× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিলুপ্তপ্রায় এক পেশা

জাকির আজাদ

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩ ১২:৫১ পিএম

বিলুপ্তপ্রায় এক পেশা

কুমিল্লা সদর দক্ষিণের যে রাস্তাটি বেলতলি বাজারের দিকে গেছে, ওই রাস্তা ধরে হাঁটছিলেন দুজন। কাঁধে বাঁশের ঝাঁপি, হাতে লম্বা হাতলের কোদাল। অন্য হাতে একটি তারের চাকতির মধ্যে নানা রকম মেয়েদের গয়না গাঁথা। তবে সেগুলো প্লাস্টিকের তৈরি। কিছুটা অনুমান করতে পারলেও কৌতূহলের বশে তাদের অনুসরণ করলাম। বাজারে প্রবেশের আগেই চায়ের দোকানের কাছে লোক দুটি থামলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতির জন্য বললাম, আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি?

সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির উত্তর, ক্যান পারতানা বাবা, মেলা পারবা। তাদের কাজ ও পেশার সম্পর্কে জানার আগ্রহ জানালাম।

পাশ থেকে আরেকজনের উত্তরÑকী আর করুম এই হোনা-রুফা পুষ্কুনিতন তুইলা দেই। পাইয়া দিলে মাইনসে খুশি হই বকশিশ দেয়।

কেমন পারিশ্রমিক? 

‘হেছা কথা হইল এই কাম আমাদের বাপঠাহুরের কাম। আমরা কই ঝাঁইট্রা। আদত নাম কি নাম সেটা কই পারতা না। এক কামের লাগি আগে যে জিনিসটা পাইয়া দিতাম হের দামের তেভাগের একভাগ। অহনকালা আর হেই কথা মানে না। কাম বুইজ্জা টেহা- এই বুঝেন গিয়া ৪০০ টেহা থাইক্যা ২০০০ টেহা তক।’

এরকম আরও নানান বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়। তাদের নাম-ঠিকানাও জেনে নিলাম। তাদের দুজনের নাম জিতেন দাস ও সুবল দাস। দুজনই কুমিল্লা সদরের সীমান্ত লাগোয়া গোলাবাড়ি গ্রামের অধিবাসী। এখানে শত বছর ধরে বসবাস করে আসছে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ। জেলে সম্প্রদায় হলেও তাদের পিতা-পিতামহ ও প্রপিতারা এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বিলুপ্তপ্রায় পেশা কুমিল্লা অঞ্চলে ‘ঝাঁওয়া’ নামে পরিচিত। 

একসময় এরা গ্রাম-গঞ্জের পথ ধরে ছোট ছোট দল বেঁধে কাঁধে ত্রিকোণাকৃতি একটি বাঁশের ঝাঁপি এবং লম্বা হাতলওয়ালা একটি কোদাল নিয়ে কাজের সন্ধানের ঘুরত। জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ হলেও মাছ ধরা এদের পেশা ছিল না। সোনা, রুপা বা অন্যান্য গয়নাগাটি খুঁজে বের করাই ছিল এদের জীবিকার উৎস। 

জেলা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে তাদের সবচেয়ে নিম্ন গোত্র বলে অভিহিত করা হতো। গ্রামে বউ-ঝিরা পুকুরে স্নানের সময় মূল্যবান সোনার হার, কানের দুল, মাকড়ি, হাতের বালা, নাকফুল, নাকছাবি ইত্যাদি জলে হারিয়ে ফেলত। পুকুরে নেমে ঝাঁওয়ারা ডুবসাঁতারের মাধ্যমে পুকুরের তলানির মাটিকে চেঁছে ত্রিকোণাকৃতি ঝাঁপি তুলে আনত পুকুরপাড়ে, তারপর ঘেঁটে দেখত হারিয়ে যাওয়া জিনিসটি পাওয়া যায় কি না। 

খুঁজে পেলে বিনিময়ে ওই জিনিসটির মূল্যের তিন ভাগের এক ভাগ দেওয়া হতো। আবার দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হতো, তবে সেটাও শর্তসাপেক্ষে। ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশাটি ভাগ্যের ওপর নির্ভর ছিল। যদি না পাওয়া যেত! শর্ত অনুযায়ী শূন্য হাতে ফিরতে হতো। বৃথা যেত সব পরিশ্রম। এর পরও জিতেন দাস ও সুবল দাসরা কোনোরকমভাবে যুক্ত ছিলেন এ পেশার সঙ্গে।

সময়ের বিবর্তনে গ্রামের পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। আগের মতো মানুষ আর পুকুরে গোসল করে না। তাই গয়নাও হারায় না। কালের স্রোতে বহু পেশা আজ বিলুপ্তির পথে কোনোটা বা বিলুপ্তিই হয়ে গেছে। গয়না খুঁজে দেওয়ার সন্ধানে বেড়ানো এই দুই যুবক জানালেন, তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আর এই পেশায় রাখবেন না। জীবিকার জন্য অন্য কোনো পেশাতে যাবেন।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা