জান্নাতে নাঈম
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩ ১৩:১০ পিএম
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৩ ২৩:২৩ পিএম
বর্ষার অবিরাম জলধারার সঙ্গে পার হয়েছে এবারের ঈদ আনন্দ। উৎসব-পরবর্তীতে রাজধানীর রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। বৃষ্টি আসছে যখন তখন। তাই প্রকৃতিও সেজে উঠছে নবরূপে। অর্থাৎ প্রকৃতিকে সুন্দরভাবে সাজাতে প্রয়োজন পানি। এ পানিই যে আমাদের প্রাণ। সে কথা আবারও মনে করিয়ে দেবে ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে হাউস অব ভলান্টিয়ার্স ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোকচিত্র ও চিত্রকর্মের প্রদর্শনী। কেননা বৈশ্বিক পানিসংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যেই এ আয়োজন।
ফাউন্ডেশনটি বিশ্ব পানি দিবস-২০২৩ পালনের অংশ হিসেবে আট থেকে ১৬ বছর বয়সিদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘পানি বাঁচাও’। এ প্রতিযোগিতায় অনেকেই অংশ নেয়। কিন্তু গ্যালারিতে প্রদর্শনের জন্য সেখান থেকে বাছাই করা হয় ২০টি পেইন্টিং। রঙতুলির আঁচড়ে মাইশা আহমেদ তুলে এনেছে পানি সংরক্ষণের সচেতনতাবিষয়ক দৃশ্য। একই ফ্রেমে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের পানি সংগ্রহ করার দৃশ্যটি আপনার নজর কাড়বে। প্রদর্শিত প্রতিটি চিত্রকর্মই যেন পানির কথা বলছে। ক্যানভাসজুড়ে বহন করছে পানিসংশ্লিষ্ট নানান বার্তা।
‘পানির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ এ প্রতিপাদ্যের অধীনে ফটোগ্রাফি আহ্বান করা হয়েছিল। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের বয়সের সীমা নির্ধারণ ছিল ১৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে। এখানেও অসংখ্য আলোকচিত্র থেকে বাছাই করে শীর্ষ ২০টি ফটোগ্রাফ প্রদর্শনের জন্য টানানো হয়েছে।
গ্যালারিতে স্থান পাওয়া আসাফ-উদ-দৌলার ক্যামেরায় তুলে ধরা আলোকচিত্রটিতে ফুটে উঠেছে একজন নারী এবং দুজন কিশোরীর পানি সংগ্রহের সংগ্রাম। রোদে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে আছে। ছোট একটা গর্তের ভেতরে রয়েছে অল্প একটু পানি। সে পানিটুকুই বা কতটুকু নিরাপদ? তা খাবার উপযোগী কি না? সেসব বিষয় ভাবাবে আরেকবার। জলবায়ুর পরিবর্তন ও পানি সংকটের কারণে নারী, কিশোরীরাই বেশি ঝুঁকি নেয় এবং ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়। তা ফুটে উঠেছে ক্যামেরার ভাষায়।
রিয়াজুল হাসান ইফতির ক্যামেরায় তুলে ধরা হয়েছে গ্রামীণ একটি পুকুরের চিত্র। পুকুরের চারপাশ ঘিরে আছে বসতি। চিত্রটি জানান দিচ্ছে এতগুলো মানুষের জন্য ছোট্ট এ জলাশয়। আবার এর পানির স্তর চলে গেছে একদম তলানিতে। যতটুকু পানি অবশিষ্ট আছে তা-ও তো শেওলাধরা! এ ছবিটি নানান বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের কাছে।
সাফায়েত হোসেন শান্তর কামেরায় তোলা ছবিটি যেন জলজীবনের প্রতিচ্ছবি। নদীতীরে ভেড়ানো একটা নৌকা। ছোট একটা শিশু আঁকড়ে ধরে আছে তার মায়ের আঁচল। মা ব্যস্ত মাছ কাটতে। তার সামনেই কাদার মধ্যে কাঠে পিঁড়ি বিছিয়ে হাসিমুখে কাপড় কাচছে আরেক শিশু। এ ছবিটি নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিটি ছবিই ভিন্ন ভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী চিত্রশিল্পীরা হলেন আবদুল্লাহ আল জিয়াদ, ফাতিমা আহমেদ, আল-মমিনুর, খাদিজা আলম এলিন, সিমিন হাবিব সাফা, মির্জা আজাম, অনিকা আজহার, ইমরুল কায়েস রাফসান, সপ্তক দাস, শাহাদাৎ হোসেন, সৈয়দা তাজরিন সিদ্দিকী, হৃশভ শীল হৃদি, জায়েফা তাসনিম, অনিশা সান্তনী, আমায়া রহমান ও সোয়াইদা সাবাহ। আলোকচিত্রীদের তালিকায় রয়েছেন কিংশুক পার্থ, সামিউল আমিন, মোহাম্মদ এমদাদ হোসেন, রাতুল হাসান জয়, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, অনন্ত বিশ্বাস উৎস, তাসফিয়া মুহিব সামিরা, রাজন্য ত্রিধা, তানজিম আক্তার আনিশা পায়েল ও মুসাদ্দেক হুসেন।
সবার জন্য উন্মুক্ত প্রদর্শনী। ধরিত্রী রক্ষার এই সংগ্রামী শিল্পকর্মগুলো পানির গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা বোঝাতে সহায়তা করবে। এ আয়োজনটি শুরু হয়েছে ২ জুলাই। চলবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। চলে আসুন ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে শনি-বৃহস্পতিবার, সকাল ৯টা ৩০ থেকে রাত ৮টার মধ্যে।