× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গাছ জানাবে মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প

সুজিত সরকার

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩ ১২:১৫ পিএম

গাছ জানাবে মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প

আষাঢ়ের হেঁয়ালি দুপুর। চলছে রোদবৃষ্টির লুকোচুরি খেলা। সিরাজগঞ্জ শহর অভিমুখী শিয়ালকোল এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডান পাশে কাশসাদা চুলের দোহারা গড়নের একজন মানুষকে ঘিরে বেঁধে আছে ছোট জটলা। দূর থেকে মনে হচ্ছে তারা সবাই বুঝি স্মৃতির তাড়নায় এখানে এসেছেন। কেননা এখানেই অবস্থিত মুছিবাড়ি বধ্যভূমি। কাছে এগোতেই কৌতূহলের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। কৃষ্ণচূড়ার বৃক্ষগুলোকে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এর নামফলকে লেখা একাত্তরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম। নিচে লেখা- সিরাজগঞ্জ গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটি। নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে এগিয়ে এলেন সাদা চুলের সেই মানুষটি। তিনিই এ কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম।

২০১৮ সালে এ বধ্যভূমিতে মোট ৪২টি কৃষ্ণচূড়া গাছের চারা লাগানোর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এ কর্মসূচি। পাঁচ বছরের মাথায় এসে গাছগুলো এখন ঘন সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে। দুয়েকটি ফুলও ধরেছে। গাছের সবুজ পাতার জমিনে ফুটে থাকা রক্তিম ফুল দেখে মনে হচ্ছে এটাই বুঝি আমাদের জাতীয় পতাকা।

হ্যাঁ, গাছগুলোই নতুন প্রজন্মকে জানাবে মুক্তিযুদ্ধের গল্প। পথচারীদের স্মরণ করিয়ে দেবে মুক্তিযোদ্ধাদের। দেশপ্রেমের আদর্শ নিয়ে বেড়ে উঠবে একটা প্রজন্ম। তাই জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রোপণ করা হচ্ছে বৃক্ষ। আর প্রতিটি গাছের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছে নামফলক। গ্রামের ভেতরে বঙ্গবন্ধুর নামে লাগানো হচ্ছে বটগাছ। কিন্তু শহর এলাকায় জায়গা কম থাকায় বঙ্গবন্ধুর নামে কুল বা আমলকী গাছ রোপণ করা হয়েছে। 

উদ্যোগ গ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় অনেক সাথিকেই হারিয়েছেন। তাদের কথা নিজের পরিবার ছাড়া আর কেউ হয়তো মনে করে না। যুদ্ধের সময় তাদের অবদান কী ছিল? সেই জ্বালা বুকে নিয়েই তিনি শুরু করেন জীবিত এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে গাছ লাগানো।

মুক্তিযুদ্ধে শিয়ালকোল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শিবচরণ দাশ, শহীদ তোজাম্মেল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলীসহ ৪২ জনের নামে গাছ লাগানো হয়। আর এতে স্থানীয়দের সংযুক্ত করে গাছগুলোকে পরিচর্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ অব্যাহত রয়েছে।

শহরের মিরপুর, কালিয়া হরিপুরসহ শিয়ালকোলে ২৫০টি গাছ লাগানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০০ গাছ টিকে আছে। আর এসব বৃক্ষ এলাকার সাধারণ মানুষের পরিচর্যায় বেড়ে উঠছে। সড়কের মাঝের আইল্যান্ডে গাছ লাগানোর পরিকল্পনার কথাও জানালেন আয়োজকরা। যাতে প্রতিনিয়ত চলাচলকারীদের চোখে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক। সিরাজগঞ্জে ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর নামে লাগানো হয়েছে বকুল গাছ। কর্নেল তাহেরের নামে রয়েছে কৃষ্ণচূড়া গাছ। পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আবদুল লতিফ মির্জার নামে রোপণ করা হয়েছে দেবদারু গাছ। জাতীয় চার নেতার নামেও রয়েছে গাছ। বীর মুক্তিসেনানীদের স্মরণে প্রতিদিনই চলছে বৃক্ষরোপণ। 

শহরের বিভন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিয়ালকোল ঘুরে দেখা যায়, গাছগুলোর চারপাশে বাঁশের খাঁচা দেওয়া হয়েছে। যাতে গরু-ছাগল বা অন্য কোনো জীবজন্তু গাছগুলোর কোনো ক্ষতি করতে না পারে। কথা হয় শিয়ালকোলের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাহিন রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা এসে গাছগুলো রোপণ করেছেন সে সময় আমরা তাদের সঙ্গে ছিলাম। আমরা নিয়মিত গাছে পানি ও সার দিচ্ছি। এ গাছ বড় হলে আমরা যেমন এর সুফল পাব। তেমনি আমাদের সন্তানরাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা