাজ করা নীল, কালো, সাদা ইত্যাদি রঙের কাপড়ের সঙ্গে সিলভার বা অক্সিডিজাইনের জুয়েলারি মানানসই লুক তৈরি করে। অন্যদিকে লাল, কমলা ইত্যাদি গাঢ় রঙের পোশাকের সঙ্গে গোল্ডের জুয়েলারি খুব ভালো যায়। সুতার তৈরি গয়না জামদানি, মসলিন থেকে শুরু করে তাঁতের শাড়ি এবং ট্রেন্ডি ফ্যাশনের সঙ্গে সহজে মানিয়ে যায়। টপসের সঙ্গে মিলিয়ে মেটাল কিংবা মুক্তার গয়না পরতে পারেন। 

আরও পড়ুন : রঙের স্নিগ্ধতায়


যুগ যুগ ধরে বাঙালি নারীর সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো গয়না। সময়ের সঙ্গে জুয়েলারি শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে এমন কোনো উপাদান নেই, যা দিয়ে গয়না তৈরি করা হয় না। কাপড়, দড়ি ও সুতোর সংমিশ্রণে তৈরিকৃত জুয়েলারিগুলো বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া কাঠের ওপর খোদাই করে বিভিন্ন পশু-পাখি, ফুল, লতাপাতা ও মূর্তির কারুকাজ করা গয়নার চাহিদাও রয়েছে। যেকোনো পোশাকের সঙ্গে এ ধরনের গয়না সহজেই মানিয়ে যায়। বাঙালি নারীর শাড়ির প্রতি যেমন দুর্বলতা, ঠিক একইভাবে দুর্বলতা রয়েছে গয়নার ওপরও। পোশাকের সঙ্গে ক্রেতারা যেন একই স্থান থেকে পছন্দের গয়নাও ক্রয় করতে পারে, সেজন্য ফ্যাশন হাউসগুলো কাজ করছে গয়না নিয়েও। শুধু নারীরাই নয়, পুরুষরাও এখন ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরছেন গয়না। 
বিপ্লব সাহা
স্বত্বাধিকারী, বিশ্বরঙ

আবার সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে পরতে পারেন কাঠ, পুঁতি ও নানানরকম বিডসের গয়না। টি-শার্ট কিংবা ফতুয়ার সঙ্গে আদিবাসী মোটিফ ও রিকশাচিত্রের গয়না ফ্যাশনে এনে দেবে ফিউশন লুক। একরঙা পোশাকের সঙ্গে নানান রঙের পুঁতির গয়নার মাধ্যমে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন। এ ছাড়া যেকোনো পোশাকের সঙ্গে পরা যায় এমন একটি কমন জুয়েলারি হিসেবে মাল্টি স্টোনের গয়না সব সময় ব্যবহার করা যেতে পারে। আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে তরুণীরা মুক্তা, স্বর্ণ বা হীরার তৈরি ছোট টপ কানের দুল ও লকেট নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন৷ ফরমাল পোশাকে ফরমাল লুকের জন্য অক্সি ও পার্লের জুয়েলারি স্বস্তিদায়ক এবং ফ্যাশনে নতুনত্ব বিবেচনায়ও আপনাকে আলাদা করে তুলবে অনেকের মাঝে।


বাহারি ডিজাইনের জুয়েলারি

অলংকার হলো ব্যক্তিত্বের একটি অংশ। বর্তমানে জুয়েলারির ভান্ডার বিস্তৃত। সোনা বা রুপা দিয়েই এককালে যে গয়না তৈরি হতো, এখন তাতে এসেছে নানা বৈচিত্র্য। মেটেরিয়াল তো পাল্টেছেই, সেই সঙ্গে পাল্টেছে গয়নার নকশাও। ভারী কাজের জন্য যে গয়নার এককালে সুনাম ছিল, এখন তা হয়েছে হালকা ও পাতলা। টিকলি থেকে শুরু করে কানের দুল, হার/মালা, চুড়ি, কুন্দন, কঙ্কাবতী, আংটি, নূপুর, নেক পিস, বাজু, চোকার, নথ, পায়েল- সবকিছুই জুয়েলারির অংশ। প্রতিটি জুয়েলারির রয়েছে শত শত ডিজাইন। এ শিল্পে এতটাই পরিবর্তন এসেছে যে, আকৃতির দিক থেকে জুয়েলারি এখন ফুল, লতা-পাতায় সীমাবদ্ধ নেই। কুলা, উড়া, হাতি, দুর্গা, প্রজাপতি, ময়ূর, পালকি ইত্যাদি সবকিছুরই নকশা এখন গয়নায় পাওয়া যায়। ডিজাইনে প্রাকৃতিক উপাদান, দেশীয় মোটিফ, উপকরণ ও নকশাশৈলীর অসাধারণ ব্যবহারে গয়নাগুলো পাচ্ছে ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য। 

হাল ফ্যাশনে সুতার তৈরি গয়নার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সুই-সুতার নকশা যা কি না বহু বছর ধরে সীমাবদ্ধ ছিল কাঁথা কিংবা পোশাকের জমিনে। তা এখন উঠে এসেছে গয়নায়। সুতা ও কাপড়ের তৈরি এসব গয়না বহন ও ব্যবহার উভয় দিক থেকেই আরামদায়ক। বর্তমান বাজারে এসব গয়নার চাহিদা আকাশচুম্বী।

দরদাম

জুয়েলারির দাম মূলত এতে ব্যবহৃত উপাদান, ডিজাইন, আকৃতি, গুণগত মান ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে নির্ধারিত হয়ে থাকে। সাধারণ গয়নার এক ধরনের দাম, অন্যদিকে গর্জিয়াস বা ভারী কাজ করা গয়নার দাম আরেক রকম। এ ছাড়া গয়নার পাইকারি ও কমার্শিয়াল রেটও এক নয়। অনেক গয়না ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড করে তৈরি করা হয়। সেগুলোর দামের সঙ্গে রেগুলার জুয়েলারির দামের মধ্যেও ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। তবে বাজেট ফ্রেন্ডলি জুয়েলারি ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন। 

যেখানে পাবেন

জুয়েলারি কমবেশি সব জায়গায়ই পাওয়া যায়। তবে ব্র্যান্ডের জুয়েলারি পাবেন ফ্যাশন হাউসগুলোতে৷ এমনই কয়েকটি ফ্যাশন হাউস হলো বিশ্বরঙ, আড়ত, অরণ্য, বিবিয়ানা, রঙ বাংলাদেশ ইত্যাদি। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউ মার্কেট ও গাউছিয়ায় জুয়েলারির হরেক রকম রয়েছে। সময় ও পরিশ্রম সাশ্রয় করতে এখন ঘরে বসে অনলাইনেও বিভিন্ন ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুক পেজ থেকে জুয়েলারি ক্রয় করার সুযোগ রয়েছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা