হোসাইন মোহাম্মদ সাগর
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩ ১২:৫৫ পিএম
আপডেট : ৩১ মে ২০২৩ ১৩:১০ পিএম
টমেটো, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচ ও স্ট্রবেরির গাছগুলো বেশ পরিপক্ব। কয়েকদিন পরই ধরবে ফল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, এ গাছগুলোর মূলে মাটির চিহ্ন পর্যন্ত নেই। শুধু নারকেলের ছোবড়া আর পানিতে জন্মেছে গাছগুলো। মাটি ছাড়া এ চাষ পদ্ধতির নাম ‘হাইড্রোপনিক’। এ চাষাবাদে ইতোমধ্যে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। আধুনিক এ চাষ পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ভবিষ্যতের দিশারি।
এ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানি এবং নারকেলের ছোবড়ার মাধ্যমে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে ফসল ফলানো হয়। গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা যায়, জালঘেরা ও গ্রিনহাউসের মতো জায়গায় দুটি লোহার কাঠামোর টেবিলে মাটি ছাড়া চাষাবাদ চলছে। এক সারিতে পানির লম্বা পাত্রের ওপর কর্কশিট দিয়ে ভাসমান অবস্থায় বিভিন্ন গাছের চারা ও বড় গাছ রাখা হয়েছে। স্বচ্ছ পানির মধ্যে গাছগুলোর মূল দেখা যাচ্ছে। পাম্পের মাধ্যমে দিনে দুবার মাটির বিভিন্ন উপাদানমিশ্রিত পানি দেওয়া হয়। আরেকটি সারিতে মাটির পরিবর্তে নারকেলের ছোবড়ার মধ্যে একই ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। নারকেলের ছোবড়ার সারিতেও একইভাবে পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মাটির বিভিন্ন উপাদান, খনিজ, জৈব ইত্যাদি পানিতে মিশিয়ে পাত্রে রাখা হয়। এরপর সেখানে গাছের চারা রোপণ করা হয়। চারাগুলো কর্কশিট দিয়ে আটকানো থাকে, যাতে হেলে না পড়ে। মোটরের মাধ্যমে পানি রিসাইকেল করা হয়। উপাদানগুলোও ঘুরতে থাকে। আর নারকেলের ছোবড়ার মধ্যে গুঁজে দেওয়া চারায়ও মাটির উপাদানমিশ্রিত পানি দেওয়া হয়। ঘরের বারান্দা, ড্রয়িংরুমের পানির বালতিতেও এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। লেটুসপাতা ২৬ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। এ ছাড়া টমেটো, স্ট্রবেরি ও ক্যাপসিকাম দুই-আড়াই মাসের মধ্যে ফল দেয়। একই পদ্ধতিতে অন্যান্য ফুল ও সবজি চাষের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চলছে।’
মাটিবিহীন এ চাষ মডেলে মাটির পরিবর্তে পানিতে অথবা নারকেলের আঁশের গুঁড়ায় ১০/১০ ফুট সাইজের পলিহাউসে অল্প খরচে নিত্যব্যবহৃত বিভিন্ন পরিত্যক্ত দ্রব্য যেমন তেলের বোতল, পানির বোতল, অন্যান্য কনটেইনারসহ প্লাস্টিকের টবে অনায়াসে বিভিন্ন পাতা, ফল ও মূল জাতীয় সবজি ও কিছু কিছু ফলের চাষাবাদ করা যায়। এ পদ্ধতির সুবিধা হলো, ১০০ বর্গফুট জায়গায় বছরজুড়ে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন সম্ভব; যার জন্য জমির প্রয়োজন নেই। নারকেলের আঁশের গুঁড়া ও পানিতে জলীয় খাদ্য উপাদান দিয়েও ফসল উৎপাদন করা যায়। পোকার আক্রমণে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। এ ছাড়া মাঠের চাষাবাদের চেয়ে দ্রুত ও বেশি ফসল পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চারা লাগানোর ট্রের আকার বিভিন্ন মাপের হতে পারে। সাধারণত ৩/১ মিটার মাপের ট্রে হলে রক্ষণাবেক্ষণ ভালোভাবে করা যায়। আকার অনুযায়ী তার ভেতর পরিমাণমতো পানি নিতে হবে। পানির গভীরতা ৬-৮ সেন্টিমিটার হতে হবে। প্রতিটি গাছ থেকে গাছ এবং সারি থেকে সারি ৩০ সেন্টিমিটার দূরে রাখতে হবে এবং কর্কশিটের ওপর এ দূরত্ব অনুযায়ী ছোট্ট গর্ত করতে হবে। তারপর প্রতিটি গর্তে একটি করে সুস্থ-সবল চারা রোপণ করতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে যেসব ফসল চাষাবাদ করা যায় তার মধ্যে রয়েছে : টমেটো, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, শসা, করলা, ধনে, স্ট্রবেরি, লেটুস, কাঁচামরিচ, লাউ, লালশাক, মুলা, পুদিনা, মিষ্টি আলু, আলু, পেঁয়াজ। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশের জনসংখ্যা, আবাসনের জন্য ঘরবাড়ি, যোগাযোগের জন্য রাস্তা এবং কলকারখানা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ। হাইড্রোপনিক চাষ পদ্ধতি সাধারণের মধ্যে কার্যকরভাবে জনপ্রিয় হলে চাষাবাদের সমস্যা দূর হবে বলে করেন কৃষিবিদরা। এ ছাড়া নগর-কৃষির ধারণায়ও আসবে আমূল পরিবর্তন।