× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মিথে ঘেরা খোয়াসাগর দিঘি

হাসান মাহমুদ শাকিল

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৩ ১২:৫৭ পিএম

মিথে ঘেরা খোয়াসাগর দিঘি

স্বচ্ছ জলের ওপর যেন ঢেলে দিয়েছে আকাশের অফুরন্ত নীল। চারপাশ ঘেরা সবুজ বৃক্ষলতার ডালে ডালে ডাক দিয়ে যাচ্ছে পাখি। ভোরবেলায় প্রাণ ও প্রকৃতির মাঝে সতেজ নিঃশ্বাস নিতে এসেছেন স্থানীয় বয়স্করা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে দিঘি প্রাঙ্গণ। বলছি উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর শহরের উপকণ্ঠে দালাল বাজারে অবস্থিত খোয়াসাগর দিঘিপাড়ের কথা। 

প্রায় ২৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত দিঘিটির নাম খোয়াসাগর। এর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত কুয়াশাচ্ছন্ন দেখায়। স্থানীয়ভাবে কুয়াশাকে খোয়া বলে। এ ছাড়া দিঘির পানি সাগরের পানির মতো নীল। তাই এর নাম হয়েছে খোয়াসাগর দিঘি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৭৫ সালে দিঘিটি খনন করেছিলেন জমিদার ব্রজবল্লভ রায়। এতদঞ্চলের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে তিনি দিঘিটি খনন করেন। এই দিঘি নিয়ে ছড়িয়ে আছে নানা রহস্যময় গল্প।

তেমনই একটা মিথ, একবার বরযাত্রীরা নববধূকে নিয়ে দীঘির পাড় দিয়ে যাচ্ছিল। বরযাত্রীদের পানির পিপাসা পেলে তারা যাত্রাবিরতি দিয়ে দিঘীতে নেমে পানি পান করেন। নববধূও নেমেছিল পানি পান করার জন্য। কিন্তু যখন নববধূটি অঞ্জলি ভরে পানি পান করতে যাচ্ছিল-অমনি তার পা দুটি ধরে কে যেন তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায়। বধূটি আর ফিরে আসেনি। সেই থেকে ঐ স্থানটিতে গভীর গর্ত হয়ে আছে। প্রচন্ড খরায় সারা দীঘি শুকিয়ে গেলেও ঐ স্থানটি শুকায় না। এক সময় এই দিঘির পাড়ে যেতে মানুষ ভয় পেলেও এখন এটিই হয়ে উঠছে অন্যতম এক পর্যটন কেন্দ্র।

দিঘির পাড়ের দাঁড়ালে সুমিষ্ট বাতাসে হৃদয়-প্রাণ জুড়িয়ে যায়। কেউ পারিবারিক ভ্রমণ, আবার কেউবা সারাদিনের ক্লান্তি ঘোচাতে উপস্থিত হন খোয়াসাগর দিঘির পাড়ে। এক পশলা প্রশান্তির জন্য মানুষ সেখানে ভিড় করে। সারা দিনই এখানে কম-বেশি দর্শনার্থী দেখা যায়। তবে বিকাল বেলা ও ছুটির দিন দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে উল্লেখ করার মতো। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ভ্রমণপিপাসুরা তো আসেই, আশপাশের জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা ছুটে আসে এখানে। জেলা শহরের খুব কাছে হওয়ায় যারা দূর থেকে ছুটিতে নিজ জেলায় আসেন, তারা গেট টুগেদার বা মিলিত হওয়ার স্থান হিসেবে বেছে নেন এই দিঘির পাড়কেই। দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত এই দিঘি বিনোদন পার্ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় প্রশাসন থেকেও নেওয়া হয়েছে সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ। সারা দিন ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণা থাকে। তাই দিঘিকে কেন্দ্র করে আশপাশে বেশ কয়েকটি মানসম্মত রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে।

দিঘির উত্তর এবং পশ্চিম পাশে গড়া হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টিত দেয়াল। পাড় ধরে হাঁটা-চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা। দিঘিমুখী করে বসার জন্য খোলা পাড়ে অনেকগুলো চেয়ার পাতা আছে। যেখানে দর্শনার্থীরা বসে সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেন। এ ছাড়া রাতে আলোর ব্যবস্থার জন্য বসানো হয়েছে সোলার ল্যাম্পপোস্ট। দিঘির জলের মাঝে প্রদিক্ষণ করার জন্য কয়েকটি নান্দনিক ছোট নৌকাও রয়েছে। দিঘির পাড়ে বিভিন্ন রঙ-বেরঙের ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য হাঁটার রাস্তার ধারে রেলিং দেওয়া হয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মনোমুগ্ধকর এক শিল্পাঙ্গন। 

কথা হয় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী পারভেজ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে দিঘির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। আগেও এসেছিলাম। তখন এতটা দৃষ্টিনন্দন ছিল না।’ 

দিঘির পশ্চিম পাশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুটি মঠ রয়েছে। সেই মঠগুলো পরিচর্যা করে দর্শনার্থীদের জন্য দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা সম্ভব, যা ইতিহাসের পরিচায়ক হিসেবে সাক্ষ্য বহন করবে নতুন প্রজন্মের কাছে। 

জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুরে তেমন কোনো পর্যটন কেন্দ্র নেই। এ জন্য সাম্প্রতিক পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের আর্থিক সহায়তায় দিঘি এলাকাকে নান্দনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা শহর থেকে পশ্চিমে ৫ কিলোমিটার দূরে দালাল বাজার এলাকায় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই এর অবস্থান।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা