আনিসুর রহমান
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩ ১৩:২৬ পিএম
ওপারে মেঘালয় রাজ্য। পাহাড়ের গায়ে যেন মেঘ ছুঁইছুঁই করছে। সীমান্ত লাগোয়া ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা। এ জনপদে নেই উল্লেখযোগ্য কোনো কলকারখানা। অবস্থানগত কারণে পিছিয়ে আছে এখানকার জনগোষ্ঠী। এ উপজেলার সন্তান শফিউল্লাহ সুমন। নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘ধোবাউড়া হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’। উপজেলা সদর বাজারে অবস্থিত এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রায় অর্ধশত নারী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আবার প্রশিক্ষিত নারীরাই পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিস, কাপল ড্রেসসহ বিভিন্ন কাপড়ের ওপর রঙতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন নান্দনিক সব নকশা ও ডিজাইন। কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে দেখিয়ে দিচ্ছেন। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এ কেন্দের সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। গৃহবধূরা ঘরের কাজ শেষে, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে কাজ করে বাড়তি উর্পাজন করছেন।
শফিউল্লাহ সুমন ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা ইউনিয়নের কংস নদের তীরে রঘুরামপুর গ্রামের সন্তান। ২০০৯ সালে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তবে ঢাকার জীবনে খাপ খাইয়ে নিতে পারছিলেন না। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর মানুষের টানে গ্রামে চলে আসেন। এলাকায় এসে একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন। উপজেলার নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে ১০ জন নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন ধোবাউড়া হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। চলতি বছরের প্রথমে শুরু হওয়া এ কেন্দ্রে বর্তমানে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ৬০। সবাই হস্তশিল্পের কাজ করছেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য এ কার্যক্রম ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। ইতোমধ্যে পাটের শোপিসের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে আরও ট্রেড বাড়ানো হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ১ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এলাকার অনেকেই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দ্বারা তৈরি পণ্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় দোকান, মেলা ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ইফা বিডির মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। কথা হয় প্রশিক্ষণার্থী তানিয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি ধোবাউড়া আদর্শ কলেজের ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি এখানে কাজ করে মাসে ৮ হাজার টাকা উপার্জন করেন; যা দিয়ে তার নিজের পড়ালেখার খরচ বহন করেন। পরিবারকেও সহযোগিতা করেন। গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘প্রথমে একবার সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম; কিন্তু কাজের ক্ষেত্র ও তদারকি না থাকায় তেমন কাজে আসেনি। তারপর এখানে দুবার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এখন নিয়মিত কাজ করি। যা আয় হয় তা সংসারের কাজে লাগাতে পারি। ইনকাম করলে মনের মধ্যে অনেক ভালো লাগে।’
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষক তন্বী আক্তার জানান, এখানে প্রশিক্ষিত নারীরা হস্তশিল্পের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচিয়ে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। সুমনের উদ্যোগ সম্পর্কে স্থানীয় শাসসুল হক মৃধা বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সময় সরকারি উদ্যোগে এসব প্রশিক্ষণ হতে দেখেছি। কিন্তু প্রশিক্ষণের পর তাদের আর্থিক সাপোর্ট না দেওয়া এবং তদারকি না করায় তেমন সফলতা দেখা যায়নি। আশা করি তার উদ্যোগের মাধ্যমে নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।’
উদ্যোক্তা সুমনের এ কার্যক্রমের মাধ্যমে এখানকার নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটছে। এ ছাড়া শফিউল্লাহর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার নিজ গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আরও অর্ধশত মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।