দীপান্ত রায়হান
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩ ১২:৩৯ পিএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম
ঢাকার বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পঞ্চম তলার গ্যালারির দেয়াল যেন কথা বলছে মৃৎশিল্পের ভাষায়। কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী বিজয়নগরের দক্ষ পাল শিল্পীদের নির্মাণশৈলীই কেবল নয়; তাদের জীবনযাত্রা, মৃৎশিল্প কারিগরদের নেপথ্য গল্পও মূর্ত হয়ে উঠেছে দেয়ালের প্রতিটি ফ্রেমে। মৃৎপণ্যের কারুকার্যময় উপস্থাপন উঠে এসেছে ‘আলোর ইশকুল’ আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে।
২ জুন থেকে শুরু হয়েছে এ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। মোট ৫৪ জন আলোচিত্রীর বাছাই করা ৫৪টি আলোকচিত্র দিয়ে সেজেছে চিত্রকলার গ্যালারি। ‘বিজয়পুরের মৃৎশিল্প’ শীর্ষক এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারীরা সবাই বেসিক ফটোগ্রাফি কোর্সের প্রশিক্ষণার্থী।
প্রদর্শনী দেখতে আসা সৈয়দ নিশাত নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘মৃৎশিল্প সম্পর্কে আমার খুব ভালো জানাশোনা ছিল না। এ প্রদর্শনীতে এসেছি এক আলোকচিত্রী বন্ধুর নিমন্ত্রণে। এখানে এসে মৃৎশিল্প সম্পর্কে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি।’
আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী জে. মুমু জানান, ‘মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। নবীন আলোকচিত্রীদের হাতে মৃৎশিল্পের ছবি তুলে তা প্রদর্শনীর উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। এ ধরনের আয়োজন আমাদের হারানো ঐতিহ্য সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে আগ্রহী করে তুলবে।’
কোর্স সমন্বয়ক মেসবাহ উদ্দিন সুমন জানান, শৈল্পিক মনোভাব, জ্ঞান, দক্ষতা এবং চর্চার মাধ্যমে ফটোগ্রাফি শিল্পকে আয়ত্ত করে নিতে হয়। ফটোগ্রাফির সঙ্গে ফটোগ্রাফারের তীক্ষ্ন চিন্তা এবং অবিরাম চর্চার সংমিশ্রণ থাকতে হয়। ফটোগ্রাফি হলো একজন আলোকচিত্রীর
কঠোর পরিশ্রমের ফসল। অংশগ্রহণকারীরা ফটোগ্রাফির মৌলিক দক্ষতা এবং এ-সম্পর্কিত কলাকৌশল সম্পর্কে জেনেছেন। তারা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আলোকচিত্র বিষয়ক চক্রের সদস্য হতে এবং সারা বছর বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পারবেন।
প্রদশর্নীতে অংশ নেওয়া আলোকচিত্রী দিবেন্দু সিংহ ব্যাপনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, চার মাসের এই বেসিক ফটোগ্রাফি কোর্সের ফাইনাল আউটিংয়ের আগে তারা রমনা পার্ক, কারওয়ান বাজার ও মানিকগঞ্জের পারিল গ্রামে গিয়ে ছবি তোলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বিজয়পুরে মৃৎশিল্প ও মৃৎশিল্পীদের ছবি দারুণ অভিজ্ঞতা ও আনন্দ নিয়ে তুলতে পেরেছেন। প্রদর্শনী
সম্পর্কে জানান, ‘সাধারণ দর্শকের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত আলোকচিত্রীরাও প্রদর্শনী দেখতে এসেছেন। সবাই উৎফুল্ল হয়ে
দেখছেন, ছবির প্রশংসা করছেন। বিষয়টি আমাদের ভালো লাগছে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের কথা টানলেই উঠে আসে কুমিল্লার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের কথা। গুণগত মান ও বিষয়বৈচিত্র্যে অনন্য বিজয়পুরের মৃৎশিল্প। কুমিল্লা সদর উপজেলার বিজয়পুর ঘিরে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এ মৃৎশিল্পনগরী। বিজয়পুর ছাড়াও দুর্গাপুর, বারপাড়া, টেগুরিয়াপাড়া, নোয়াপাড়াসহ আশপাশের আরও কিছু গ্রামের ৪ শতাধিক পরিবার এ পেশায় জড়িত।
কুমিল্লার মিহিদানার মতো সাদা কাদামাটির ফলে এখানকার মৃৎশিল্প ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। এ সাদা কাদামাটি আর স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের নৈপুণ্যে তৈরি হচ্ছে পাতিল, প্রদীপ, হাঁড়ি, বাসন, মটকা, বদনা, জলকান্দা, শোপিস, শিশুদের খেলনা, ছাইদানি, গ্লাস, শানকি, ঘড়া, কল্কি, গামলা, জলাবিড়া, জটধুসি, চুনপাত্র, সরা, দুধের হাঁড়ি, ফুলদানি, মালসা, থালা, পানের বাটা, সন্ন্যাসীর গাড়, খেলনা, কলস, মুবঘট, লক্ষ্মীঘট, আয়োঘট, পূজার ঘট, দোয়াত বৈয়াম, দুধ সানার পত্র, লক্ষ্মীসরা, কাজলবাটি নাদা, তবলার বায়া, মৃদঙ্গ নাল, পাখোয়াজের মাটির খোল, দইছোবাসহ অসংখ্য রকমের দৃষ্টিনন্দন জিনিসপত্র। এ প্রদর্শনী চলবে ১৬ জুন পর্যন্ত। প্রদর্শনীটি প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত।