× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সুনীল ঝরনার জলে

রিয়াসাদ সানভী

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩ ১৪:০৪ পিএম

বর্ষায় ভ্রমণপ্রেমীদের পছন্দের গন্তব্যের শীর্ষে থাকে মিরসরাই-সীতাকুণ্ড	 ছবি : ট্যুর বীজ

বর্ষায় ভ্রমণপ্রেমীদের পছন্দের গন্তব্যের শীর্ষে থাকে মিরসরাই-সীতাকুণ্ড ছবি : ট্যুর বীজ

সুনীল ঝরনার জলে

বাংলাদেশে ঝরনার স্বর্গ বলা হয় মিরসরাই সীতাকুণ্ড অঞ্চলকে। কেননা এই রুটেই আছে ১০টি ঝরনা। বিস্তারিত লিখেছেন রিয়াসাদ সানভী

নাপিত্তাছড়া

ঢাকা ছাড়ার সময় দেখে এসেছি পরিষ্কার আকাশ। মধ্যরাতের পর কুমিল্লার সীমানা পার হতেই ঠান্ডা হাওয়া বাসের জানালা গলে ঝাপটা মারতে লাগল শরীরে। সঙ্গে বৃষ্টির ফোঁটা। খুব ভোরে যখন নয়দুয়ারী বাজারে নামলাম, ততক্ষণে পুরো মিরসরাই এলাকা বৃষ্টিতে কাকভেজা। আমাদের এবারের অভিযান এমন এক ঝরনার খোঁজে, যার খবর খুব বেশি মানুষের কাছে নেই। টিপরাখুমের পথ ধরলাম। বৃষ্টিভেজা কর্দমাক্ত গ্রামীণ পথ পেরিয়ে, ধানক্ষেত পেছনে ফেলে পুবদিকে সোজা সবুজ পাহাড়ের সারি। আমরা চলেছি সেদিকেই।

পাহাড় থেকে ঝিরি নেমে এসে লোকালয়ের দিকে গেছে। টিপরাখুম থেকে সেই ঝিরি ধরে এগোতে লাগলাম আমরা। মিনিট বিশ-পঁচিশেক হেঁটেই দেখা পাওয়া গেল দিনের প্রথম বিস্ময়ের। পাথরের মসৃণ দেয়াল নেমে এসেছে ঝিরিপথে। গড়িয়ে পড়ছে পানির ধারা। এর নাম ছোট নাপিত্তাছড়া ঝরনা। এর পরের গন্তব্য বান্দরখুম। যেতে হবে নাপিত্তাছড়া ঝরনা পার হয়ে। এবার খাড়া পাহাড় বাইতে হবে। নাপিত্তাছড়া ঝরনার উৎসমুখের পাশেই পাহাড় উঠে গেছে আকাশমুখী।

পিচ্ছিল সে পথ ভয় ধরালেও অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ সে ভয় তাড়াল। ওপরে উঠে দেখা মিলল এ এলাকার স্কাইলাইনের। ভরা বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে। কিন্তু রেশ কাটেনি। স্বভাবতই সবুজে সবুজময় চারপাশ। ট্রেইল ধরে এগোতে লাগলাম আমরা। যদিও ১০ মিনিটের মধ্যেই আবার নামতে হলো ঝিরিতে। বান্দরখুম ঝরনার রূপ শিহরণ জাগানো। সেই উত্তেজনা বাকিটা পথ আচ্ছন্ন করে রাখায় পথের দূরত্ব কষ্টের কারণ হয়নি। ঝিরিতে বেশ পানি। পায়ের পাতা ছাড়িয়ে সে স্রোত মাঝেমধ্যেই উঠে আসছে হাঁটু পর্যন্ত। বেশ বড় কয়েকটি পাথর পেরোতেই খানিক দূরে গাছের ফাঁকে চোখে পড়ল বান্দরখুম ঝরনার ওপরের অংশ। সোজা আকাশের পানে উঠে যাওয়া দুই পাহাড়ের মাঝামাঝি নেমে এসেছে ঝরনাধারা। নেমে আবার নিচের পাথরে পড়ে ভাগ হয়ে গেছে তিনটি। কাছাকাছি আছে আরেকটি ঝরনা। নাম বাঘবিয়ান। এর উচ্চতা আরও বেশি। বান্দরখুম থেকে একদমই যেতে মন চাইছিল না।

সুপ্তধারা, সহস্রধারা

আমরা চলে এসেছি সীতাকুণ্ড বাজারে। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে খুবই কাছে এ ইকো পার্ক। জনপ্রতি ২০-২৫ টাকা ভাড়া দিয়েই পৌঁছে যাওয়া যায় পার্কের গেটে। ভেতরে যাওয়ার অনুমতি নিয়ে উচুঁনিচু পিচঢালা বৃষ্টিধোয়া পথে চললাম জাগ্রত সুপ্তধারা দর্শনে। গেট থেকে হাঁটা শুরু করলে প্রথমে সুপ্তধারায় যাওয়ার নির্দেশনা আছে। পাহাড়ি পথে এখানে সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে একেবারে ঝিরিপথ পর্যন্ত। আমরা সে পথেই নেমে গেলাম ঝিরিতে। নেমেই বুঝলাম প্রকৃতিদেব আমাদের প্রতি প্রসন্ন। পানিতে টইটম্বুর ঝিরি। তার মানে সুপ্তধারায় বৃষ্টিধোয়া জলের বান ডেকেছে।

বেশ কয়েকবার ঝিরি এপার-ওপার করতে হলো। জঙ্গলের পথে কিছুটা হাঁটতেও হলো। শেষের দিকে ঝিরি মোটামুটি মসৃণ। শেষ বাঁকটি ঘুরতেই প্রথম দর্শনে মাথা একেবারে ঘুরিয়ে দিল সুপ্তধারার গর্জন। পাথুরে আড়াআড়ি মঞ্চের পুরোটা জুড়ে ঢল নেমেছে। কিছুক্ষণ পর সুপ্তধারার সামনে দাঁড়িয়ে থাকাই মুশকিল হয়ে গেল। ভয়াবহ সুন্দর কোনো কিছুর স্বাদ অল্প করে নিতে হয়। তাহলে মানসপটে অনেক দিন পর্যন্ত তা জাগ্রত থাকে। এবার সহস্রধারার পথে। এ নামে অবশ্য আরেকটি ঝরনা আছে। কাছাকাছি অঞ্চলেই। এটি মূলত সহস্রধারা-২ নামে পরিচিত।

ভরা বর্ষার স্পর্শ পেয়ে সে তোড়জোড় শুরু করেছে। সিএনজিসহ পার্কে প্রবেশের টিকিটমূল্য ৮০ টাকা। শুধু টিকিটের দাম ২০ টাকা। ঢাকা থেকে এলে সীতাকুণ্ড বাজারে নামাই ভালো। সীতাকুণ্ড-মিরসরাই অঞ্চলে আছে অসাধারণ কিছু ঝরনাধারা। এ অঞ্চলের অন্যতম সুবিধা হলো দিনে দিনেই এসব ঝরনার বেশ কয়েকটি দেখে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে ফিরতে পারবেন। এমনই কয়েকটি ঝরনায় যাওয়ার রুট প্ল্যান দেওয়া হলো।

খৈয়াছড়া ঝরনা

সীতাকুণ্ড-মিরসরাই জোনের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য খৈয়াছড়া ঝরনা। ঢাকা থেকে গেলে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে মিরসরাই বাজারের আগে বড়তাকিয়া বাজারে নেমে যে-কাউকে জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দেবে খৈয়াছড়া যাওয়ার রাস্তা।

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল

এ ট্রেইলে বাঘবিয়ান, বান্দরখুম ও নাপিত্তাছড়া নামে তিনটি ঝরনা আছে। ঢাকা থেকে গেলে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারী বাজারে নেমে পুবদিকের রাস্তা ধরে আধঘণ্টা বা পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁটলে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল পাবেন।

সুপ্তধারা-সহস্রধারা-১ ট্রেইল

সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের ভেতরে আছে অসাধারণ দুটি ঝরনা সহস্রধারা ও সুপ্তধারা। ২০ টাকা দিয়ে পার্কের টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে দিকনির্দেশক চিহ্ন ধরে হাঁটলে পেয়ে যাবেন ঝরনা দুটি।

সহস্রধারা-২ (মূল সহস্রধারা) ট্রেইল

ঢাকা থেকে গেলে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে সীতাকুণ্ডের ছোট দারোগারহাট বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে সাইনবোর্ড নির্দেশিত পথে পুবদিকে যেতে হবে।

বড় কমলদহ ঝরনা

সেখানে যেতে হলে আসতে হবে বড় দারোগারহাট বাজারে। সেখান থেকে পুবদিকের পথ ধরতে হবে।

বাড়বকুণ্ড ট্রেইল

এ ট্রেইলে আছে চারপাশে পাহাড়ঘেরা বহু পুরোনো কালভৈরবী মন্দির। এখানে আছে বাংলাদেশের একমাত্র গরম পানির ঝরনা। বাসে সীতাকুণ্ডের বাড়ববকু বাজারে নামতে হবে। এরপর পুবদিকের রাস্তা ধরে ১ ঘণ্টার মতো হাঁটলেই কালভৈরবী মন্দির পেয়ে যাবেন। বাকি পথ ছড়া ধরে গেলেই হবে।

হরিণমারা-হাঁটুভাঙা-সর্পপ্রপাত ট্রেইল

অসাধারণ এ ট্রেইলে আছে চমৎকার নীলাম্বর হ্রদ। পরপর পাবেন চারটি ঝরনা। হরিণমারা ঝরন, হাঁটুভাঙ্গা ঝরনা, বাওয়াছড়ার মুখ ও সর্পপ্রপাত। সীতাকুণ্ডের আগে ছোট কমলদহ বাইপাসের শুরুতে নেমে পুবদিকে হাঁটা শুরু করলে একসময় পথই আপনাকে নিয়ে যাবে অনিন্দ্যসুন্দর এসব জায়গায়।

ছবি : ট্যুর বীজ

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা