আইন-আদালত
দিলরুবা শরমিন
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩ ১৩:৩৪ পিএম
পাঠকদের আইনগত সমস্যার সমাধানে এই বিভাগ। নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী দিলরুবা শরমিন
প্রশ্ন : ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে স্বামীর সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়। আমাদের এক মেয়ে। মেয়ের বয়স এখন ১৪, ক্লাস নাইনে পড়ে। তার বাবা ’১৪ সাল থেকে মেয়ের কোনো ভরণপোষণ দেয়নি। চাইলে বলেছিল তার এখন সাধ্য নেই, তবে পরে দেবে। ২০১৫ সালে সে বিয়ে করে এবং সেই ঘরে তার দুই সন্তান রয়েছে। আমি মা হিসেবে চাকরি করে মেয়ের সব দায়িত্ব পালন করে আসছি। মেয়ের পড়ালেখা-চিকিৎসাসহ সব খরচ দিচ্ছি। গত ২০২১ সালে আমি আবার বিয়ে করি। নতুন সংসারে আমার মেয়েও বসবাস করছে। মেয়ের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সে মাসে চার হাজার টাকা করে পাঠানো শুরু করে। তখন মেয়ের স্কুলের বেতনই ছিল চার হাজারের কিছু বেশি। তাই তাকে অন্তত মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালানোর অনুরোধ করা হয়; কিন্তু সে অপারগ বলে জানায়।
এখন আমার মেয়ের স্কুল, কোচিং ও প্রাইভেটের খরচ প্রায় ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া তার বয়সন্ধিকালীন জটিলতায় ডাক্তার ও ওষুধের খরচসহ তার কাপড়-খাওয়ার পেছনেও বেশ ভালোই খরচ হয়। যার কিছু আমি আমার বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে ব্যয় করছি। এ ছাড়া আমার বর্তমান স্বামীর সংসারে সে আমাদের কন্যা হিসেবেই বড় হচ্ছে। অর্থাৎ মেয়েটির পড়াশোনার খরচও তার জন্মদাতা পিতা বহন করছে না। তবে এমন নয় যে সে দরিদ্র। তার বাবা মারা গেছেন এবং সেই তাদের একমাত্র ছেলে। তার একমাত্র বোন আমেরিকায় স্থায়ী হয়েছে। জমিজমা ও দুটি বাড়ি রয়েছে তাদের। তার বর্তমান সংসারের সন্তানদের জন্য সাধ্য হলেও আমার মেয়েটির জন্য কোনো সাধ্য তার হচ্ছে না। এর কি কোনো আইনগত সমাধান আছে?
২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যে অর্থ আমি ব্যয় করেছি মেয়ের ভরণপোষণে, এটা তো আসলে তার বাবার দায়িত্ব। এক পয়সা সঞ্চয় করিনি, বরং নানা সময় ধার করতে হয়েছে, বাবা-বোনের সাহায্য নিয়ে চলতে হয়েছে। আমি এই পাওনা কীভাবে আদায় করতে পারি, আর কীভাবে মেয়ের জন্য সম্মানজনক ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে পারি? দেশে কি এমন আইন আছে?
রওশন আরা মুক্তা, ঢাকা
উত্তর : সন্তান যার কাছেই থাকুক পিতা তার খোরপোষ দিতে বাধ্য। আপনি বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়া, চিকিৎসা, বসবাসসহ দৈনন্দিন খরচের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করুন। তিনি অবশ্যই দিতে বাধ্য। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না পারলে তার জেল অনিবার্য। এই মামলা দায়ের করতে আপনার মেয়ের বাবার সঙ্গে আপনার ডিভোর্সের কাগজ, আপনার এনআইডি, বাচ্চার বার্থ সাটিফিকেট, স্কুলের ভর্তি বা পেমেন্টের কাগজপত্র, বাচ্চার পিছনে আপনি যে খরচ করেছেন- সেসব যদি থাকে সবকিছু একেবারে গুছিয়ে ফাইল করুন। আপনি অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন। কন্যাসন্তান মায়ের জিম্মাতেই থাকবে, আইনত এবং ধর্মীয়ভাবেই।