রূপসা
সুবর্ণা মেহ্জাবীন স্বর্ণা
প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৩ ১৩:২৮ পিএম
সবুজ ও রসালো এই ফল শরীর ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি ত্বক ও চুল রাখে সতেজ। রূপ-রুটিনে নিয়মিত শসা ব্যবহার করলে ত্বক ও চুলের নানা সমস্যা থেকে মিলবে মুক্তি
গ্রীষ্মপ্রধান দেশে রোদের প্রখরতা সারা বছরই বেশি। তবে বছরের এই সময়, অর্থাৎ বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠজুড়ে যে পরিমাণ গরম পড়ে, তাতে দিনেরবেলা বাড়ি থেকে বের হওয়া দায়। কিন্তু বাইরে না বের হলেও তো চলে না। অফিস হোক বা বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসা, গায়ে রোদ লাগা অবশ্যম্ভাবী। এতে শুধু শরীরেরই কষ্ট নয়, ত্বক আর চুলেরও সর্বনাশ। অবশ্য সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই সমাধানও রয়েছে। হাতের নাগালে থাকা জিনিস ব্যবহার করেই ত্বক ও চুলকে রাখতে পারেন প্রাণবন্ত। এমনই একটি ফল শসা। এর প্রায় ৯০ শতাংশই পানি। ফলে প্রতিদিন শসা খেতে পারলে শরীর থাকবে ঝরঝরে। একইভাবে দৈনন্দিন রূপচর্চায় একে শামিল করলে ত্বক ও চুল হবে তরতাজা। টোনার থেকে স্ক্রাব, মাস্ক থেকে লোশন- শসা দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারবেন সবকিছু। কীভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
ত্বকের যত্ন নিন
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর শসার পিএইচ ত্বকের পিএইচের সমান হওয়ায় ত্বক নরম ও আর্দ্র রাখতেও শসার জুড়ি মেলা ভার। তা ছাড়া শসার ত্বক উজ্জ্বল করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তাই চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার সমাধান হিসেবে শসা সুপরিচিত। যাদের ডার্ক সার্কলের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত শসা ব্যবহার করলে হাতেনাতে ফল পেতে বাধ্য। চোখের ওপর ঠান্ডা শসা গোল করে কেটে রেখে দিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর তুলে নিন। মুখ ধোয়ার প্রয়োজন নেই। কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন ডার্ক সার্কল উধাও! এখানেই শেষ নয় কিন্তু। ডার্ক সার্কল ছাড়াও ত্বকের অন্যান্য সমস্যা সমাধান করতেও কাজে লাগাতে পারেন শসা।
ফেশিয়াল টোনার : অর্ধেকটা শসা কুচি করে সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ উইচ হেজেল (এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট, ভালো প্রসাধনীর দোকানে মিলবে) বা গোলাপজল মিশিয়ে পিউরি করে নিন। এতে ২ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে স্প্রে বোতলে রেখে দিন। প্রতিদিন তুলায় করে এই মিশ্রণ নিয়ে মুখে লাগান। দেখবেন ত্বক অনেক বেশি ঠান্ডা, ফ্রেশ ও আর্দ্র থাকবে।
ফেয়ার মাস্ক : ত্বক উজ্জ্বল করতেও ব্যবহার করতে পারেন শসা। খানিকটা শসার রসের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা টাটকা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ত্বকে লাগালে নিমেষে আসবে উজ্জ্বলতা।
অ্যাকনে ও ইনগ্রোন হেয়ার ট্রিটমেন্ট : শসার রস, অ্যাপল সিডার ভিনিগার, অ্যালোভেরা জেল এবং খানিকটা টমেটোর রস মিশিয়ে নিলেই তৈরি ম্যাজিক পেস্ট। এটি ত্বকের রন্ধ্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে। ফলে অ্যাকনে থেকে নিষ্কৃতি মিলবে। আবার ত্বকে কোনো ইনগ্রোন হেয়ার থাকলেও ব্যবহার করতে পারেন এই মিশ্রণ। তুলোয় করে চেপে চেপে লাগান। কয়েক মিনিট পরে ধুয়ে নিন।
অ্যান্টি-পিম্পল মাস্ক : সমপরিমাণে হলুদ গুঁড়া ও শসার ক্বাথ মিশিয়ে নিন। এতে একটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিলেই তৈরি হবে অ্যান্টি-পিম্পল মাস্ক। ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিন। এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে মুখে হলুদের দাগ থেকে যেতে পারে। তাই এই মাস্ক ছুটির দিনে ব্যবহার করাই ভালো।
অ্যান্টি-ট্যান মাস্ক : ২ টেবিল চামচ ওটস গুঁড়া, ২ চা-চামচ টকদই, ২ চা-চামচ মুলতানি মাটি এবং ২ চা-চামচ শসার রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ বানিয়ে ফ্রিজেও রেখে দিতে পারেন। ৩-৪ দিন অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন। রোদ থেকে ফিরে পুরো মুখে এই মাস্ক লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ট্যান দূর হবে এবং ত্বক কোমল ও মসৃণ হবে।
অ্যান্টি-রিঙ্কল মাস্ক : ২ টেবিল চামচ শসার রস, সামান্য পরিমাণে ডিমের সাদা অংশ, ১ চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে উঠবে টানটান, বলিরেখাও কমবে।
ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক : ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে নানাভাবে শসা ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন, আর্দ্রতা সব ধরনের ত্বকের জন্যই দরকার। তবে ত্বকের ধরন বুঝে মাস্ক বেছে নিতে হবে। কারণ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য যে ধরনের মাস্ক কার্যকর হবে, শুষ্ক ত্বকের জন্য সেই মাস্ক ততটা কার্যকর হবে না। তাই বিভিন্ন ধরনের ত্বকের কথা মাথায় রেখে রইল তিন ধরনের মাস্ক। মাস্ক-১ (স্বাভাবিক ত্বকের জন্য) : ১ চা-চামচ ওটসের মধ্যে খানিকটা শসার ক্বাথ মিশিয়ে রেখে দিন। আধঘণ্টা পর এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। মাস্ক-২ (তৈলাক্ত ত্বকের জন্য) : আধকাপ শসা কুচির সঙ্গে অর্ধেক অ্যাভোকাডো, একটা ডিমের সাদা অংশ এবং ২ চা-চামচ গুঁড়োদুধ মিশিয়ে ফেটিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। মাস্ক-৩ (শুষ্ক ত্বকের জন্য) : অর্ধেক শসার সঙ্গে ১ টেবিল চামচ টকদই ও ১ চা-চামচ হেজেলনাট বাটা মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
সুদিং স্ক্রাব : এককাপ সাদা চিনি, এককাপ শসা কুচি, কয়েকটা তুলসীপাতা এবং এককাপ নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন এই মিশ্রণ স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। শুধু মুখেই নয়, গোটা শরীরেই এই স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক মসৃণ হয়ে উঠবে।
কুলিং লোশন : যতই ঘাম হোক, গরমেও কিন্তু বডি লোশন ব্যবহার করা জরুরি। তেলতেলে লোশন ব্যবহার করতে না চাইলে বাড়িতেই বানিয়ে নিন গরমের লাইট বডি লোশন। একটা শসা, ১/৪ কাপ নারকেলের দুধ এবং ১/৪ কাপ অ্যালোভেরা জেল একসঙ্গে বেটে নিন। এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন।
ফেশিয়াল মিস্ট : গরমকালে ত্বককে তরতাজা রাখতে মিস্ট খুব ভালো কাজ করে। বিশেষত যাদের প্রতিদিন এসি রুমে থাকতে হয়, তাদের সব সময় মিস্ট সঙ্গে রাখা উচিত। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য ভালো সমাধান। একটা শসা বেটে তাতে ১ চা-চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ টেবিল চামচ গোলাপজল এবং একটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মসলিন কাপড় ছেকে নিন। এরপর তরল স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। ত্বক শুষ্ক লাগলে বা দিনে ২-৩ ঘণ্টা অন্তর এই মিশ্রণ স্প্রে করে নিন।