× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিক্ষার্থীদের ওপর ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব

কোন পথে তারুণ্য

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩ ১১:৫৯ এএম

কোন পথে তারুণ্য

শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ডিজিটাল টেকনোলজির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে ইন্টারনেট আসক্তি শিক্ষার্থীদের পড়ার ইচ্ছা কমিয়ে দিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিঃসঙ্গতা-একাকিত্বের অনুভূতিও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। বিস্তারিত লিখেছেন গোলাম কিবরিয়া

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিক। পড়াশোনায় সিরিয়াস অনিকের প্রথম বর্ষেই বেশ ভালো ফল আসে। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে হুট করে অনিকের সিজিপিএ খুবই খারাপ আসে। মা-বাবা লক্ষ করলেন তাদের সন্তান আগের মতো কথা বলে না। রাত জেগে থাকে আর পড়াশোনার কথা বলে ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলে বেশি সময় দেয়। অনিকের বাবা-মা অনেক চেষ্টার পর বুঝতে পারেন তাদের সন্তান ইন্টারনেটে বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে। আরেক তরুণ শিক্ষার্থী নাবিলার প্রসঙ্গ একটু ভিন্ন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত আসক্তির ফলে মানসিক বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন সময় বন্ধুদের নানা রকম ট্রলের শিকার হয়ে একসময় নাবিলার মনে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্তের সুপ্ত বীজ মনের মধ্যে গেঁথে নেন। পরে মায়ের সহযোগিতায় এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পান। এমন বহু অনিক-নাবিলার মতোই তরুণ-তরুণীরা বর্তমানে ইন্টারনেট আসক্তিতে ভুগছেন। 

সমীক্ষা কী বলে 

গত ১০ জুন আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রভাব : কতটুকু সতর্ক হওয়া জরুরি’ শীর্ষক সমীক্ষা সম্পর্কে অবহিত করা হয়। মে মাসে পরিচালিত জরিপে জানা যায়, ৮৫.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, তাদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে।

মানসিক সমস্যায় ইন্টারনেটের দায়

ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ইন্টারনেট তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকাংশেই নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে আসছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে অংশ নেওয়া এক হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭২.২ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা তাদের জীবনে কখনও না কখনও মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এদের মাঝে ৮৫.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, তাদের মানসিক সমস্যার পেছনে ইন্টারনেটের ভূমিকা রয়েছে। ইন্টারনেটকে ‘পুরোপুরি দায়ী’ মনে করেন ২৬.১ শতাংশ এবং ‘মোটামুটি দায়ী’ ভাবেন ৫৯.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে ইন্টারনেটকে দায়ী করছেন না মাত্র ৮.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। 

অবসর কাটাতেই ব্যবহার বেশি

প্রয়োজন কিংবা অপ্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। সমীক্ষা অনুসারে, ৩৮.২ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনাবিষয়ক কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। ৬৭.৫ শতাংশ অবসর সময় কাটাতে, ৪২.৯ শতাংশ যোগাযোগের প্রয়োজনে, ২৪.৯ শতাংশ অনলাইন গেম খেলতে বা ভিডিও দেখতে, ১২.৬ শতাংশ অনলাইনে কেনাকাটা করতে এবং ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। জরিপ অনুসারে আমাদের তরুণ শিক্ষার্থীদের বড় অংশই অফলপ্রসূ কাজে ইন্টারনেটে বেশি সময় ব্যয় করে। অপরিমিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ৬২.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মাঝে দিনে ১১ ঘণ্টার ওপরে অনলাইনে থাকেন ৬.২ শতাংশ শিক্ষার্থী। ১৯.৫ শতাংশ জানান যে, তারা ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মতো ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ইন্টারনেটে থাকেন ৩৬.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৩২.৩ শতাংশ ব্যবহার করেন ২ থেকে ৪ ঘণ্টার মতো। 

ভয়ংকর নেতিবাচক প্রভাব 

জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৪.৩ শতাংশ জানান যে, ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের স্বাভাবিক জীবনে ‘প্রচণ্ড নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে। ৫৭.২ শতাংশের স্বাভাবিক জীবনে ‘কিছুটা নেতিবাচক’ প্রভাব ফেলছে বলে জানা যায়। নেতিবাচক প্রভাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫৯.৬ শতাংশ মনে করেন ইন্টারনেটে সময় ব্যয় তাদের পড়াশোনায় মনোযোগের বিঘ্নতার জন্য দায়ী। ১৭.৮ শতাংশ ইন্টারনেটে পর্ন দেখা, সাইবার ক্রাইম, বাজি ধরা, বুলিং করা প্রভৃতি অপ্রীতিকর কাজের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। ২৩ শতাংশ ধীরে ধীরে অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছে, ৩৫.৬ শতাংশ ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করেছে এবং ২০.৩ শতাংশ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়। 

পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে

সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, পড়াশোনার কাজে ৯৪.১ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু পড়াশোনার ফাঁকে অনলাইনে প্রবেশ করায় ৫২.৬ শতাংশের পড়াশোনার মনোযোগ হারিয়ে যায়। এ ছাড়া ২৫.২ শতাংশের পড়া মনে রাখতে অসুবিধা হয়, ৫৭ শতাংশ মনে করেন অযথা সময় নষ্ট হয়, ৩১.২ শতাংশের পড়াশোনায় অনীহা জন্ম নেয়।

আসক্তির কারণে পড়াশোনা হুমকিতে

ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি আসক্তি অনুভব করেন। এদের মধ্যে খুব বেশি আসক্ত ২২.৪ শতাংশ, মোটামুটি আসক্ত ৪৭.৭ শতাংশ এবং অল্প আসক্ত ২০.৯ শতাংশ। পড়াশোনায় এই আসক্তি কতটুকু প্রভাব ফেলে তা নিয়ে ৮০.১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান পড়াশোনার সময় তীব্র আসক্তি তৈরি হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি তাদের পড়াশোনার মনোযোগ থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। 

পারিবারিক সম্পর্কে ঘাটতি

জরিপে উঠে আসা তথ্যানুসারে জানা যায়, ৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান তারা ‘কখনোই’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করেন না। ১৯.২ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘খুব একটা’ পরিবারের সঙ্গে মন খুলে গল্প করেন না। মাঝে মাঝে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দেন বলে জানিয়েছেন ৪৪.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে আড্ডা না দেওয়া শিক্ষার্থী এবং পরিবারের মাঝে এক ধরনের দূরত্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখে।

 সামাজিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব

ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ২৩.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাদের বাস্তব জীবনের পাশাপাশি আরেকটি ভার্চুয়াল জগৎ তৈরি হয়েছে। ১৯.৫ শতাংশ জানিয়েছেন মন খুলে কথা বলার মতো মানুষ পাচ্ছেন না এখন আর। এ ছাড়াও ৯.৯ শতাংশ জানান সামাজিকভাবে মিশতে না পারা, ৯ শতাংশ অন্যদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মনোমালিন্য হওয়া, ৮.৭ শতাংশ মানুষ সম্পর্কে বিভিন্ন খারাপ ধারণা তৈরি হওয়ার মতো নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছে। তবে ২৯.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, তাদের মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। 

ব্যক্তিজীবনেও ইন্টারনেটের ছায়া

শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিজীবনেও ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রবলভাবে। গবেষণালব্ধ উপাত্ত অনুসারে, ১৩.১ শতাংশ জানান যে, ইন্টারনেটের ব্যবহার তাদের আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে। ৬.৫ শতাংশের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। ২৪ শতাংশ ব্যক্তিজীবন ও কর্মজীবনে লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছেন এবং ২৫.৭ শতাংশের অফলপ্রসূ কাজে সময় নষ্ট হচ্ছে বলে জানান। 

বাড়ছে ঘুম ও শারীরিক সমস্যা

অতিরিক্ত সময় ধরে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। ৫৮.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী জরিপের মাধ্যমে জানান যে, তাদের প্রতিদিন পরিমিত ঘুম হয় না। এদের মধ্যে ৩০.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিমিত ঘুম না হওয়ার পেছনে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারকে পুরোপুরিভাবে দায়ী করেছেন। দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করার কারণে শিক্ষার্থীরা নানাবিধ শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন বলে জানান, যার মধ্যে ৫৩.৬ শতাংশের ঘুমের অপূর্ণতা দেখা দেয়, ৩৪.৫ শতাংশের মাথা ঝিম ঝিম ও ব্যথা অনুভূত হয়, ১৯.২ শতাংশের ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, ২৪.৩ শতাংশ চোখে ঝাপসা দেখেন এবং ২৭.৮ শতাংশ ক্লান্তি অনুভব করেন। 

পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি তরুণদের

ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখা, যৌন উত্তেজক গল্প শোনা কিংবা পড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এক অন্যতম আকর্ষণ। সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, ৩২.৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি বা যৌন উত্তেজক বিষয় সম্পর্কিত ওয়েবসাইট দেখেন। এদের মধ্যে পর্ন দেখা বা যৌন উত্তেজক গল্পের ভিডিও কিংবা অডিও শোনা, দেখা কিংবা পড়ার ফলে পরবর্তী সময়ে ৩৫.১ শতাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় বিভিন্ন সময় এই বিষয়ক চিন্তা আসে বলে জানান। ১৩.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী সব সময় এই ধরনের কাজের প্রতি আগ্রহ অনুভব করেন, ২৫.৫ শতাংশের মনে নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন, ১৫.৩ শতাংশ বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখেন, ১০.৫ শতাংশ অনৈতিকভাবে যৌনতৃপ্তি উপভোগ করেন। 

পর্ন দেখা বা এই সম্পর্কিত গল্প শোনা বা পড়ার প্রতি কারণ বিশ্লেষণে জানা যায়, ২৮.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌনতা সম্পর্কিত কৌতূহল মেটাতে এই ধরনের কাজ করে থাকেন। ২৪ শতাংশ জানান যে, তারা যৌনতৃপ্তি পেতে এবং ১৪.১ শতাংশ অবসরের খোরাক হিসেবে এ ধরনের কাজকর্ম করেন। এ ছাড়াও যৌন জীবন নিয়ে বিষণ্নতা থেকে ৯.৬ শতাংশ এবং একাকিত্ব ঘোচাতে ২৩.৫ শতাংশ এমন কাজ করেন বলে জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মানসিক স্বাস্থ্য 

অন্যের সফলতায় ১০.৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে হতাশার সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানা অন্যের সফলতার খবর ১০.৫ শতাংশকে ঈর্ষাকাতর করে তোলে এবং ১৮.৭ শতাংশ নিজেকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। অন্যদিকে ৩৪.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী এ ধরনের খবর থেকে উৎসাহিত হন। তবে ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর ভেতর এই বিষয়ক খবর কোনো তারতম্যের সৃষ্টি করে না বলে জানা যায়। 

লাইক কমেন্টও ফেলছে প্রভাব

জরিপে দেখা গেছে, ২৬.৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাসের ওপর তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইক, কমেন্টস, শেয়ার কিংবা ফলোয়ার সংখ্যা বাড়া বা কমা বিষয়ক ব্যাপারে বেশিরভাগ সময়ই প্রভাব বিস্তার করেছে। তবে ৩৫.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, তাদের আত্মবিশ্বাসের ওপর এমন প্রভাব মাঝেমধ্যে পড়ে। 

অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সময় দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় দেখা যায়, অন্যের জীবনযাত্রার সঙ্গে ১৯.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজের জীবনযাত্রার মান তুলনা করেন। সমীক্ষার তথ্য অনুসারে আরও জানা যায়, ৫১.৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যদের দেখে নিজেকে অন্যদের তুলনায় খুব সংকীর্ণ, অযোগ্য, ব্যর্থ বা অসুখী মনে হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রম ২১.৭ শতাংশের ভেতর রাতারাতি জনপ্রিয় হওয়ার ইচ্ছে তৈরি করে। ২৯.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী জানান, তাদের মনে এ ধরনের ইচ্ছে সব সময় না হলেও মাঝে মাঝে হয়ে থাকে। 

পরিবর্তন এসেছে আচরণে

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। জরিপের তথ্য অনুসারে, ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর ধৈর্যশক্তির হ্রাস ঘটে, ২৬ শতাংশ হঠাৎ রেগে যান, ২৭.৭ শতাংশ চুপচাপ হয়ে যান, ২২.৫ শতাংশের ভেতর জড়তা তৈরি হয়, ২৪.৫ শতাংশের মধ্যে অবাস্তব প্রত্যাশা তৈরি হয়, ২৩.৬ শতাংশ ঘরকুনো হয়ে যান। অন্যদিকে ৩০.২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন তারা যখন অফলাইনে থাকেন তখন একাকিত্বে ভোগেন। ২২.২ শতাংশের মাঝেমধ্যে একাকিত্ব অনুভূত হলেও ১৭.৩ শতাংশ বিষয়টি নিয়ে কখনও ভেবে দেখেননি বলে জানিয়েছেন। 

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন 

জরিপের ফলাফল নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তানসেন রোজ বলেন, ‘প্রতিটি জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দুভাবেই ব্যবহার করা যায়। ঠিক তেমনি ইন্টারনেট ভালো এবং খারাপ দুভাবেই ব্যবহার করা যায়। আমাদের শুধু নিশ্চিত করতে হবে কাউকে ডিভাইস হাতে ধরিয়ে দেওয়ার আগে সে এটা কীভাবে ব্যবহার করবে সে সম্পর্কে জানে কি না। না জানলে সঠিকভাবে জানিয়ে দিতে হবে। ভালো কাজে ব্যবহারের পথ জানিয়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সন্তান কোথায় কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, অনলাইনে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে জড়িত কি না সেসবও দেখতে হবে। প্রতিনিয়ত মনিটর করতে পারলে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।’ 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আঁচল ফাউন্ডেশনের এই জরিপে এক হাজার ৭০০-এর অধিক তরুণ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। জরিপের তথ্যানুযায়ী, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আশঙ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে, যা আমাদের ভাবতে সহায়তা করবে আসলেই ইন্টারনেটের ব্যবহার এ বয়সি মানুষের উপকার করছে নাকি অপকারটাই বয়ে নিয়ে আসছে। বিশেষ করে ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সি যে তরুণ যুবক গোষ্ঠী আছে তাদের হতাশা, বিষণ্নতা এবং অন্যান্য সামাজিক-মানসিক অস্থিরতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। এদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট কিছুটা দায়ী বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা