× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কালো মানুষের আলো

ডরোথি কাউন্টস: অনন্য সাহসের প্রতীক

আব্দুল্লাহ আল মামুন

প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩ ১১:৫৮ এএম

অনন্য সাহসের প্রতীক হয়ে থাকবেন ডরোথি কাউন্টস

অনন্য সাহসের প্রতীক হয়ে থাকবেন ডরোথি কাউন্টস

‘হার্ডিংয়ে যে অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছিলাম, তা আমার জীবনকে চিরতরে বদলে দিয়েছে। আমি জীবনে কী করব সেই পথের সন্ধান পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি সেই মানুষগুলোর হয়ে কথা বলতে চেয়েছি, যাদের নিজেদের কথা বলার ক্ষমতা ছিল না। যদি কোনো পরিবর্তন দেখতে চান, তবে তার জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে’- এই কথাগুলো এমন একজন মানুষের, যিনি কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে তাদের শিক্ষার বিষয়ে আজ থেকে ৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে আমেরিকায় জনজোয়ার সৃষ্টি করেছিলেন।

এই মানুষটির নাম ডরোথি কাউন্টস। আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী তিনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে সাদা চামড়ার মানুষদের স্কুলে ভর্তি হয়ে তিনি আলোচনার জন্ম দেন।

ডরোথি কাউন্টসের জন্ম ১৯৪২ সালে। নর্থ ক্যারোলিনার হার্ডিং হাইস্কুল ছিল সাদা চামড়ার মানুষের সন্তানদের লেখাপড়ার এক অভিজাত স্কুল। সমঅধিকারের প্রশ্নে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য নির্ধারিত স্কুল ছেড়ে হার্ডিং হাইস্কুলে ভর্তি হন ডরোথি। ১৯৫৭ সালের এই ঘটনা মেনে নিতে পারেনি সাদা বর্ণবাদীদের সংগঠন হোয়াইট সিটিজেন কাউন্সিল। সংগঠনটি ডরোথির মতো এক কৃষ্ণাঙ্গকে স্কুলে ভর্তির তীব্র প্রতিবাদ জানায়। কাউন্সিল নেতা জন জেড ওয়ার্লিকথের স্ত্রী ডরোথিকে প্রতিহত করার জন্য স্কুলের সাদা চামড়ার ছাত্রছাত্রীদের আহ্বান জানান। যার ফল ডরোথির জন্য ছিল বেদনাবিধুর।

স্কুলে তিনি টিকতে পেরেছিলেন মাত্র মাত্র চারদিন। ১৫ বছর বয়সি ডরোথি যখন প্রথম স্কুলে গিয়েছিলেন- সেদিন শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীরা তাকে পাথর ছুড়ে মারে, গায়ে নিক্ষেপ করে থু তু। এ ছাড়া পিঠে ঘুষিও মারা হয়। ডরোথির জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলে তারা, তার ব্যক্তিগত লকারও ভেঙে ফেলা হয়। এমনকি ডরোথির ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়। ডরোথি যেখানে যেত সেখানে তার পিছু নিত শ্বেতাঙ্গ ছাত্রছাত্রীর দল। আজেবাজে কথায় তাকে হেয় করে মানসিকভাবেও নির্যাতন করত। তার পরিবারকেও দেওয়া হয় হুমকি।

১৯৫৭ সালে স্কুলে যাওয়ার পথে ১৫ বছর বয়সী ডরোথি কাউন্টস

ডরোথিও চুপচাপ সব সয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থী তথা সহপাঠীদের এহেন অত্যাচারে মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তার বাবা-মা। সে সময় ডরোথির সঙ্গে আরও তিন কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীও ছিল। তারাও স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। তাদের স্কুল ত্যাগের ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনার উদ্যোগ গোড়াতেই হোঁচট খায়।

সেই সময় আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের লিটল রক হাইস্কুলেও নয়জন কৃষ্ণাঙ্গ ভর্তি হন। তবে সেটা ছিল আদালতের নির্দেশে। তাদের নিরাপত্তায় এক বছর ধরে কয়েক হাজার আমেরিকান সৈন্য নিয়োজিত ছিল। কিন্তু ডরোথির সঙ্গে ঘটেছিল একেবারে উল্টো ঘটনা।

এত হয়রানির পরও লেখাপড়া চালিয়ে যান ডরোথি। হার্ডিং হাইস্কুল থেকে বিদায় নিয়ে ভর্তি হন ফিলাডেলফিয়ার একটি স্কুলে। স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়ে ১৯৬১ সালে আবারও ফিরে আসেন নর্থ ক্যারোলিনায়। এখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন ডরোথি। ১৯৬৫ সালে সাফল্যের সঙ্গে পাসও করেন তিনি।

ডরোথির সঙ্গে ঘটা সেই ঘটনার কয়েক দশক পর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল শোধরানোর উদ্যোগ নেয়। ২০০৮ সালে হার্ডিং হাইস্কুল তাকে অনরারি ডিপ্লোমা প্রদান করে। এবং স্কুলে ডরোথি কাউন্টসের সম্মানে লাইব্রেরির নামকরণ করা হয়।

অনন্য সাহসের প্রতীক হয়ে ডরোথি কাউন্টস ইতিহাসের অংশ হয়ে সাহস জোগাবেন আগামী দিনের মানুষদের মনে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা