ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য
দেবাশীষ বিশ্বাস
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩ ১৩:২১ পিএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৩ ১৪:১১ পিএম
দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। এ দিনে স্বাভাবিক কাজের সঙ্গে নিতে হয় বাড়তি প্রস্তুতি। যার মধ্যে কোরবানির পশুর মাংস সংরক্ষণ অন্যতম। তাই এবারের ঈদে বাসায় আসবে নতুন ফ্রিজ। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেন না কোন ধরনের ফ্রিজ কিনবেন? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত-
ফ্রস্ট নাকি নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ
ফ্রিজ দুই ধরনের হয়- ফ্রস্ট ও নন-ফ্রস্ট। ভালো মানের ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রে সেটি ফ্রস্ট নাকি নন ফ্রস্ট, তা খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। এদের মধ্যে পার্থক্য কী, তা জেনে ফ্রিজ কেনা উচিত।
ফ্রস্ট ফ্রিজ
ফ্রস্ট প্রধানত শীতল রেফ্রিজারেটর। ডিপ ফ্রিজগুলোই ফ্রস্ট হয় বেশি। সরাসরি শীতল প্রযুক্তি ব্যবহার করায় এই ফ্রিজে সহজেই বরফ জমা হয় ও দ্রুত ঠান্ডা হয়। ফলে ফ্রিজে রাখা খাবার দীর্ঘদিন ভালো থাকে। দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকলেও এই ফ্রিজে রাখা খাবারের মান ভালো থাকে। মাছ, মাংস, দুধসহ বিভিন্ন খাবার সংরক্ষণ করে দীর্ঘদিন ভালো রাখা যায়। এমনকি ফ্রস্ট ফ্রিজ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। তাই বেশির ভাগ মানুষের ফ্রস্ট ফ্রিজ কেনার প্রতি ঝোঁক বেশি।
নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ
ফ্রস্ট ফ্রিজের ঠিক উল্টো হলো নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ। এ ধরনের ফ্রিজে শীতল বাতাসে আর্দ্রতা থাকে না। শুষ্ক বায়ুর মাধ্যমে শীতল হয় ফ্রিজ। তাই ফ্রিজের ভেতরে বরফ জমে না। তবে খাবারে দুর্গন্ধ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করে নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ। প্রতিদিনের রান্না করা খাবার, ডিম, সবজি, ফলমূল ভালো রাখতে নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ বেশি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকলে এ ধরনের ফ্রিজের খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। পরিবারের সদস্য সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ফ্রস্ট বা নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ কেনা উচিত। যদি ৩-৫ জনের বেশি সদস্য থাকে, তাহলে ফ্রস্ট ফ্রিজ না কেনা ভালো। বড় সাইজের মধ্যে ডাবল ডোরের ফ্রিজ কিনুন। এ ধরনের ফ্রিজে অর্ধেকের বেশি অংশ নন-ফ্রস্ট বা নরমাল এবং বাকি অংশ ফ্রস্ট বা ডিপ হয়ে থাকে।
ফ্রিজ কেনার আগে কী কী জানতে হবে
বর্তমানে মানবজীবনের অন্যতম চাহিদার একটি অপরিহার্য অংশ ফ্রিজ। যা খাবারকে অনেক দিন পর্যন্ত সতেজ রাখতে পারে। বিভিন্ন শাকসবজি, ফলমূল, জুস, মাছ, মাংস, মসলাসহ বিভিন্ন খাবার ভালো থাকে। তবে ফ্রিজ কেনার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিষয়গুলো-
ফ্রিজের আকার ও মডেল
বাসায় ফ্রিজ কোথায় রাখবেন সেই অনুযায়ী আকার ও মডেল নির্বাচন করতে হবে। ফ্রিজ বড় না ছোট কিনবেন- এর পেছনে অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হয়। পরিবারের সদস্য সংখ্যা, বাজার অভ্যাস, খাবার সংরক্ষণের মাত্রা ইত্যাদি। দুই থেকে তিন সদস্যের পরিবারে সর্বোচ্চ ২০০ লিটারের ফ্রিজ যথেষ্ট। চার থেকে পাঁচজন সদস্য হলে ৩৫০ লিটার পর্যন্ত ফ্রিজ যথেষ্ট। সদস্যসংখ্যা আরও বেশি হলে ৬০০ লিটারের ফ্রিজ কেনা যেতে পারে।
আরও পড়ুন : এসি কিনতে চাইলে
বিদ্যুৎসাশ্রয়ী
ফ্রিজ কেনার সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা ভাবতে হবে। কপার কনডেন্স ও উন্নত মানের কম্প্রেশার ব্যবহার করা ফ্রিজগুলো বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হয়। সাধারণত বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্রিজগুলোয় এনার্জি রেটিং বা স্টার চিহ্ন দেওয়া থাকে। এই চিহ্ন দিয়ে জ্বালানি সাশ্রয় ক্ষমতা বোঝানো হয়। তাই পাঁচতারা দেখে ফ্রিজ কেনা ভালো।
ফ্রিজের গ্যাস
ফ্রিজের গ্যাস হলো মানবদেহের রক্তের মতো। ভালো মানের গ্যাস না হলে ঠান্ডা হওয়া, বিদ্যুৎ খরচ ও স্থায়িত্ব সবকিছুতে গোলমাল বাধবে। প্রধানত দুই ধরনের গ্যাসে চলে ফ্রিজÑ আর৬০০এ এবং আর১৩৪এ। তবে আর৬০০এ গ্যাস থাকলে ফ্রিজ দ্রুত ঠান্ডা হয়। ফলে বিদ্যুৎ খরচে সাশ্রয়ী হয়।
কম্প্রেশার
ফ্রিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কম্প্রেশার। কম্প্রেশার যত উন্নতমানের হবে তত দ্রুত ঠান্ডা হবে ফ্রিজ। কপার ও অ্যালুমিনিয়াম- সাধারণত এ দুই ধরনের কম্প্রেশার দেখা যায়। অ্যালুমিনিয়ামের কয়েলযুক্ত কম্প্রেশার পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই কপার কম্প্রেশারযুক্ত ফ্রিজ কিনা ভালো। পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ইনভার্টার কম্প্রেশার রয়েছে এমন মডেলের ফ্রিজ কেনাই ভালো। কারণ ইনভার্টার ফ্রিজের কম্প্রেশার কখনও বন্ধ হয় না। ফলে বিদ্যুৎ খরচ কম হয়। আর নন-ইনভার্টার ফ্রিজের কম্প্রেশার ভেতরের তাপমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু ও বন্ধ হয়। এ কারণে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়।
ওয়ারেন্টি
দীর্ঘমেয়াদের ওয়ারেন্টি ফ্রিজ নেওয়া ভালো। একটি ফ্রিজ কেনার সময় যেমন বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে, তেমনই এর ওয়ারেন্টি তথ্যও জানতে হবে। ফ্রিজটিতে কতদিন ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে। কোন যন্ত্রাংশে গ্যারান্টি আর কোন যন্ত্রাংশে কতদিন ওয়ারেন্টি তা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। পাশাপাশি কিস্তির সুবিধা থাকলে সে সম্পর্কেও জেনে নেওয়া উচিত।
দেশের বিভিন্ন শোরুমে বিভিন্ন রকমের ফ্রিজ পাওয়া যায়। যার দাম নির্ভর করে ব্র্যান্ড, মডেল, সাইজ, ধারণক্ষমতা এবং প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে। বর্তমানে ১০০ থেকে ৪০০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ফ্রিজ বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ঈদের আগে বেশি বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ লিটারের ফ্রিজ। ওয়ালটন, র্যাংগস, ভিশন, মিনিস্টারের মতো দেশীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি স্যামসাং, হিটাচি, সিঙ্গার, এলজি, শার্পসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্রিজও বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যার দাম পড়বে বিশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত।